ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

সাক্ষাৎকার

শাস্তিমূলক ব্যবস্থা আরও কঠোর করতে আইন সংশোধন করা হচ্ছে

রহিম শেখ

প্রকাশিত: ২২:৪৯, ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

শাস্তিমূলক ব্যবস্থা আরও কঠোর করতে আইন সংশোধন করা হচ্ছে

মোহাম্মদ জয়নুল বারী

বিমা খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ২০১১ সালে অধিদপ্তর বিলুপ্ত করে প্রতিষ্ঠা করে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ। দেশে এখন মোট ৮২টি অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান বিমা সেবা দিচ্ছে। বর্তমানে বিমার আওতায় আছে দেশের ১ কোটি ৭১ লাখ ১০ হাজার মানুষ। এ খাতের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে কর্তৃপক্ষ বিমা দাবি পরিশোধের ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করে কোম্পানিগুলোকে নির্দেশনা দিয়ে আসছে।

একইসঙ্গে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা আরও কঠোর করতে আইন সংশোধন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারী। জনকণ্ঠকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যায় অতিরিক্ত খরচ এত বেশি যে তাদের জরিমানা করা হলে তারা তা খুশিমনে দিয়ে দেয়। জরিমানার পরিমাণ সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা হওয়ায় তাদের কোনো চাপ সৃষ্টি হয় না। এই প্রেক্ষিতে বিমা কোম্পানিগুলোর জরিমানার পরিমাণ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরইমধ্যে আইন সংশোধনের খসড়া প্রস্তুত করা। 
তিনি বলেন, নতুন যেসব গ্রাহক বিমা করবে তাদের টাকা ফেরতের নিশ্চয়তার জন্য কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ সঠিক হচ্ছে কিনা সেটা গাইডলাইন অনুসারে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। বিনিয়োগের টাকা যাতে আত্মসাৎ না হয় সে লক্ষ্যে এবং সলভেন্সি মার্জিন মেইনটেন করার লক্ষ্যে কাজ করছে আইডিআরএ। একইসঙ্গে রিস্ক বেইজড সুপারভিশন করার জন্য কাজ করা হচ্ছে।

এগুলো বাস্তবায়ন করা গেলে বিমা খাতের এই নেতিবাচক অবস্থা দূর হবে বলে তিনি মনে করেন। এছাড়া বিমা ব্যবস্থাকে যুগোপযোগী করতে জারি হয়েছে করপোরেট গভর্ন্যান্স গাইডলাইন-২০২৩ ও রেগুলেটরি স্যান্ডবক্স গাইডলাইন। ব্যাংকের মাধ্যমে বিমা পণ্য বিপণনের জন্য প্রবর্তন করা হয়েছে ব্যাংকাস্যুরেন্স।
ব্যাংকাস্যুরেন্স প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ব্যাংকাস্যুরেন্স চালু হলে ব্যাংকের প্রশিক্ষিত ও দক্ষ জনবলের মাধ্যমে বিমা পণ্য ব্যাংকের গ্রাহকদের মধ্যে বিপণন করা হবে। ফলে বিমা গ্রাহকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে পাশাপাশি বিমা পলিসি তামাদির হার হ্রাস পাবে। সার্বিকভাবে বিমার পেনিট্রেশন বৃদ্ধি পাবে। ব্যাংকের গ্রাহকদের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে নতুন নতুন বিমা পরিকল্পনা নিয়ে আসতে হবে। এছাড়া ব্যাংকাস্যুরেন্স সফলভাবে চালু করার জন্য ব্যাংক ও বিমা কোম্পানিগুলোকে সহযোগিতামূলক ও অংশীদারিত্বমূলক মনোভাব নিয়ে অগ্রসর হতে হবে। সেইসঙ্গে বিমা দাবি পরিশোধসহ গ্রাহক সেবার মান উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।
দাবির আদায় প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২০২৩ সালে মোট জীবন বিমা দাবি উত্থাপিত হয় ১২ হাজার ১১৭ কোটি টাকা। এ দাবির বিপরীতে বিমা কোম্পানিগুলো ৮ হাজার ৭৫৫ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। দাবি পরিশোধের হার ৭২ শতাংশ। ২০২২ সালের তুলনায় দাবি পরিশোধের হার ছিল ৬৭ শতাংশ। বিমা খাতের সার্বিক চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের স্মারক হিসেবে খোলা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বিমা।

পাইলট পর্যায়ে জীবন বীমা করপোরেশনের মাধ্যমে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের অর্থায়নে ৫০ হাজার শিক্ষার্থীকে এর আওতায় আনা হয়। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি কোম্পানিগুলোও এখন বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বিমা পলিসি চালু করেছে। তিনি আরও বলেন, বেসরকারি কোম্পানিগুলো এরইমধ্যে ৭৮ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীকে বিমার আওতায় এনেছে। আস্থা লাইফের উদ্যোগে গতকাল বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বিমা চালু করা হয়েছে। সেনাবাহিনী পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রায় ২ লাখ শিক্ষার্থী রয়েছে, যাদেরকে তারা বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বিমার আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে।

×