ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৩ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১

ফুলেফেঁপে দ্বিগুণ হিমালয়ের ৬৭৬ হ্রদ, ফেটে যেতে পারে হিমবাহ

প্রকাশিত: ১৪:২৩, ২৮ এপ্রিল ২০২৪

ফুলেফেঁপে দ্বিগুণ হিমালয়ের ৬৭৬ হ্রদ, ফেটে যেতে পারে হিমবাহ

হিমালয়।

জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বারবার সতর্কবার্তা দেওয়া সত্ত্বেও টনক নড়েনি। ফি বছর উত্তরাখণ্ড, হিমাচলপ্রদেশে বন্যা লেগেই রয়েছে। তার উপর রয়েছে মেঘভাঙা বৃষ্টি, হড়পা বানের প্রকোপও। সেই আবহেই আরও উদ্বেগের খবর শোনাল ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ISRO. 

তারা জানিয়েছে, হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে হিমবাহ থেকে সৃষ্ট হ্রদের ব্যাপ্তি ঘটেছে ৮৭ শতাংশ। কিছু হ্রদের আয়তন দ্বিগুণ হয়ে গেছে গত কয়েক বছরে। কিছু হ্রদ আবার আকারে দেড় গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। একটি বা দুইটি নয়, সবমিলিয়ে ৬৭৬টি হ্রদের আয়তন বেড়ে গেছে।

যে ৬৭৬টি হ্রদের আয়তন বৃদ্ধির কথা জানিয়েছে ISRO, তার মধ্যে ১৩০টিই ভারতে অবস্থিত। এর মধ্যে আবার ৬৫টি হ্রদ সিন্ধু নদ অববাহিকা অঞ্চলে অবস্থিত, সাতটি গাঙ্গেয় অববাহিকা অঞ্চলে এবং ৫৮টি ব্রহ্মপুত্র অববাহিকা অঞ্চলের মধ্যে পড়ে। হ্রদগুলির ভৌগলিক অবস্থান ঘিরও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বিপজ্জনক ভাবে আয়ত বেড়েছে এমন ৩১৪টি হ্রদ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪০০০-৫০০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। ২৯৬টি হ্রদ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫০০০ মিটারের বেশি উচ্চতায় অবস্থিত। 

উদাহরণস্বরূপ হিমাচল প্রদেশের ঘেপাং ঘাট হিমবাহ হ্রদের  কথা উল্লেখ করেছে ISRO, যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪০৬৮ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। ১৯৮৯ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে এই হ্রদের বিস্তার বেড়েছে ১৭৮ শতাংশ। আগে ৩৬ হেক্টর জায়গা জুড়ে অবস্থান ছিল হ্রদটির, বর্তমানে ১০১ হেক্টর জায়গা জুড়ে বিরাজ করছে। 

গত তিন-চার দশক ধরে মহাকাশ থেকে কৃত্রিম উপগ্রহ যে সমস্ত ছবি তুলেছে এবং তথ্য সংগ্রহ করেছে, তার ভিত্তিতেই হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের বিপজ্জনক পরিস্থিতি নিয়ে এই রিপোর্ট প্রকাশ করেছে ISRO। ১৯৮৬ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে নদী অববাহিকায় কী কী পরিবর্তন ঘটেছে, তার বিশদ তথ্য রয়েছে রিপোর্টে। বলা হয়েছে, ২০১৬-'১৭ সালে ১০ হেক্টরের আয়তনের ২,৪৩১টি হ্রদকে চিহ্নিত করা হয়েছিল। কিন্তু ১৯৮৪ সার থেকে এর মধ্যে ৬৭৬টি হ্রদের আয়তন অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গিয়েছে। 

সৃষ্টির নিরিখে হিমবাহ হ্রদগুলিকে মূলত চারটি ভাগে ভাগ করা হয়, মোরেন-ড্যামড লেক বা গ্রাবরেখা থেকে সৃষ্ট হ্রদ। অধঃক্ষিপ্ত হিমবাহ অগ্রসর হওয়ার সময় তার সঙ্গে যে নুড়ি, পাথর, বালি, কাদা বাহিত হয়, হিমবাহ গলতে শুরু করলে, সেগুলি হিমবাহের প্রবাহপথের আশেপাশে সঞ্চিত হতে থাকে। যে রেখা বরাবর ওইসব পদার্থ জমা হয়, তাকে বলা হয় গ্রাবরেখা। এই গ্রাবরেখার মধ্যিখানে জল জমে তৈরি হয় মোরেন-ড্যামড লেক। 

আইস ড্যামড লেক বা বরফ জমে তৈরি হ্রদও রয়েছে হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে। নদী বা উপনদীর জলপ্রবাহে যখন হিমবাহ বাধা হয়ে দাঁড়ায়, তা থেকে সৃষ্টি হয় আইস ড্যামড লেকের। ভূমিক্ষয়ের ফলে সৃষ্ট হ্রদ এং হিমবাহ হ্রদও রয়েছে হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে, যা হিমবাহ গলে তৈরি হয়। বিপজ্জনক বাবে আয়তন বৃদ্ধি পাওয়া যে ৬৭৬টি হ্রদের উল্লেখ করেছে ISRO, তার মধ্যে ৩০৭টি মোরেন হ্রদ, ২৬৫টি ভূমিক্ষয়ের ফলে সৃষ্ট হ্রদ, আটটি বরফ গলা জল জমে তৈরি হ্রদ এবং অন্য়ান্য হ্রদ রয়েছে ৯৬টি। 

ISRO-র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিন্ধু অববাহিকায় অবস্থিত ঘেপাং হ্রদে দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তন লক্ষ্য করা গিয়েছে। ১৯৮৯-২০২২ সালের মধ্যে হ্রদটির আয়তন ৩৬.৪৯ হেক্টর থেকে বেড়ে ১০১.৩০ হেক্টর হয়েছে। অর্থাৎ গত তিন দশকে, প্রতি বছর ১.৯৬ হেক্টর করে আয়তন বেড়েছে হ্রদটির।

এমনিতেই হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল প্রাকৃতিক ভাবে অত্যন্ত স্পর্শকাতর। মনুষ্যঘটিত জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সেখানে পরিলক্ষিত হচ্ছে বিগত কয়েক বছর ধরেই। হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের হিমবাহ যে গলতে শুরু করেছে, তা উঠে এসেছে একাধিক গবেষণায়। হিমবাহ গলে সৃষ্টি হওয়া হ্রদ থেকেই নদীগুলিতে জল পৌঁছয়। কিন্তু বিপজ্জনক ভাবে হ্রদগুলির আয়তন বৃদ্ধি পাওয়া একেবারেই সুবিধাজনক নয়।

ফলে হিমবাহ ফেটে বন্যা নেমে আসতে পারে হুড়মুড়িয়ে, ফলাফল হতে পারে মারাত্মক। গত বছর অক্টোবরে ঠিক এই ঘটনাই ঘটেছিল সিকিমে। উত্তর-পশ্চিমে ১৭ হাজার ৭০০ পুট উচ্চতায় অবস্থিত সাউথ লোনাক হ্রদ ফেটে বন্যা নেমে এসেছিল, তাতে কমপক্ষে ৪০ জনের মৃত্যু হয়। নিখোঁজ হয়ে যান ৭৬ জন। জলের পরিমাণ অত্যধিক বেড়ে যাওয়াতেই সেবার বিস্ফোরণ ঘটেছিল।

ISRO জানিয়েছে, হিমবাহ গলে যেভাবে হ্রদগুলির আয়তন বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে বিস্ফোরণের সম্ভাবনা আরও বেড়ে যাচ্ছে। এতে সংলগ্ন এলাকার পরিকাঠামো, জনজীবন এবং পরিবেশের উপর মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে। লাগাতার নজরদারি চালানোর পাশাপাশি, ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে, পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যেতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ISRO.

সূত্র: ভারতীয় গণমাধ্যম।


 

 এসআর

×