
দিল আফরোজ খানম
দিলআফরোজ খানম বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রতিষ্ঠাতাকলীন শিক্ষক। সম্প্রতি তিনি লিঙ্গ সমতা এবং কমিউনিটি উন্নয়নে অসামান্য অবদানের জন্য ইন্সপায়ারিং উইমেন ভলান্টিয়ার এ্যাওয়ার্ড ২০২২ পেয়েছেন। ২০১৮ সালে একাডেমিক গবেষণার জন্য উপকূলবর্তী মহিলাদের নিয়ে কাজ করার সময় নারী, কিশোরী এবং শিশুদের প্রতি উপকূলীয় এলাকার চির শত্রু মাত্রাতিরিক্ত লবণাক্ততার ভয়াবহতা সম্পর্কে জানতে পারেন।
বিশেষ করে মাসিক ও মাসিক পরবর্তী সময়ে নারী স্বাস্থ্যের ওপর লবণাক্ততার মারাত্মক প্রভাব তাকে ভীষণভাবে অনুপ্রাণিত করে। ফলে গবেষণাকার্য শেষ করে উপকূলবর্তী মহিলা ও কিশোরীদের সুবিধার্থে স্বেচ্ছায় বিনামূল্যে প্যাড বিতরণ করার পাশাপাশি তাদের স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে পরিবেশবান্ধব বিভিন্ন পণ্য তৈরি ও বাণিজ্যিকীকরণের উদ্যোগ নেন। এছাড়াও বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের কম্পিউটার প্রশিক্ষণ প্রদান, শিক্ষা সহযোগিতা প্রদান, শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য কাউন্সিলিং কার্যক্রমসহ বিভিন্ন গবেষণা ও উন্নয়ন প্রকল্প পরিচালনা করছেন।
ইতোমধ্যে তিনি সফলভাবে সাশ্রয়ী ও কার্যকর রি-ইউজএবল ক্লোথ প্যাড তৈরি শেষে তা বড় পরিসরে উৎপাদন ও বিতরণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন যা প্রান্তিক নারী স্বাস্থ্যকে নিরাপদ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশা করছেন। উল্লেখ্য, তিনি নিজ কর্মস্থলে (বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে) মেয়ে শিক্ষার্থীদের মাসিককালীন সময়টুকু নিরাপদে এবং স্বাচ্ছন্দ্যে রাখার জন্য ডাস্টপ্যান স্থাপন, মেস্টুট্রুয়াল হাইজিন বান্ধব ওয়াশরুমের ব্যবস্থা করেছেন।
এছাড়াও বরিশাল শহরের কয়েকটি স্কুল, কলেজসহ, শিশু সংশোধন কেন্দ্রগুলোতে মাসিককালীন সময়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিয়ে সচেতনতা তৈরিতে ওয়ার্কশপ ও সেমিনার করেছেন। উপরে উল্লিখিত কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্টেপস এহেডের মাধ্যমে। সংগঠনটি তার নারী উন্নয়ন ও সমাজসেবামূলক কার্যক্রমের জন্য ২০২১ সালের জয় বাংলা ইয়ুথ এ্যাওয়ার্ড অর্জন করে। দিলআফরোজ তার সমমনা আরও পাঁচজন কো ফাউন্ডার নিয়ে ২০১৮ সালে স্টেপস এহেড প্রতিষ্ঠা করেন।
এবার তিনি লিঙ্গ সমতা এবং কমিউনিটি উন্নয়নে অসামান্য অবদানের জন্য ইন্সপায়ারিং উইমেন ভলান্টিয়ার এ্যাওয়ার্ড ২০২২ পেয়েছেন। ১২২ জন প্রতিযোগীর মধ্য থেকে ১৫ জন নারী এ পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। বাংলাদেশের যেসব নারী স্বেচ্ছাসেবক লিঙ্গ সমতা ও কমিউনিটির উন্নয়নে অসামান্য উদ্যোগ রাখছেন, তাদের জন্য ২০২১ সাল থেকে এ এ্যাওয়ার্ডের প্রচলন করা হয়েছে। বিশেষত যেসব টেকসই উদ্যোগ সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রেখেছে, সেসব উদ্যোগের নেতৃত্বের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নারী স্বেচ্ছাসেবকদের এই এ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত করা হয়।
এটির আয়োজনে ছিল যৌথভাবে ইউএনভি বাংলাদেশ, ভিএসও বাংলাদেশ, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল, ইউএন উইমেন বাংলাদেশ এবং এ্যাকশন এইড বাংলাদেশের। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম এবং সুইডেনের রাষ্ট্রদূত আলেকজান্দ্রা বার্গ ফন লিন্ডে। ইন্সপায়ারিং উইমেন ভলান্টিয়ার এ্যাওয়ার্ড জিতে দিলআফরোজ জানিয়েছেন, এই পুরস্কার আমাদের সংগঠনের পাশাপাশি আমাদের স্বেচ্ছাসেবকদের জন্য অনেক সম্মানের। এটি প্রান্তিক মানুষের জন্য বিশেষ করে নারী ও কিশোরী মেয়েদের জন্য ভবিষ্যতে আরও কল্যাণমূলক কাজ করতে আমাদের উৎসাহিত করবে।