ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আজীবনের বন্ধন প্রাণে প্রাণে স্পন্দন

জলি রহমান

প্রকাশিত: ০০:৪৯, ২৫ নভেম্বর ২০২২

আজীবনের বন্ধন প্রাণে প্রাণে স্পন্দন

.

শর্মিলী এখন চাকরিজীবী। কর্মময় জীবনের পথচলা প্রায় এক যুগের। তবুও কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতিগুলো এখনো বেশ রঙিন। কাজের ফাঁকে ফাঁকে আজও ক্যাম্পাসে আড্ডার প্রাণবন্ত কথামালা শর্মিলীকে হাসায়। তবে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুক এক্ষেত্রে বিশাল ভূমিকা পালন করছে। দীর্ঘ ১২ বছরের ব্যবধানে হয়তো অনেকের চেহারা ভুলে যাওয়ার কথা। কিন্তু ফেসবুকে সবাইকে দেখার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের মুখগুলো যতটা পরিচিত ছিল, এখন তার থেকেও অনেক বেশি সুপরিচিত। যাদের সঙ্গে ভার্সিটিতে একই সঙ্গে পড়া সত্ত্বেও তেমন কথা হয়নি, তারাও এখন ভালো বন্ধু। সকলের সঙ্গে তৈরি হয়েছে অদৃশ্য এক বন্ধন। ক্যাম্পাসের বন্ধুদের নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে রয়েছে নানা গ্রুপ। কারও একটি মেসেজ একই সঙ্গে পৌঁছে যাচ্ছে শত শত ফ্রেন্ডের কাছে। যেন কারও কষ্টে মন কাঁদে, আবার সুখে অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করে। কেউ বিপদে পড়লে সবাই একসঙ্গে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। এমন বন্ধন আজীবন বয়ে বেড়াতে হয়তো সবারই ভালো লাগবে।
শর্মিলী পড়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভার্সিটিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পড়ার সময়সীমা পাঁচ বছর হলেও সেশনজটের কারণে নয় বছর লেগে যায়। অনেক বছর সেখানে যাতায়াতের কারণে এখনো গেটের সামনে গেলেই মনে হয় আপন ভুবনে ফিরে এসেছে। আর অফিস, সংসার সামলিয়ে প্রিয় বন্ধুদের মুখগুলো দেখার বাসনা সবসময়ই সুপ্ত থাকে। অধীর আগ্রহে থাকে ভার্সিটিতে রি-ইউনিয়ন বা পুনর্মিলনী কোন অনুষ্ঠানের জন্য।  শর্মিলীর প্রিয় অর্থনীতি বিভাগে রি-ইউনিয়নের তারিখ দেওয়া হয় ১২ নভেম্বর। আর শুরু হয়ে যায় দিন গণনা।  সেদিন কিভাবে যাবে ক্যাম্পাসে? পুরনো বন্ধুদের একসঙ্গে দেখার আনন্দ কেমন হবে? চলার পথে অনেকের সঙ্গেই ভালো সম্পর্ক হয়, তবে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বন্ধুগুলোর প্রতি অনুভূতিটা অন্যরকম। যাদের ঝালমুড়ি, চা অথবা বিরিয়ানি সবকিছুতেই জোর করে ভাগ বসানো যায়।
১২ নভেম্বর সকালবেলা। অফিস থেকে আগেই ছুটি নিয়েছে শর্মিলী। বাসার রান্না ভোরবেলা শেষ করার মধ্যে ভাবছিল, একটা সময় ক্যাম্পাসে যাওয়ার আগে কোনোভাবে নাস্তা করে ছুটে যাওয়া হতো যাত্রাবাড়ীর সরলার সামনে। সেখানে পাঁচ-ছয়জন একত্রিত হয়ে কখনো লেগুনায়, কখনো রিক্সায় চেপে চলে যেতাম ভার্সিটিতে। কোনো সময়ই রান্নাঘরে উঁকি দিয়েও দেখা হয়নি কি রান্না হবে বা হয়েছে। আজ দিব্যি একটি সংসারের সব রান্নাবান্না শেষ করে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে যাব। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে কাজের ধরন পাল্টালেও জীবনের অনুভূতিগুলো একই থাকে। শর্মিলীর মতো হাজারো তরুন-তরুনী সেদিন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে এসেছিল। সবাই এখন কর্মব্যস্ত। তবুও দেশের দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে এসেছে সকল বন্ধুরা একত্রিত হতে। গভীর অনুভূতি না থাকলে যা কখনোই সম্ভব নয়। ছেলেদের গায়ে ছিল কালো রঙের গেঞ্জি। আর সবার হাতে ছিলো পাটের ব্যাগ, যার ওপরে লেখা ছিল ‘আজীবনের বন্ধন, প্রাণে প্রাণে স্পন্দন’ পুনর্মিলন ২০২২। নানা বয়সী তরুণ-তরুণীর পদচারণায় মুখরিত ছিল ক্যাম্পাস।
উৎসবের আমেজ ছিল ভার্সিটিজুরে। আলোকসিজ্জত করা হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনগুলো। অর্থনীতি বিভাগের সামনেই করা হয়েছিল বড় একটি মঞ্চ। গণ্যমান্য ব্যক্তিরা সেখানে প্রাণবন্ত বক্তৃতা দিচ্ছিল। অন্যদিকে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল গ্রুপভিত্তিক বন্ধুরা। অনেকেই  এসেছেন সন্তান নিয়ে। আবার অনেকে এসেছেন জীবনসঙ্গী নিয়ে। যাদের বন্ধুত্ব ভালোবাসায় রূপ নিয়েছে তারা ওইদিন বন্ধু থেকে ভালোবাসার মানুষ হওয়ার বিভিন্ন আবেগঘন মুহূর্ত শেয়ার করেছিল। সবার একসঙ্গে খাওয়া, আড্ডা দেওয়া, পুরনো স্মৃতি রোমান্থন, শেষ বিকেলে বাইরে গিয়ে আবার সেই চায়ের আসর। সকলেই যেন স্মার্ট ফোনে ভালোলাগার ক্ষণটি ক্যামেরাবন্দি করতে ব্যস্ত। ব্যাংকার, ব্যবসায়ী, পুলিশ, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ বিভিন্ন পেশার মানুষ কিছুক্ষণের জন্য হলেও কর্মব্যস্ততা ভুলে ছাত্রজীবনের মধুর স্মৃতিতে ফিরে গিয়েছিল।
উল্লেখ্য, পুনর্মিলনী-২০২২ আড়ম্বর এই অনুষ্ঠানটি আয়োজন করেছে অর্থনীতি বিভাগ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন। ১৯৭৯ থেকে ২০২২ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা এবং অন্যান্য ডিপার্টমেন্ট মিলিয়ে মোট উপস্থিতি ছিল প্রায় ২০ হাজার। অতিথি হিসেবে ছিলেন অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হক (ভিসি), অ্যাডভোকেট নুরুল আমিন রুহুল এমপি। অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহমদ (ট্রেজারার), ড. গোলাম মোস্তফা (প্রক্টর), অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেন (ডিন), অধ্যাপক ড. মো. আজম খান (চেয়ারম্যান), বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলামসহ আরও সম্মানীয় ব্যক্তিরা।   

 

×