ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৪ মার্চ ২০২৩, ১০ চৈত্র ১৪২৯

monarchmart
monarchmart

আজ জাতীয় বিমা দিবস ॥ প্রতি হাজারে জীবনবিমা আছে মাত্র ৪ জনের

আস্থা ফেরানোই চ্যালেঞ্জ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:৫৫, ১ মার্চ ২০২৩

আস্থা ফেরানোই চ্যালেঞ্জ

জীবন, স্বাস্থ্য ও সম্পদের বিভিন্ন অর্থনৈতিক ঝুঁকি মোকাবিলায় বিমার গুরুত্ব ব্যাপক

জীবন, স্বাস্থ্য ও সম্পদের বিভিন্ন অর্থনৈতিক ঝুঁকি মোকাবিলায় বিমার গুরুত্ব ব্যাপক। ব্যক্তিগত সম্ভাব্য ঝুঁকির পাশাপাশি শিল্প ও বাণিজ্য খাতের ঝুঁকির বিপরীতেও আর্থিক নিরাপত্তা দিয়ে থাকে বিমা। দুর্যোগ ও দুর্ঘটনায় প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির আর্থিক ক্ষতির অনেকটাই পুষিয়ে দেয় বিমা। এত সুবিধা থাকার পরও দেশের গুরুত্বপূর্ণ এ খাত খুব বেশি সম্প্রসারিত হয়নি। একটা সহজ উদাহরণ দিলেই বোঝা যাবে বিমা খাতের অবস্থা। আর তা হলো- প্রতি হাজারে জীবন বিমা আছে মাত্র চারজনের।

বাংলাদেশের মোট দেশজ আয়ের মাত্র দশমিক ৫৫ শতাংশ বিমা খাতের প্রিমিয়াম আয়। আজ বুধবার দেশজুড়ে চতুর্থবারের মতো পালিত হচ্ছে জাতীয় বিমা দিবস। দিবসটিকে সামনে রেখে উদ্ভাবনী পণ্য বা সেবা চালুর মাধ্যমে বিমা খাতের সম্প্রসারণের সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলেন, এজন্য সবার আগে আস্থা বাড়ানোই বিমা খাতের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
জানা গেছে, ২০২০ সাল থেকে সরকারিভাবে এ দিনটি বিমা দিবস হিসেবে উদযাপন করা হচ্ছে।

এবারের বিমা দিবসের মূল প্রতিপাদ্য ‘আমার জীবন আমার সম্পদ, বিমা করলে থাকবে নিরাপদ’। ১৯৬০ সালের ১ মার্চ তৎকালীন আলফা ইন্স্যুরেন্সে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যোগদানকে স্মরণীয় করে রাখতে এ দিনটিকে জাতীয় বিমা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। দিবসটি পালনের মূল্য লক্ষ্য বিমা বিষয়ে মানুষকে সচেতন করা। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় বিমা দিবসের কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ, আইডিআরএ চেয়ারম্যান এবং বিমা কোম্পানিগুলোর সংগঠন বিআইএর সভাপতি শেখ কবির।

জানা যায়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকার সময়ে সর্বস্তরের জনগণকে সংগঠিত করার মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা অর্জনের এক সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ১৯৬০ সালের ১ মার্চ তৎকালীন আলফা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে এ অঞ্চলের প্রধান হিসেবে যোগদান করেন। তারিখটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য সরকার ১ মার্চ কে ‘জাতীয় বিমা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেন। আইডিআরএ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারী বলেন, স্বাধীনতার প্রস্তুতিতে বঙ্গবন্ধু বিমা কোম্পানিতে কাজ করেছেন এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

এটাকে আমরা আমাদের অনুপ্রেরণার উৎসহ হিসেবে ব্যবহার করতে চাই। আর সেটার জন্যই বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে এই জাতীয় বিমা দিবসের আয়োজন করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর বিমা পেশা বেছে নেওয়ার বিষয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরের কিউরেটর মো. নজরুল ইসলাম খান জানিয়েছেন, বঙ্গবন্ধু আলফা ইন্স্যুরেন্সে যোগদান করেন ১৯৬০ সালে ১ মার্চ। আলফা ইন্স্যুরেন্সে যোগদানের পর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আওয়ামী লীগের সক্রিয় নেতাদের কোম্পানিটির বিভিন্ন শাখায় ম্যানেজার পদে চাকরি দেন।

তাদের মাধ্যমেই চালাতেন সাংগঠনিক কর্মকা-। নজরুল ইসলাম খান আরও বলেন, বিমা পেশার আড়ালে বঙ্গবন্ধু রাজনৈতিক কর্মকা- পরিচালনা করেছেন। বঙ্গবন্ধুর জাতির পিতা হয়ে ওঠার পেছনে বিমার গুরুত্ব অনেক। বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট শেখ কবির হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধু বিমা খাতের সঙ্গে যেভাবে জড়িত, অর্থনীতির আর কোনো খাতের সঙ্গে তার এত বেশি সম্পৃক্ততা নেই। বঙ্গবন্ধু বিমা পেশার মাধ্যমে তার সংগ্রামী কর্মকা- চালিয়েছেন। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বিমা খাতের বিশেষ অবদান রয়েছে।
জাতীয় বিমা দিবস উদযাপন উপলক্ষে আজ থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত সেবাপক্ষ হিসেবে পালনের জন্য দেশের সরকারি বেসরকারি লাইফ ও নন-লাইফ বিমা কোম্পানিগুলোকে ৪টি নির্দেশনা দিয়েছে বিমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ। কোম্পানিগুলোতে পূর্বের অপরিশোধিত বিমা দাবি থাকলে তা সেবা পক্ষের মধ্যে অতিদ্রুত পরিশোধ করা, লাইফ বিমাকারীর সার্ভাইভাল বেনিফিট সেবা পক্ষ চলাকালে দ্রুততার সঙ্গে পরিশোধের ব্যবস্থা করা, নন-লাইফ বিমাকারীর ক্ষেত্রে সেবা পক্ষ চলাকালে উত্থাপিত বিমা দাবি দ্রুততম সময়ে পরিশোধ করা এবং সেবা পক্ষে প্রদত্ত বিশেষ সেবাসমূহ একটি রেজিস্ট্রারে সংরক্ষণ ও ৩১ মার্চের মধ্যে রেজিস্ট্রারের ছায়াকপি কর্তৃপক্ষে পাঠাতে বলা হয়েছে।
জানা যায়, ২০১৪ সালে জাতীয় বিমা নীতি করা হলেও এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি। এতে সব মানুষ এবং সম্পদকে বিমার আওতায় আনার রূপকল্প রয়েছে। বর্তমান জাতীয় বাজেটেও বহুমুখী বিমা ব্যবস্থার চালুর অঙ্গীকার করা হয়েছে। বিমাযোগ্য সব মানুষ ও সরকারি-বেসরকারি সম্পদ বিমার আওতাভুক্ত করা গেলে এ খাতের আরও সম্প্রসারণ সম্ভব। এটি জিডিপি প্রবৃদ্ধিতেও প্রভাবক হিসেবে কাজ করবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে বিমা ব্যবসা এখনো সঞ্চয়কেন্দ্রিক। ঝুঁকিভিত্তিক বিমা বিশেষ চালু হয়নি। 
আইডিআরএ সূত্রে জানা যায়, স্বাধীনতার ৫২ বছরে দেশে বিমা কোম্পানির সংখ্যা এখন ৮১টি। এরমধ্যে লাইফ বিমা কোম্পানি আছে ৩৫টি। আর নন-লাইফ বিমা ৪৬টি। 
২০১৮ সালে জীবন বিমা ব্যবসায় পলিসির সংখ্যা ছিল এক কোটি এবং সাধারণ বিমায় ২৮ লাখ। জীবন বিমায় ওই বছর ১৮ লাখ গ্রাহক নতুন পলিসি নেন। ২০২১ সালে করোনা মহামারির সংকটের মাঝে বিশ্বব্যাপী মোট বিমা প্রিমিয়ামের প্রকৃত প্রবৃদ্ধি যেখানে ৩ দশমিক ৪ ভাগে নেমে এসেছিল, সেখানে বাংলাদেশে বিমা প্রিমিয়ামের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ৩ ভাগ। যা ২০২২ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক শূন্য ৪ ভাগ। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২২ সালের শেষে গ্রস প্রিমিয়ামের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৮১২ কোটি টাকা।

যার মধ্যে লাইফ বিমার গ্রস প্রিমিয়ামের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৩৯৯ কোটি টাকা। আর নন লাইফে এই পরিমাণ ৫ হাজার ৪১৩ কোটি টাকা। যা সংকটের এই সময়ে দেশের ব্যাংকিং খাতে বড় তারল্যের যোগান দিচ্ছে। সংস্থাটি আরও জানায়, লাইফ ও নন-লাইফ বিমা কোম্পানির অর্জিত প্রিমিয়ামের ওপর ২০২২ সালে ১ হাজার ৩০৫ কোটি ৭৩ লাখ টাকার ভ্যাট ও ট্যাক্স সরকারের কোষাগারে জমা দেওয়া হয়েছে। বিগতবছরে লাইফ এবং নন-লাইফ বিমা কোম্পানিগুলোর উত্থাপিত বিমা দাবির মোট সংখ্যা ৩০ লাখ ৬২ হাজার চারশত ৮টি। বিমা কোম্পানি মোট ১৯ লাখ ১২ হাজার ৮৬৯টি বিমা দাবি নিষ্পত্তি করেছে।

monarchmart
monarchmart