
ছবিঃ সংগৃহীত
সিলেট সীমান্তে সম্প্রতি উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির মধ্যে জেলা প্রশাসন এবং সীমান্ত রক্ষী বাহিনী—বিজিবি, সক্রিয় ও প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করছে। সিলেট সেক্টরের ৩০২ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিজিবি সদস্যরা দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা টহল চালিয়ে যাচ্ছেন।
সিলেটের তিনটি সেক্টর—২৮, ৪৮ ও ১৯ নম্বর প্যাটালিয়ন, বিশেষ করে চকিগঞ্জ ব্যাটালিয়নের আওতাধীন এলাকাগুলোতে বিজিবির টহল এবং নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। সেক্টর কমান্ডাররা জানিয়েছেন, সীমান্তে গোয়েন্দা নজরদারি এবং নজরদারি টাওয়ারে রাত্রিকালীন পর্যবেক্ষণ আরও জোরদার করা হয়েছে যেন কোনওভাবেই ভারত থেকে অবৈধভাবে কেউ বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে।
সম্প্রতি ভারতের আসাম রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা ঘোষণা দেন যে, তাদের দেশে অবস্থানরত অবৈধ নাগরিক ও রোহিঙ্গাদের কোনও যাচাই-বাছাই ছাড়াই বাংলাদেশে পুশব্যাক করা হবে। এই ঘোষণার পরপরই সিলেট জেলা প্রশাসন সতর্ক হয়ে ওঠে এবং সীমান্ত এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়।
সাম্প্রতিক এক ঘটনায়, সিলেটের কানাইঘাট সীমান্ত দিয়ে বিএসএফ ১৬ জন নারী ও পুরুষকে বাংলাদেশে পুশব্যাক করে। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গেছে, তারা ২-৩ বছর আগে ভারতে গিয়েছিলেন এবং ভারতীয় বিভিন্ন পরিচয়পত্র তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে। তারা রিফিউজি ক্যাম্পেও অবস্থান করছিলেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতের এই পুশব্যাক নীতি মানবাধিকার লঙ্ঘনের সামিল। কারণ, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, কোনো দেশে অবস্থানরত অবৈধ নাগরিকদের যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ফেরত পাঠাতে হয়। কিন্তু ভারত সেটি মানছে না, বরং যাচাই-বাছাই ছাড়াই নাগরিকদের সীমান্তে পুশব্যাক করছে, যা একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি।
ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্র, বিশেষ করে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-এর একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, একটি ক্যাম্পে ৭৫০ জনেরও বেশি লোককে আটক করে রাখা হয়েছে, যাদের অনুপ্রবেশকারী হিসেবে বাংলাদেশে পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এরইমধ্যে কুড়িগ্রাম ও খাগড়াছড়ি সীমান্ত দিয়ে বেশ কিছু পুশব্যাকের ঘটনা ঘটেছে।
এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে বিশ্লেষক ও সাধারণ মানুষের একটাই দাবি—দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা হোক। উচ্চপর্যায়ে সরকারিভাবে বৈঠক ও আলোচনার মাধ্যমে এই সংকট নিরসন না হলে, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত যে কোনো সময় উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে।
মারিয়া