ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় মৎস্য সংগ্রহশালা

ইসরাত জাহান

প্রকাশিত: ০০:১৩, ২ অক্টোবর ২০২২

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় মৎস্য সংগ্রহশালা

‘মাছে-ভাতে বাঙালী’-একথাটি প্রাচীন বাংলার চিরায়ত ঐতিহ্যকে তুলে ধরে

‘মাছে-ভাতে বাঙালী’-একথাটি প্রাচীন বাংলার চিরায়ত ঐতিহ্যকে তুলে ধরে। সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা এদেশের মানুষের প্রধান খাদ্য ভাত আর মাছ। বাংলাদেশ মাছে সমৃদ্ধ। ভাতের সঙ্গে একটু মাছের ঝোল ছাড়া যেন বাঙালীর চলেই না। কিন্তু বাংলাদেশের প্রাচীন ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক সেই মাছের রয়েছে বিচিত্র প্রজাতি ও প্রকারভেদ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রকারভেদ হিসেবে বলা যায় মিঠা পানির মাছ ও সামুদ্রিক মাছ।

মাছের এই এতশত প্রজাতির বেশিরভাগই এখনও অনেকেরই অজানা। আর তাই মাছের বিভিন্ন ধরনের মাছের প্রজাতি জানতে আজ পরিচিত হয়ে নিব বাংলাদেশ কৃষি বিশ^বিদ্যালয় (বাকৃবি) মৎস্য জাদুঘরের সঙ্গে। এটি দেশের প্রথম মৎস্য জাদুঘর এবং প্রায় ২৩৫ প্রজাতির দেশীয় মাছ ও বিভিন্ন জলজ প্রাণীর এক বিশাল সংগ্রহশালা।
‘ফিশ মিউজিয়াম এ্যান্ড জার্মপ্লাজম সেন্টার’ যা বাকৃবির মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের আওতাধীন একটি সংগ্রহশালা। সহজেই মাছের সঙ্গে পরিচিত হতে পারা, বিলুপ্ত এবং বিলুপ্তপ্রায় সব স্বাদু পানি ও সামুদ্রিক মাছ এবং জলজ প্রাণী সংরক্ষণের মাধ্যমে ভবিষ্যত গবেষণা কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যে ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় এই জাদুঘরটি। এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং বাংলাদেশের প্রথম ও সর্ববৃহৎ মৎস্য জাদুঘর।
১০ বছর ধরে গবেষণার কাজে এবং শখের বশে দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছের নমুনা সংগ্রহ করেন বাকৃবির মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ফিশারিজ বায়োলজি এবং জেনেটিক্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মোস্তফা আলী রেজা হোসেন। অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে ড. মোস্তফা আলী রেজা হোসেন নিজ উদ্যোগে ২০০৯ সালে বাকৃবির নয়নাভিরাম সবুজ চত্বরে স্থাপন করেন ‘ফিশ মিউজিয়াম এ্যান্ড জার্মপ্লাজম সেন্টার’।

পরে ২০১০ সাল থেকে এটিকে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় এবং ২০১৮ সালে বিশ^বিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে নেওয়া হয়। জাদুঘরটি মোট ৫টি কক্ষ নিয়ে সাজানো। এই জাদুঘরটির প্রথম কক্ষটির শিরোনাম ফ্রেশওয়াটার ডলফিন এ্যান্ড ফিশ (মিঠাপানির ডলফিন ও মাছ), দ্বিতীয়টির এনসিয়েন্ট এ্যান্ড মিডিয়া, তৃতীয়টির সিলোরিফরমিস বা বিড়াল জাতীয় মাছ, চতুর্থটির সিপ্রিনিফরমিস বা কার্প জাতীয় মাছ এবং পঞ্চমটির শিরোনাম পার্সিফরমিস বা কই জাতের মাছ। এছাড়াও জাদুঘরের করিডোরে আছে আবহমানকাল ধরে এ দেশের জেলেদের ব্যবহার্য বিভিন্ন ধরনের মাছ ধরার উপকরণ আর দেশের মৎস্য ঐতিহ্যের ইতিহাস ও নিদর্শন।
মাছের নমুনাগুলো বিভিন্ন আকারের কাঁচের জারে ফরমালিনে ডুবিয়ে রাখা হয়েছে। প্রতিটি মাছের জার বরাবর ওপরে দেয়ালে সাঁটা পোস্টারে প্রদর্শন করা হয়েছে ঐ মাছেরই পরিপক্ব বয়সের আলোকচিত্রসহ প্রচলিত ও বৈজ্ঞানিক নাম এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। গবেষণা কাজে সহায়তার জন্য বড় এবং ছোট দেশী প্রজাতির মাছের জন্য এ্যাকোরিয়াম, ক্রায়োজেনিক মাছের একটি জিন ব্যাংক এবং ডিএনএ সংগ্রহশালা করার পরিকল্পনা রয়েছে। একটি কক্ষে দর্শনার্থীদের জন্য রয়েছে থ্রিডি অডিও-ভিজুয়াল-সুবিধা। কক্ষটিতে প্রাগৈতিহাসিক যুগের বিলুপ্ত মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণীর জীবাশ্মের প্রতিলিপি প্রদর্শনীর জন্য রাখা হয়েছে। রয়েছে কোটি কোটি বছর আগে বিলুপ্ত প্রাণীর কঙ্কাল।
জাদুঘরে প্রায় ৪০টি জীবাশ্ম ও কঙ্কাল সংগৃহীত আছে। এর মধ্যে হাঙরের চামড়া, ৫৪০ মিলিয়ন বছর আগে বিলুপ্ত হওয়া দুই দাঁতবিশিষ্ট বাঘের কঙ্কাল, ৫৪ মিলিয়ন বছর আগে বিলুপ্ত জলজ প্রাণী গারপাইক, হর্সগ্রাস, স্টিংরের প্রতিলিপি, ১৫ মিলিয়ন বছর আগে বিলুপ্ত হাঙরের চোয়াল ও দাঁত, ৩৫ কোটি বছর আগে বিলুপ্ত কোরালের প্রতিলিপি অন্যতম। এই মৎস্য জাদুঘরে স্বাদু পানির প্রায় ২৩০ প্রজাতিসহ রয়েছে হাজার বছরের বিলুপ্ত প্রজাতির ফসিল যা চারটি সুপরিসর গ্যালারিতে সাজানো হয়েছে।

ফরমালিনের দ্রবণে বড় বড় কাচের সিলিন্ডারে এই সমস্ত মাছ সংরক্ষিত আছে। প্রতিটি মাছের উপরে দেওয়ালের সঙ্গে টাঙানো আছে নয়নাভিরাম আলোকসজ্জা। আলোকসজ্জার সঙ্গে বৈজ্ঞানিক নামসহ মাছের যাবতীয় বর্ণনা দেয়া আছে যাতে করে শিক্ষার্থীরা এখান থেকে পরিপূর্ণ জ্ঞান নিতে পারে।

×