ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ৩০ মার্চ ২০২৩, ১৬ চৈত্র ১৪২৯

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়া এবারও বিফলে!

আজাহারুল ইসলাম, ইবি 

প্রকাশিত: ১২:৫৬, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়া এবারও বিফলে!

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

১০ বার ডেকেও তিন শতাধিক আসন খালি
আসন খালি রেখেই ক্লাস শুরুর ঘোষণা
ভর্তির আগেই সেশন জটে শিক্ষার্থীরা

এবারও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের চোখে 'পাশ মার্ক' অর্জন করতে পারেনি গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়া। যেখানে ভোগান্তি কমার কথা সেখানে কয়েকগুণ ভোগান্তি বেড়েছে। শুধু তাই নয়, অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েও আসন পূর্ণ করতে পারছে না। 

ফলে আসন ফাঁকা রেখেই ক্লাস শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ও (ইবি) এর বাইরে নয়। ১০ বার ডাকার পরও এখনো তিন শতাধিক আসন খালি। খালি আসন পূর্ণ করতে 'স্পট অ্যাডমিশন' এর চিন্তা করছে কর্তৃপক্ষ। 

এদিকে ৮ ফেব্রুয়ারি প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরুর ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। গত বছরেও প্রায় ১০০টি আসন খালি রেখেই ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ করেছিল ইবি।

জানা গেছে, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক শ্রেণিতে দ্বিতীয়বারের মতো আয়োজিত গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা ও ফলাফল প্রকাশ গত বছরের জুলাই-আগস্টে সম্পন্ন হয়। ফল প্রকাশের পর কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আলাদাভাবে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। যদিও এ প্রক্রিয়া এবার কেন্দ্রীয়ভাবে করার কথা ছিল। 

বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর ইবিতে ২০২০ আসনের বিপরীতে ৪২ হাজার ৯৬৫ আবেদন জমা পড়ে। আবেদনের প্রেক্ষিতে গতবছরের ২ নভেম্বর থেকে মেধাতালিকা প্রকাশ শুরু হয়। 

সর্বশেষ এবছরের ২৩ জানুয়ারি দশম মেধাতালিকা প্রকাশ ও পহেলা ফেব্রুয়ারি যাবতীয় ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। এতে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু থেকে প্রায় সাত মাস কেটে গেছে। ফলে ভর্তির আগেই জটের কবলে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভিভাবক ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

এই দীর্ঘসূত্রিতার কারণ হিসেবে গুচ্ছ প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়াকে দায়ী করেছেন তারা। গুচ্ছের বাইরে স্বতন্ত্র পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে ধর্মতত্ত্ব অনুষদের ভর্তি কার্যক্রম শেষ হয়েছে আরো দুই মাস আগে। গুচ্ছের ভর্তি সম্পন্ন না হওয়ায় তারাও ক্লাস শুরু করতে পারেনি। অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয় ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার সময়সূচি প্রকাশ করেছে।

শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দাবি, গুচ্ছ ভর্তির কারণে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় স্বতন্ত্রতা ও জৌলুশ হারিয়েছে। ইবি যতটা এগিয়ে গিয়েছিল, দুইবার গুচ্ছে যাওয়ায় অনেকটা আবার পিছিয়ে গেছে। গুচ্ছ পদ্ধতির অসংগতির ফলেই এবার শিক্ষার্থী সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। 

বারবার মেধাতালিকা প্রকাশ ও গণবিজ্ঞপ্তির কারণে এখানে মেধার কোনো মূল্যায়ন হয়নি। যারা 'মোটামুটি' নম্বর পেয়েছে তারাই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছে। দুইবার ধাক্কা খেয়েও কর্তৃপক্ষের টনক না নড়লে বিশ্ববিদ্যালয়ের মান আরো তলানিতে যাবে।

ফলে মান অক্ষুণ্ণ রাখতে একক পদ্ধতিতে ফেরা এখন সময়ের দাবি। গত বছরও নানা ভোগান্তির প্রেক্ষিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন মহল নিজস্ব পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেওয়ার দাবি জানালেও কর্তৃপক্ষ সাড়া দেয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি প্রথম দিকে গুচ্ছের বিপক্ষে 'অনড়' অবস্থান নিলেও পরবর্তীতে ‘শর্তসাপেক্ষে’ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. আহসান-উল-আম্বিয়া বলেন, কর্তৃপক্ষের সমন্বয়হীনতার কারণে বেশি কালক্ষেপণ হচ্ছে। ভর্তি প্রক্রিয়ার ব্যাপারে পূর্বে পরিকল্পনা না করে শেষের দিকে এসে তড়িঘড়ি করে সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হয়। আবার বারবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করায় ভোগান্তি আরো বাড়ছে।

শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. তপন কুমার জোদ্দার বলেন,গেল বছর শিক্ষক সমিতি যেসব শর্ত দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ তা পূরণ করতে পারেনি। উল্টো ভোগান্তি আরো বেড়েছে। 

এবারও অধিকাংশ শিক্ষক গুচ্ছে অংশ না নেওয়ার পক্ষেই। আমি ব্যক্তিগতভাবেও গুচ্ছ প্রক্রিয়ার পক্ষে নই। আমরা শিগগিরই কার্যনির্বাহী কমিটির মিটিংয়ে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানাবো।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, আমাদের আর্থিক প্রয়োজনে সরকারের ওপর নির্ভর করতে হয়। তাই মহামান্য রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী বা শিক্ষামন্ত্রী একটা ঘোষণা দিলে কি আমরা চাইলেই এখান থেকে বের হতে পারবো? গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়ায় একটি আইনি জটিলতার কারণে কিছুদিন দেরি হয়েছে। যে সময়ক্ষেপণ হয়েছে তা আমরা পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করব।

এসআর