
ছবিঃ সংগৃহীত
সান ফ্রান্সিস্কো উপসাগরের মাঝখানে অবস্থিত ধূসর পাথরে ঘেরা ছোট্ট দ্বীপটি ‘আলকাট্রাজ’। দূর থেকে শান্ত-নিরিবিলি মনে হলেও, এই দ্বীপে লুকিয়ে আছে ভয়, রহস্য ও ইতিহাসের চাপা কান্না। ২০শ শতাব্দীতে এটি ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে কঠোর নিরাপত্তা-সম্বলিত ও দুর্ভেদ্য কারাগার, যার আরেক নাম ‘দ্য রক’।
চারপাশে হিমশীতল উত্তাল সমুদ্র আর নিখুঁত নিরাপত্তা ব্যবস্থা মিলিয়ে এই জেলখানা ছিল এক প্রকার মৃত্যুকূপ। ১৯০৯ সালে এর নির্মাণ শুরু হলেও ১৯৩৪ সালে এটি সর্বোচ্চ নিরাপত্তা কারাগার হিসেবে নতুন রূপে যাত্রা শুরু করে। উদ্দেশ্য ছিল— এমন একটি জায়গা তৈরি করা, যেখান থেকে পালানো অসম্ভব হবে।
এখানে বন্দি ছিলেন কুখ্যাত অপরাধীরা—মাফিয়া লিডার আল ক্যাপোন, সিরিয়াল কিলার রবার্ট স্ট্রাউড (বার্ডম্যান), মেশিনগান ক্যালি প্রমুখ। ধারণা করা হতো, আলকাট্রাজ থেকে পালানোর কথা ভাবাটাও ছিল বোকামি।
তবে ইতিহাসে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ঘটে ১৯৬২ সালের ১১ জুন। ফ্র্যাঙ্ক লি মরিস ও অ্যাংলিন ভ্রাতৃদ্বয়—জন ও ক্লারেন্স, ছয় মাস ধরে সূক্ষ্ম পরিকল্পনার মাধ্যমে পালানোর চেষ্টায় সফল হন। কারাগারের ভেন্টিলেটর দিয়ে পালিয়ে তারা ছাদে ওঠেন, সেখান থেকে পাইপ বেয়ে নিচে নেমে সমুদ্রের তীরে পৌঁছে যান। ৫০টিরও বেশি রেইনকোট জোড়া লাগিয়ে তৈরি করা ভেলায় তাঁরা উত্তাল সমুদ্র পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করেন।
তাদের সহযোগী এলেন ওয়েস্ট সেল থেকে বের হতে ব্যর্থ হন এবং পরিকল্পনা থেকে সরে দাঁড়ান। পরদিন সকালে এই ঘটনা ধরা পড়ে, শুরু হয় ব্যাপক তল্লাশি। যদিও এফবিআই দীর্ঘ ১৭ বছর তদন্ত চালিয়েও তাদের ভাগ্য নির্ধারণে ব্যর্থ হয়। ১৯৭৯ সালে বলা হয়, তারা সম্ভবত সমুদ্রেই ডুবে মারা গেছে।
তবে অনেকের বিশ্বাস, তারা সফলভাবেই পালিয়ে যান এবং গা ঢাকা দেন। এই ঘটনার এক বছর পরই ব্যয়বহুল রক্ষণাবেক্ষণের অজুহাতে ১৯৬৩ সালে কারাগারটি স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়।
বর্তমানে এটি একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। প্রতিবছর হাজারো মানুষ আসেন এই দ্বীপের ইতিহাস আর রহস্যের সাক্ষী হতে। বাস্তবতার এই গল্প যেন আজও প্রমাণ করে— সত্য কখনো কখনো কল্পনার চেয়েও বেশি রোমাঞ্চকর।
মারিয়া