
শিল্প কারখানায় নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের উদ্যোগ
শিল্প কারখানায় নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এ লক্ষ্যে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি বাড়াতে পর্যাপ্ত ডলারের জোগান দিবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ ছাড়া ডলারের এ মুহূর্তে কোনো সংকট নেই বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।
সম্প্রতি এক বৈঠক শেষে তিনি জানান, এলএনজি আমদানির জন্য দেশে পর্যাপ্ত মার্কিন ডলার মজুত আছে। এর ফলে শিল্প খাত ও ইউটিলিটি সরবরাহকারীদের জন্য নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত হবে। গভর্নর বলেন, কেউ বলতে পারবে না গ্যাস আমদানির জন্য ডলার পাওয়া যাচ্ছে না।
দেশের রিজার্ভ এখন আর জ্বালানি সরবরাহের ক্ষেত্রে কোনো বাধা নয়, এমন ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, এখন ডলার পাওয়া যাচ্ছে এবং সেই অনুযায়ী এলএনজি আমদানিও চলছে। আহসান এইচ মনসুর আরও বলেন, সরকার বিদ্যুৎ খাতে বিপুল ভর্তুকি দেওয়ায় গ্যাস সরবরাহ এখন আর বড় সরবরাহ নয়। এ বছর বিদ্যুৎ খাতের জন্য প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার, যেটা বাজেটে ছিল ৩৬ হাজার কোটি টাকা।
প্রয়োজন হলে আরও বরাদ্দ দিতে পারে সরকার। তিনি বলেন, ভালো কোম্পানিগুলো চলে গিয়েছিল, কারণ তাদের সময়মতো পেমেন্ট করতে পারছিলাম না। এখন তারা মার্কেটে ফিরে আসছে। যে কারণে আন্তর্জাতিক বাজারেও এলনজি দাম কমেছে। আবার বাংলাদেশের যে মার্ক-আপ ছিল এলএনজির, সেটিও কমে এসেছে।
তিনি বলেন, শেভরন ও কাতারের প্রতিষ্ঠানগুলোর মতো বড় সরবরাহকারীদের বকেয়া সম্পূর্ণ পরিশোধ করা হয়েছে। একসময় এসব প্রতিষ্ঠানে ৬০০-৭০০ মিলিয়ন ডলার বিল বকেয়া ছিল। এখন কোনো বকেয়া নেই। তবে কাঠামোগত সমস্যাগুলোর দিকে মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে আর্থিকভাবে সচ্ছল হতে হবে।
ডলার কেনার মতো টাকা জোগাড় করার সক্ষমতা তাদের থাকতে হবে। টাকা ছাড়া আমরা তাদের ডলার দিতে পারব না। এই সক্ষমতা নিশ্চিত করতে সরকার পিডিবির ঋণের গ্যারান্টি দিতে এগিয়ে এসেছে বলে জানান তিনি। গ্যাসের দাম দ্বিগুণ হওয়া নিয়ে মানুষের উদ্বেগের প্রতিক্রিয়ায় গভর্নর বলেন, হ্যাঁ, দাম বেড়েছে। তবে দ্বিগুণ করার পরও কি সরকারের কোনো লাভ থাকবে? না।
এদিকে, গ্যাস সংকটের কারণে দেশের বস্ত্র ও তৈরি পোশাক শিল্পের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এ শিল্পখাতের উদ্যোক্তারা। পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমইএসহ আরও কয়েকটি বাণিজ্য সংগঠন থেকে সম্প্রতি গ্যাসের সংকটের কথা জানিয়ে দ্রুত সরবরাহ বাড়ানোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত বৈঠকগুলোতে প্রায়ই এলএনজি ও জ্বালানি তেল আমদানির অনুমোদন দিচ্ছে ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটি।
এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, জ্বালানি ও গ্যাসের সংকট দূর করতে সরকার এলএনজি আমদানি বাড়িয়েছে। আমদানি অব্যাহত রাখা হবে। এদিকে, গ্যাস সংকটের কারণে চাপের মুখে রয়েছে রপ্তানি আয়ের প্রধান এই খাতের ৭০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ। পাশাপাশি, মার্কিন শুল্কনীতি বিশ্ববাণিজ্যে সৃষ্টি করেছে নতুন অনিশ্চয়তা।
নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, ভুলতা, মাওনা ও টঙ্গীসহ গুরুত্বপূর্ণ শিল্পাঞ্চলে গ্যাসের চাপ কমে যাওয়ায় অনেক বস্ত্র কারখানার উৎপাদন সক্ষমতার তুলনায় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশে নেমে এসেছে। বস্ত্র কারখানায় উৎপাদন চলমান রাখতে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ জরুরি। এসব কারখানায় বিদ্যুৎ উৎপাদন, স্পিনিং মেশিন সচল রাখা ও কাপড় রং করতে বয়লারে বাষ্প সৃষ্টির জন্য গ্যাস দরকার হয়। তবে অনেক কারখানার মালিক বলছেন গ্যাসের চাপ না থাকায় শিল্পাঞ্চলের কয়েকটি কারখানায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। তাই গ্যাসের দাম বাড়লেও স্বস্তি মেলেনি।
এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে গাজীপুরে ইসরাক স্পিনিং মিলস লিমিটেড সক্ষমতার কম পণ্য উৎপাদন করছে। কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুল হক বলেন, আমাদের দৈনিক উৎপাদন সক্ষমতা ১৭০ টন সুতা। গ্যাসের চাপ কম থাকায় দিনে মাত্র ৭৫ টন সুতা উৎপাদন করতে পারছি।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম জানান, এ খাতে দৈনিক দুই হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি গ্যাস দরকার। এসব খাত এখন দ্বিমুখী সংকটে পড়েছে। একদিকে, দেশে জ্বালানি সংকটে উৎপাদন কমছে, অন্যদিকে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত শুল্কনীতি অনিশ্চয়তার এক নতুন পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।