ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

চত্বর থেকে চত্বরে ॥ লেখাপড়া আড্ডা গান

আশিক ইসলাম

প্রকাশিত: ০১:১৯, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

চত্বর থেকে চত্বরে ॥ লেখাপড়া আড্ডা গান

রাস্তার দুই ধার আর বিশাল ভবনের ফাঁকে ফাঁকে মনোহর সব দৃশ্য নজর কাড়ে

রাস্তার দুই ধার আর বিশাল ভবনের ফাঁকে ফাঁকে মনোহর সব দৃশ্য নজর কাড়ে। কোথাও হলুদ, কোথাও লাল কিংবা গোলাপি আবার কোথাও বা সবুজ ঘাস আর ফুলের বাহারি রং মিলেমিশে একাকার। নয়নাভিরাম সব ফুলের বাগান, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশ, সাজানো গুছানো অঙ্গন। আর এসব দৃশ্য ছাপিয়ে অনেকেরই চোখ কপালে ওঠার দশা। কারণ পুরো জায়গার আড্ডা স্থলের বাহারি সব নাম। ইবলিশ চত্বর! ভকেট চত্বর! রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এমন সব অদ্ভুত নামের চত্বর।
চত্বরগুলোতে দিনের পর দিন শিক্ষার্থীদের আড্ডায় ক্যাম্পাসের অংশ হয়ে গেছে। এসব চত্বরগুলো মূলত ক্যাম্পাসের প্রাণ। ক্যাম্পাস বন্ধ থাকলেও আড্ডার বিরাম নেই এসব চত্বরে। চত্বর ফাঁকা মানেই ক্যাম্পাস প্রাণহীন মরুভূমি। শিক্ষার্থীদের আড্ডায় এসব চত্বরে প্রাণ আসে। নিত্যনতুন অভিজ্ঞতা, রাজনীতি-অর্থনীতি, প্রেম-ভালোবাসা, বিরহ, ক্লাস-পরীক্ষা এমন কিছু বাদ যায় না চত্বরের আড্ডায়। চলুন এবার ক্যাম্পাস ঘুরে দেখি আর কি চত্বর রয়েছে এখানে।
ইবলিশ চত্বর
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে পুরনো ও জনপ্রিয় ইবলিশ চত্বর। ক্যাম্পাসের কাজলা গেট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে সোজা উত্তরে আম বাগান পেরিয়ে বিশাল মাঠ। আর এই মাঠকেই বলা হয় ‘ইবলিশ চত্বর’। ১৯৮৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মামুনুর রশীদের লেখা, মলয় ভৌমিকের নির্দেশনা ও অনুশীলন নাট্যদলের প্রযোজনায় ‘ইবলিশ’ নাটক কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হয়। নাটকটি দর্শকপ্রিয় হওয়ায় ক্যাম্পাসে অভিনেতাদের ‘ইবলিশ’ সম্বোধন করা হতো। ওই সময়ে নাট্যদলের কর্মীদের আড্ডা স্থান ছিল এই ‘ইবলিশ চত্বর’। এই আড্ডার কারণেই সবার মুখে মুখে স্থানটি ‘ইবলিশ চত্বর’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
ফোকলোর চত্বর
এটা ইবলিশ চত্বরের একাংশের নাম। এটি বহুল পরিচিত একটি চত্বর। ইবলিশ চত্বর নামটি বিলুপ্ত করা জন্য ১৯৯৮ সালে কৃষ্ণচূড়া এবং রাধাচূড়া গাছের চারা রোপণের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে এই চত্বরের নাম রাখা হয় ফোকলোর চত্বর। পরে ২০০৩ সালে একটি সাইনবোর্ড ঝুলানো হয়। কিন্তু আজও ‘ইবলিশ চত্বর’ নামটি সবার মুখে মুখে রয়ে গেছে।
টুকিটাকি চত্বর
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণকেন্দ্র হিসেবেই পরিচিত টুকিটাকি চত্বর। চারপাশে অ্যাকাডেমিক ভবনগুলোর ঠিক মাঝে টুকিটাকি চত্বরের অবস্থান। রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের আনাগোনায় সব সসময়ই সরগরম থাকে চত্বরটি। কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের মূল ফটকের সামনেই এর অবস্থান। জানা যায়, এখানে অবস্থিত টুকিটাকি জেনারেল স্টোরের নাম অনুসারেই এই চত্বরের নামকরণ হয়েছে।
ভকেট চত্বর
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে পরিচিত ও আলোচিত ভকেট চত্বর। ক্যাম্পাসে ভকেট নামে পরিচিত কিছু শিক্ষার্থী থাকলেও তাদের সে চত্বর প্রায় বিলুপ্ত। মন্নুজান হল ও সিরাজী ভবনের মাঝের জায়গাটি বর্তমানে জরিনার মার্কেট নামে পরিচিত, এই জায়গাতেই ছিল আলোচিত ভকেট চত্বর। জানা যায়, ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী শাহীন এই চত্বরের প্রতিষ্ঠাতা। ২০০৫ সালে ৩১ ডিসেম্বর ভকেট কাউন্সিলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।
রোকেয়া চত্বর
ক্যাম্পাসের ছেলেমেয়েদের কাছে আগ্রহের জায়গা ‘রোকেয়া চত্বর’। ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের হৃদয়’ বলে পরিচিত এই চত্বর পশ্চিমপাড়ায় রোকেয়া হলো সংলগ্ন বটতলায়। হলের সামনের গোল চত্বরের নামানুসারেই লোকমুখে এটি রোকেয়া চত্বর হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। সন্ধ্যা বেলা এখানে ভিড় জমে উঠে বন্ধু-বান্ধব আর প্রেমিক জুটিদের আড্ডায়।
প্রেম চত্বর
মন্নুজান হলের সামনে চত্বরটির নাম ছিল প্রেম চত্বর। জানা যায়, এখানে প্রকা- আকৃতির আমগাছ ছিল এবং জুটিরা নিরাপদে বসে চুটিয়ে সকাল-বিকাল প্রেমের আলাপে ব্যস্ত থাকত। আর এ কারণেই এই চত্বরের নাম হয় প্রেম চত্বর। তবে এখন সিরাজী ভবনের পেছনের দিকের সংকুচিত স্থানটিকে প্রেম চত্বর নামে ডাকে শিক্ষার্থীরা। কারণ এখানে এখনো প্রেমিক জুটিদের মন দেওয়া-নেওয়া চলে নিরাপদেই ।
প্রেমবঞ্চিত চত্বর
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেমবঞ্চিত শিক্ষার্থীরা ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠা করে প্রেমবঞ্চিত চত্বর। এই চত্বরটি বিশ্ববিদ্যালয়ের টুকিটাকি চত্বরের পাশেই অবস্থিত। ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে হাজারো প্রেম বঞ্চিতরা এখানে আড্ডা জমায়। প্রতি বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রেমের সুষম বণ্টনের দাবিতে তারা বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে থাকে।  
মিডিয়া চত্বর
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ফটকের সামনের জায়গাটি মিডিয়া চত্বর নামে পরিচিত। এই চত্বরটি রাবি রিপোর্টার্স ইউনিটির অস্থায়ী কার্যালয় বলা হতো। ক্যাম্পাসে স্থায়ী জায়গা পাওয়ার আগে তারা এখানে বসে কাজ করতো। সারিসারি মেহগনি বাগানের ছায়ায় ঢাকা এই চত্বর।
বিসিএস চত্বর
কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের রিডিং রুমের দক্ষিণ পাশের ফুলের বাগানের স্থানটি বিসিএস চত্বর। এখানে শিক্ষার্থীরা বিসিএস সহ অন্যান্য চাকরির পরীক্ষার পড়াশোনা করে থাকে। যার কারণে এই জায়গাটি অনেকের কাছেই বিসিএস চত্বর নামে পরিচিত। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এই স্থানটিতে পড়–য়া শিক্ষার্থীদের পদচারণা থাকে।    
এছাড়াও ক্যাম্পাসে আরও রয়েছে লোক প্রশাসন চত্বর, জারজিস চত্বর, লিপু চত্বর, ক্যাম্পাস বাউলিয়ানা চত্বর, জোহা চত্বর, শহীদ মিনার চত্বর, বুদ্ধিজীবী চত্বর, পাঠক ফোরাম চত্বর, স্বজন চত্বর, টিএসসিসি চত্বর, পলাশ চত্বর, ইতিহাস চত্বর, বি.বি চত্বর, পাবনা চত্বর, নগর রাষ্ট্র, ইনফরমেশন অ্যান্ড নলেজ কর্নার, সংস্কৃতায়ন অঞ্চল, সিএসই নেটওয়ার্ক, অস্থিরপুর, এমজিএম শাহরিয়ার মেমোরিয়াল হাউস, পরিবহন মার্কেট, ফারসি চত্বরসহ আরও অনেক চত্বর।

×