
ছবি : সংগৃহীত
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) চলতি বছরের মধ্যেই রাজধানীর ২২০ কিলোমিটার খাল পুনরুদ্ধারের প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্পন্ন করতে চায়। ইতোমধ্যে ১০৮ কিলোমিটার খাল খননের কাজ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ আজাজ।
তিনি জানান, বাকি ১১২ কিলোমিটার খাল খননের কাজও এই বছরের মধ্যেই সম্পন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। খালগুলোর পানিপ্রবাহ নিশ্চিত করাই এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য, যাতে বর্ষাকালে জলাবদ্ধতা সমস্যা দূর করা যায়।
মোহাম্মদ আজাজ বলেন, ক্যাডাস্ট্রাল সার্ভে খতিয়ান অনুযায়ী, একসময় ঢাকায় ৩৪০ কিলোমিটার খাল ছিল। তবে অবৈধভাবে রাস্তা ও ওয়াকওয়ে নির্মাণের কারণে প্রায় ১২০ কিমি খাল বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বাকি খালগুলোর অবস্থাও বিপজ্জনক। “গত তিন মাসে আমরা ১০৮ কিলোমিটার খালের পানিপ্রবাহ ফেরাতে সক্ষম হয়েছি,” জানান তিনি।
এই ১০৮ কিলোমিটারের মধ্যে প্রায় ৪০ কিলোমিটার অংশ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন।
মোহাম্মদপুর এলাকায় হাইকার খালের জমি উদ্ধার করতে বহুতল ভবনসহ বেশ কিছু অবৈধ স্থাপনা ভেঙে ফেলা হয়েছে। একই ধরনের উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে রূপনগর খাল, প্যারিস খাল, ইব্রাহিমপুর খাল, কালশি খাল ও ইসিবি চত্বর সংলগ্ন পুরনো খালেও।
ডিএনসিসি প্রশাসক বলেন, “খাল দখল ও অবৈধ নির্মাণের যুগ শেষ। যতো বড়ই হোক, অবৈধ স্থাপনা সম্পূর্ণভাবে উচ্ছেদ করা হবে।”
রাজধানীর ১৭টি স্থানে দুই দিনের বেশি পানি জমে থাকে বলে জানান তিনি। এর মধ্যে ১০টি স্থানে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন হবে এবং ৭-৮টি এলাকায় কিছুটা সমস্যা থাকতে পারে।
দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের জন্য খালের উভয় পাড়ে আরসিসি কাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে যাতে পানিপ্রবাহ অব্যাহত থাকে ও টেকসই পুনরুদ্ধার সম্ভব হয়।
ডিএনসিসি প্রশাসক জানান, ১০৮ কিলোমিটার খাল খননে ৫ কোটি টাকারও কম খরচ হয়েছে। “যদি অন্য কেউ করত, বাজেট আরও অনেক বড় হতো। আমরা দেখিয়েছি, সৎ উদ্যোগ থাকলে অল্প খরচেও কার্যকর কাজ করা যায়।”
খাল রক্ষায় ডিএনসিসি খালের দুই পাশে ব্যাপক বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এটি বন বিভাগের সহায়তায় আগামী ১ জুন ২০২৫ থেকে শুরু হবে। ভবিষ্যতে খাল দখল ও ময়লা ফেলার প্রবণতা রোধ করতেই এই পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
এ প্রকল্পে প্রায় ৩০টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, স্থানীয় মানুষ ও পরিবেশবাদী গ্রুপ অংশ নিচ্ছে। ডিএনসিসি খাবার ও অন্যান্য সহায়তা দিয়ে তাদের পাশে থাকবে।
ডিএনসিসি প্রশাসক মনে করেন, অন্তর্বর্তী সরকার বড় ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নে সময় ও অর্থ সংকটে থাকলেও ভবিষ্যৎ সরকারকে এ কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। স্থায়ী ও টেকসই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে খালের পাশে প্রাচীর, নির্দিষ্ট হাঁটার পথ ও অন্যান্য নাগরিক কাঠামো গড়ে তুলতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে আবার দখলের শিকার না হয়।
আঁখি