ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৬ ফাল্গুন ১৪৩১

গ্রুপের কর্মীদের সংবাদ সম্মেলন

বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে সব গার্মেন্টস কারখানা খুলে দেওয়ার দাবি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:১২, ২৪ জানুয়ারি ২০২৫

বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে সব গার্মেন্টস কারখানা খুলে দেওয়ার দাবি

বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে গার্মেন্টস বিভাগের সব কারখানা খুলে দেওয়ার দাবি

লে-অফ প্রত্যাহার করে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে গার্মেন্টস বিভাগের সব কারখানা খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে বেক্সিমকোর কর্মীরা। পাশাপাশি রপ্তানি বাণিজ্য শুরুর ও বিদেশীদের কার্যাদেশ প্রাপ্তির সুবিধার্থে ব্যাংকিং কার্যক্রম ও ব্যাক টু ব্যাক এলসি খোলার অনুমতি দেওয়ার দাবি করেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা। কারখানা ও ব্যবসা চলমান রেখে সকল বকেয়া বেতন এবং কোম্পানির দায়-দেনা পরিশোধের দাবিও জানান তারা।
বৃহস্পতিবার ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরাম (সিএমজেএফ)-এর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন, বেক্সিমকো ফ্যাসন লিমিটেডের অ্যাডমিন বিভাগের প্রধান সৈয়াদ মো. এনাম উল্লাহ, বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের অ্যাডমিন বিভাগের প্রধান আব্দুল কাইয়ুম।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে লিখিত বক্তব্যে সৈয়াদ মো. এনাম উল্লাহ বলেন, গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকে বেক্সিমকো গ্রুপের গার্মেন্টস ও এর সঙ্গে সম্পর্কিত কিছু প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এগুলোতে কর্মরত প্রায় ৪২ হাজার চাকরিজীবীকে লে-অফের আওতায় জনতা ব্যাংকের ঋণ সুবিধায় জানুয়ারি- ২০২৫ পর্যন্ত বেতনাদি প্রদান করা হচ্ছে।

সরকারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ফেব্রুয়ারি মাস থেকে এই বিশাল জনবলকে আর কোনো প্রকার আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করা হবে না। যার  পরিপ্রেক্ষিতে ফেব্রুয়ারি-২০২৫ মাস থেকে ১৬টি কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাবে এবং এগুলোতে কর্মরত প্রায় ৪২ হাজার কর্মজীবী মানুষ চাকরি হারাবে।

সেই সঙ্গে এই ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ককে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাড়ি ওয়ালা, দোকানদার, অটোরিক্সা চালক, স্কুল-মাদ্রাসা-কিন্ডারগার্টেন বন্ধ হয়ে যাবে যার সঙ্গে পরোক্ষও প্রত্যেক্ষভাবে জড়িত আছে প্রায় ১০ লাখ মানুষের জীবন ও বেচে থাকার সকল মৌলিক চাহিদা।
তিনি বলেন, বেক্সিমকোর মত আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন এবং বাংলাদেশের সব চেয়ে বড় গ্রুপ বন্ধ হয়ে গেলে ৪২ হাজার কর্মজীবী মানুষ চাকরি হারাবে।

তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রায় দুই লাখ পরিবারের সদস্য এবং এই শিল্প ও কর্মজীবীদের কেন্দ্র করে গড়ে উঠা কর্মসংস্থানের আরও প্রায় ৮ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই ৪২ হাজার কর্মজীবী মানুষের মাঝে প্রায় ২ হাজার প্রতিবন্ধী, শতাধিক তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ এবং ৫ হাজারের মতো ষাটোর্ধ ব্যক্তি রয়েছেন যাদেরকে আমরা পরম মমতায় আর যত্নে সমাজ ও পরিবারের বোঝা হওয়া থেকে রক্ষা করছি।

সরকারের সিদ্ধান্তের যদি কোনো পরিবর্তন না হয় তাহলে এরা সবাই মানবেতর জীবনের দিকে এগিয়ে যাবে। সেই সঙ্গে প্রায় ৪২ হাজারের নতুন বেকার এবং ব্যবসা-বাড়িভাড়া বঞ্চিত লাখো মানুষ নৈরাজ্য আর অনৈতিক কর্মকা-ে জড়িয়ে গিয়ে নতুন সংকট তৈরি করবে।
সংবাদ সম্মেলন থেকে লে-অফ প্রত্যাহার করে ১৬টি বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়ে বলা হয়, বেক্সিমকো শুধু বাংলাদেশে নয় এশিয়া মহাদেশের একটি বড় ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রুপ এবং শুধু বেক্সিমকো গার্মেন্টস বিভাগে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিমাসে প্রায় ৩০ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ে প্রধান ভূমিকা পালন করত।

আজ সেই গার্মেন্টস ও সংশ্লিষ্ট কারখানাগুলো বন্ধ করে রাখায়, ব্যাংকিং সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে রাখায় সরকার ও জনগণ সেই বিশাল বৈদেশিক মুদ্রা আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। যা আমাদের জাতীয় আয় ও রিজার্ভ ঘাটতির অন্যতম কারণ।
এনাম উল্লাহ বলেন, বর্তমান সময়ের উপযোগী মেশিনারিজ, প্রযুক্তি আর ৪২ হাজার দক্ষ জনবল নিয়ে তিল তিল করে গড়ে উঠা আজকের বেক্সিমকোর গার্মেন্টস শিল্প মরিচা ধরার অপেক্ষায় আছে। আমাদের মাসিক প্রায় ৪০-৫০ লাখ পিস গার্মেন্টস তৈরির সক্ষমতা, এশিয়ার বৃহত্তম ওয়াশিং প্লান্ট এবং অত্যাধুনিক মেশিনে সজ্জিত প্রিন্টিং, অ্যাম্ব্রয়ডারি ও এক্সেসরিজ তৈরির কাখানা, টেক্সটাইল মিল ও দক্ষ জনবল সকল বায়ারদের প্রধান আকর্ষণ। 
তিনি আরও বলেন, কম্পোজিট গ্রুপ হওয়ায় শুধুমাত্র তুলা ও কেমিক্যাল ক্রয় ছাড়া গার্মেন্টস তৈরির অন্য কিছুই বাহির থেকে ক্রয় বা আমদানি করতে হয় না। এই সকল সুবিধা বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে বর্তমান থাকায় বায়াররা আমাদের কার্যাদেশ দিতে সব সময় তৎপর থাকে। আমাদের করোনা মহামারি ও ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধকালীন বৈশ্বিক সংকটের মাঝেও বেক্সিমকো গার্মেন্টস ডিভিশন গার্মেন্টস রপ্তানিতে শীর্ষস্থানে ছিল।

এই রকম একটি লাভজনক, সুবিধাজনক এবং শ্রমঘন প্রতিষ্ঠানকে বন্ধ করে দিয়ে ১০ লাখ মানুষের মুখের আহার কেড়ে নিয়ে, জাতীয় প্রবৃদ্ধির ব্যাহত করে বর্তমান জননন্দিত সরকার কি সুবিধা লাভ করছেন আমরা জানি না। তাই সবিনয়ে অনুরোধ অবিলম্বে আমাদের কারখানাগুলোকে খুলে দিয়ে ৪২ হাজার শ্রমিক কর্মচারী ও ১০ লাখ মানুষের খেয়েপরে বেঁচে থকার ব্যবস্থাটুকু নিশ্চিত করা হোক।
সংবাদ সম্মেলন থেকে বেক্সিমকোর ব্যাংকিং ও ব্যাক টু ব্যাক এলসি সুবিধা প্রদান করার দাবি জানিয়ে বেক্সিমকোর এই কর্মী বলেন, ব্যাংকিং ও এলসি সুবিধা ছাড়া দেশী-বিদেশী কোনো ব্যবসা বাণিজ্যই করা যায় না। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, ৬ মাস যাবত বেক্সিকোর গার্মেন্টস ডিভিশনের সকল ব্যাংকিং ও এলসি সুবিধা বন্ধ রাখা হয়েছে।

একদিকে কারখানা বন্ধ, উৎপাদন নেই অন্যদিকে দায়-দেনার পরিমাণ প্রচার করে তা পরিশোধের জন্য সকল প্রকার চাপ অব্যাহত আছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে বলতে হয়- আয় থেকে দায় শোধ-ব্যাংকিং ও ঋণ ব্যবস্থাপনার মূলমন্ত্র যদি হয়ে থাকে তাহলে বেক্সিমকো গ্রুপের সকল দায়-দেনা নিয়মিতভাবে পরিশোধের জন্য এর বন্ধ রাখা প্রতিটি কারখানা খুলে দিয়ে উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরুর করার কোনো বিকল্প নেই। 
এনাম  উল্লাহ বলেন, প্রয়োজন আপনাদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক বন্ধ থাকা ব্যাক টু ব্যাক এলসি ওপেন করে দেওয়া। কিন্তু সব কিছু বন্ধ করে দিয়ে দায় পরিশোধের চাপ সৃষ্টি শুধু অমানবিকই নয়, অন্যায্যও বটে। এই দায় বহন করার সক্ষমতা কোনো সরকারের বা ব্যক্তির পক্ষে সম্ভব নয়। কারখানা বন্ধ রাখার প্রক্রিয়া যতই প্রলম্বিত হবে বেক্সিমকোর দায়ও তাতে বাড়তে থাকবে। তাই অবিলম্বে বায়ারদের কার্যাদেশ পাওয়ার সুবিধার্থে বেক্সিমকোর ব্যাংকিং সুবিধার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার ব্যবস্থা নিয়ে উৎপাদন শুরু করার মাধ্যমে সকল দায়-দেনা পরিশোধের ব্যবস্থা  নেওয়ার দাবি করছি।
বকেয়া বেতন ও অন্যান্য পাওনাদি পরিশোধ করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানের কাছে শ্রমিকদের অর্জিত ছুটির ২ বছরের টাকা জমে গেছে এবং অফিসারদের চার মাসের বেতনের টাকা বকেয়া রয়ে গেছে। বর্তমান আর্থিক দুরবস্থার ভেতর এই বকেয়াগুলো পাওয়া গেলেও সন্তানদের স্কুল-কলেজে ভর্তির খরচটা মিটিয়ে ফেলা যেত। টাকার অভাবে সন্তানদের নতুন বছরে, নতুন ক্লাসে ভর্তি করানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের অ্যাডমিন বিভাগের প্রধান আব্দুল কাইয়ুম বলেন, বেক্সিমকোর যে পরিমাণ ঋণ রয়েছে তা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে আদায় করা সম্ভব না। এই ঋণ আদায় করতে হলে প্রতিষ্ঠান চালু রাখতে হবে। এ লক্ষ্যে আমরা বেশকিছু প্রস্তাবও দিয়েছি।

এর মধ্যে একটি প্রস্তাব ছিল ২৩ একর জমি বন্ধক রেখে ৭০০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া। এই ঋণ চাওয়া হয় ৪ মাসের জন্য। এই ঋণ দেওয়া হলে আমরা কার্যক্রম পরিচালনা করে বকেয়া ঋণও পরিশোধ করতে পারব। সেক্ষেত্রে বছরে ৪০০ কোটি টাকার মতো বকেয়া ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব, এ ধরনের একটি প্লানও আমরা দিয়েছি।
অপর এক প্রশ্নে এনাম উল্লহ বলেন, আমরা মালিক বলতে এখন আমাদের এমডি ওসমান কায়সার চৌধুরীকে বুঝি। এমডি আছেন, রিসিভার আছেন। তাদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। এমডি মহদয় বেক্সিমকোর চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাদের সঙ্গে আলোচন করেই সকল ধরনের প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়েছে।

×