ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাজেটে নিবন্ধন ব্যয় বৃদ্ধিসহ নানাবিধ করারোপ

মধ্যবিত্তের বাড়ি করার স্বপ্ন ফিকে হয়ে যাবে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:৫৮, ৪ জুন ২০২৩

মধ্যবিত্তের বাড়ি করার স্বপ্ন ফিকে হয়ে যাবে

নতুন অর্থবছর থেকে ঢাকার গুলশানে এক কাঠা জমি কিনতে কমপক্ষে ২০ লাখ টাকা ট্যাক্স দিতে হবে

নতুন অর্থবছর থেকে ঢাকার গুলশানে এক কাঠা জমি কিনতে কমপক্ষে ২০ লাখ টাকা ট্যাক্স দিতে হবে। উত্তরাতে জমি কিনতেও কাঠা প্রতি দিতে হবে ১২ লাখ টাকা অথবা মোট দামের ৮ শতাংশ। ট্যাক্সের এ হার বিদ্যমান রেটের দ্বিগুণ। জমি কিনে বাড়ি বানাতে গেলে সিমেন্ট, রড, লিফট, সিরামিক, গ্লাস, সুইচ-সকেট, ক্যাবল, কিচেনওয়্যারেও গুনতে হবে অতিরিক্ত খরচ। কারণ শুল্ক ও ভ্যাট বাড়ায় দাম বাড়বে এসব উপকরণে। বাড়ি বানাতে বেশি খরচ হবে তাই ফ্ল্যাট কিনতে চাইলেও দিতে হবে বেশি ট্যাক্স। জুলাই মাস থেকে ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট বা বিল্ডিং কিনতে গেলে প্রতি স্কয়ার ফিটে ৮০০ টাকা বা মোট ৮ শতাংশ হারে ট্যাক্স দিতে হবে ক্রেতাকে। এটিও বিদ্যমান করের দ্বিগুণ। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে পেশ করা বাজেটে আগামী অর্থবছরের জন্য এমন করহার নির্ধারণ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
তবে ভূমি, ফ্ল্যাটে এমন বিপুল করারোপের ফলে মূল্য লুকিয়ে ট্যাক্স ফাঁকি দেয়ার প্রবণতা বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকেই। পাশাপাশি দাম বেড়ে যাওয়ায় মধ্যবিত্তের বাড়ি করার স্বপ্ন আরও ফিকে হবে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। জানতে চাইলে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, রেজিস্ট্রেশনের খরচ বেড়ে গেলে ক্রেতা ও বিক্রেতারা তাদের নথিতে প্রকৃত দাম প্রকাশ নাও করতে পারে, যার ফলে অপ্রকাশিত অর্থ বেড়ে যায়। এতে অর্থনীতির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ইনফরমাল থেকে যায়।

প্রস্তাবিত বাজেট অনুযায়ী, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এবং চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) এলাকায় জমি ও ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশনের ওপর গেইন ট্যাক্স বর্তমান ৪ থেকে বাড়িয়ে ৮ শতাংশ করা হবে। সিটি করপোরেশন ও জেলা পর্যায়ের পৌরসভার অন্যান্য এলাকায় এই হার বর্তমানের ৩ থেকে বাড়িয়ে ৬ শতাংশ করা হবে। উপজেলা পর্যায়ের পৌরসভার ক্ষেত্রে ৪ শতাংশ এবং অন্যান্য এলাকার জন্য ১ শতাংশের পরিবর্তে ২ শতাংশ কর হার প্রযোজ্য হবে। বর্তমানে, জমি রেজিস্ট্রেশন খরচের মধ্যে রয়েছে ১ শতাংশ রেজিস্ট্রেশন ফি, ১.৫ শতাংশ স্ট্যাম্প ডিউটি, ২ শতাংশ স্থানীয় সরকার কর এবং ৪ বা ৩ শতাংশ গেইন ট্যাক্স। জমি ফ্ল্যাটের পাশাপাশি ব্যয় বাড়বে বাড়ি নির্মাণেও। বাড়ি নির্মাণের প্রধান উপকরণ সিমেন্টের কাঁচামাল ক্লিংকার আমদানিতে বর্তমানে টনপ্রতি ৫০০ টাকা শুল্ক আছে, এটি বাড়িয়ে ৭০০ টাকা করা হয়েছে। এ কারণে সিমেন্টের দাম বস্তা প্রতি ৩০ টাকা বাড়তে পারে। সিমেন্ট ছাড়াও দাম বাড়ছে বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত বিদেশী টাইলস আমদানিতে। 
এ খাতে রেয়াতি সুবিধা প্রত্যাহার করা হচ্ছে। এ কারণে বিদেশী টাইলসের দাম বাড়তে পারে। এছাড়া লিফট, সিরামিক, গ্লাস, সুইচ-সকেট, ক্যাবল, কিচেনওয়্যারসহ কম পক্ষে ১০-১২টি পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্কারোপ করা হয়েছে। এসব পণ্যের দাম বাড়লে ব্যয় বাড়বে বাড়ি নির্মাণে।
রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট (প্রথম) কামাল মাহমুদ বলেন, এবার বাজেটে অনেক এলাকায় ২০ লাখ টাকা প্রতি কাঠা সরকারি ট্যাক্স ধরা হয়েছে। অথবা চুক্তি মূল্যের ৮ শতাংশ। এটা আগে ৪ শতাংশ ছিল। আবার শর্ত আছে যেটা বেশি হবে সেটা দিতে হবে। তার মানে কমপক্ষে কাঠা প্রতি ২০ লাখ টাকা ট্যাক্স। ক্ষেত্রে বিশেষ এটা আরও বেশি দিতে হবে। এটা গেল জমির ক্ষেত্রে। ফ্ল্যাট এর ক্ষেত্রে আগে ১০-১২.৫ শতাংশ ট্যাক্স ছিল এটা এবার হবে ১৪-১৬.৫ শতাংশ।

আবাসন খাতে কি অবস্থা দাঁড়াবে চিন্তা করা যায়? আমরা আবাসন ব্যবসায়ীরা রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) থেকে এই ট্যাক্স ৭ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। দীর্ঘদিন ধরে গণমাধ্যম এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে দায়ী জানিয়ে আসছিলাম। একটা সময় ১৫ শতাংশ ট্যাক্স ছিল তখন জমি-ফ্ল্যাট বিক্রি অনেক হ্রাস পেয়েছিল। চার বছর আগে কিছুটা হ্রাস করার পর এই ট্যাক্স ছিল ১০-১২.৫ শতাংশ পর্যন্ত। নতুন করে ৪ শতাংশ ট্যাক্স বৃদ্ধিতে এই খাতে স্থবিরতা নেমে আসবে। অধিক ট্যাক্স কালেকশন করতে গিয়ে উল্টো ট্যাক্স কমবে বলে আমাদের শঙ্কা।

×