ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রতিষ্ঠার তেতাল্লিশ বছর 

ইবির অনেক স্বপ্নই অধরা

নিজস্ব সংবাদদাতা, ইবি

প্রকাশিত: ১৬:২৯, ২১ নভেম্বর ২০২২; আপডেট: ১৬:৩১, ২১ নভেম্বর ২০২২

ইবির অনেক স্বপ্নই অধরা

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

৪৪ বছরে পা রেখেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। ৪৩ বছর পেরিয়ে গেলেও যুগোপযোগী অনেক সুবিধা থেকেই বঞ্চিত হচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সমস্যাগুলো সমাধানে কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছেন সকলেই। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ১৮ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন। হল কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, মোট আটটি আবাসিক হলে ১৯ শতাংশ শিক্ষার্থী অবস্থান করেন। তবে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের নিয়ন্ত্রণে থাকায় রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়া ছাড়া হলে সিট মেলে না বলে অভিযোগ আছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা কাগজে-কলমে আবাসিকতা পেলেও সিটে উঠতে পারেন না। আবাসন সংকট কাটাতে এক হাজার সিট বিশিষ্ট ১০ তলা দুইটি আবাসিক হলের নির্মানকাজ চলমান রয়েছে। তবে সঠিক সময়ে হলগুলোর নির্মান কাজ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এদিকে প্রকট আবাসক সংকটের কারণে বাকি শিক্ষার্থীরা মেস-বাসা ভাড়া নিয়ে থাকনে। তাদের যাতায়াতের একমাত্র সহায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস থাকলেও তা অপ্রতুল। বাসে সিট পেতে শিক্ষার্থীদের রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীদের বহন করার জন্য মোট বাস আছে ৫৩টি। এর মধ্যে নিজস্ব বাস মাত্র ২১টি। যার ১৯টিই শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের ও দুইটি শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দকৃত। সর্বশেষ গত ১৮ সেপ্টেম্বর পরিবহন পুলে নতুন পাঁচটি পরিবহন সংযোজিত হয়েছে।

দেশ-বিদেশে খেলাধুলায় বিভিন্ন গৌরবোজ্জল সাফল্য থাকলেও শিক্ষা-গবেষণায় পিছিয়ে প্রতিষ্ঠানটি। বিশ্ববিদ্যালয়য়ে বর্তমানে ৪০৩ জন শিক্ষক রয়েছেন। অধিকাংশই পাঠদান-গবেষণায় মন না দিয়ে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ব্যস্ত সময় পার করেন। নতুন নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকরাও বাধ্য হয়ে জড়িয়ে যাচ্ছেন রাজনীতিতে। ফলে বিপাকে পড়েন শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও বিভাগের অভ্যন্তরীন রাজনীতিরও শিকার হয়ে থাকেন তারা। ক্লাস না নেওয়া, ‘রেজাল্ট টেম্পারিং’, শিক্ষকদের হাতের নম্বর কম দেওয়াসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। অপরাজনীতির বেড়াজালে বিভাগগুলোতে সৃষ্টি হয় তীব্র সেশনজট। ফলে পড়াশোনার খেই হারিয়ে হতাশায় ভোগেন শিক্ষার্থীরা।

এদিকে গবেষণার মান আরো বেহাল। বাজেট স্বল্পতায় কেন্দ্রীয় ল্যাবরেটরিতে যথেষ্ট ইক্যুপমেন্ট কেনা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ল্যাবের পরিচালক। সর্বশেষ অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ ছিল মাত্র ০.৮৯ শতাংশ। এদিকে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার নিয়েও রয়েছে ক্ষোভ। শিক্ষার্থীদের নিজস্ব বই নিয়ে পড়ার সীমিত সুযোগ, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পর্যাপ্ত আধুনিক বই না থাকা, রাত ৮টা বাজলেই লাইব্রেরি বন্ধ, ছুটির দিনে লাইব্রেরি বন্ধসহ নানা অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। দিন রাত ২৪ ঘণ্টাই লাইব্রেরি খোলা রাখার দাবি জানিয়েছেন তারা। 

এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৯৪ জন কর্মকর্তা, ১৩২ জন সহায়ক কর্মচারী এবং ১৫৮ জন সাধারণ কর্মচারী থাকলেও কাঙ্খিত সেবা পান না শিক্ষার্থীরা। নির্দিষ্ট দপ্তরে না থেকে অনেকেই আমবাগানসহ বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ান বলে অভিযোগ রয়েছে।

অভিযোগে জর্জরিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটও। প্রয়োজনীয় তথ্য ও নিয়মিত আপডেট না থাকা, শিক্ষকদের, বিভিন্ন বিভাগের ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের তথ্য না থাকাসহ ওয়েবসাইটের মান নিয়েও বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। ক্যাম্পাসে কচ্ছপ গতির ইন্টারনেট ও বিভিন্ন অপারেটরের নেটওয়ার্ক বিড়ম্বনা লক্ষ্য করা যায়। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়টির নাম বিভ্রান্তি এখনো কাটেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে-বেনামেও রয়েছে অর্ধশতাধিক ফেসবুক পেজও। এদিকে কয়েকদফায় আশ্বাস দিলেও শিক্ষার্থী এখনো প্রাতিষ্ঠানিক ই-মেইলের দেখা পায়নি। নাম বিভ্রান্তি নিরসন, ভুয়া পেজসমূহ বন্ধসহ প্রাতিষ্ঠানিক ই-মেইল প্রদানের দাবি শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ফি ক্যাম্পাসের অগ্রণী ব্যাংক শাখায় দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে পরিশোধ করতে হয়। তাই দীর্ঘদিন ধরেই অটোমেশনের দাবি জানিয়ে আসছেন শিক্ষার্থীরা। 

এদিকে, বিশ্ববিদ্যায়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর নিয়েও অভিযোগের শেষ নেই। সার্টিফিকেটসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র উত্তোলনে ভোগান্তিতে পড়েন শিক্ষার্থীরা। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে সময়মতো চিকিৎসক না থাকা, পর্যাপ্ত ঔষুধের অভাব, মেয়াদোত্তীর্ণ ঔধুধ সরবরাহ, দামি সরঞ্জাম অব্যবহৃত থাকা, চিকিৎসকদের দূর্বব্যবহার সহ নানা অভিযোগ রয়েছে।
 
ক্যাম্পাসের হাতিরঝিল খ্যাত লেক এবং প্রায় ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে করা বোটানিক্যাল গার্ডেনটিরও বেহাল দশা। গত ৫ বছর আগে শুরু হওয়া নানা অনিয়ম ও জটিলতার কারণে ৫৩৭ কোটি টাকার মেগাপ্রকল্পের কাজ শেষ নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ফলে এই স্বপ্নও পূরণ হয়তো অধরাই রয়ে যাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের। উন্নয়নের নামে ক্যাম্পাসে বৃক্ষনিধনও চলছে। তবে বনায়নের জন্য কর্তৃপক্ষের সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা নেই। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে ২৮ বছরে শেষ হয়েছে মাত্র ৫০ শতাংশ কাজ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের ডাইনিংয়ের খাবারের মান নিয়ে অভিযোগ পুরোনো। বাজেটের স্বল্পতা আর বাকি খাওয়া বৃদ্ধি পাওয়ায় খাবারের মানের এই দশা বলে জানান ডায়নিং ম্যানেজরারেরা। এছাড়া ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে বিশুদ্ধ পানির সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। শিক্ষার্থীদের ব্যবহার্য অধিকাংশ টয়লেটগুলোও অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ক্যাম্পাসজুড়ে বহিরাগতদের দৌরাত্ম ও মাদকসেবীদেরও আড্ডা লক্ষ্য করা যায়। এছাড়া সাইবার বুলিং, যৌন হয়ারানি ক্যাম্পাস রাজনীতিতে ক্ষমতাশীন দলের প্রভাব, হল দখলসহ অভিযোগের শেষ নেই। সুস্থ রাজনীতি চর্চায় ছাত্র সংসদ (ইকসু) শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটিতে লেগেই রয়েছে নানা সংকট। এ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪টি সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ফলে সমাবর্তন এখন প্রানের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনজন ভিসি বদলালেও ভাগ্য বদলেনি প্রতিষ্ঠানটির। সংকটগুলো থেকে পরিত্রাণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সকলের প্রাণের দাবি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, আমাদের বেশ কিছু সংকট রয়েছে এটা অস্বীকার করার কিছু নেই। সকল স্তরে ঘাটতি তলিয়ে দেখে পরিপুষ্ট করার পথে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। একুশ শতকের উপযোগী করে শিক্ষার্থীদের দক্ষ মানবসম্পদরূপে গড়ে তোলা, স্বচ্ছতার সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।

এমএইচ

×