ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৭ মে ২০২৫, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

শশীলজের আঙিনায় পৌরাণিক ফুল

আসত তারা কুঞ্জবনে... চিরসবুজ বৃক্ষ অশোক

শেখ আব্দুল আওয়াল

প্রকাশিত: ২৩:২২, ১৬ মে ২০২৫

আসত তারা কুঞ্জবনে... চিরসবুজ বৃক্ষ অশোক

.

কবি গুরু রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর অশোককে নিয়ে লিখেছেন, ‘আসত তারা কুঞ্জবনে চৈত্র জ্যোৎস্না রাতে, অশোক শাখা উঠত ফুটে প্রিয়ার পদাঘাতে’। অশোক মাঝারি আকৃতির চিরসবুজ বৃক্ষ। ব্যস্ত শহর ময়মনসিংহে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের বিপরীত দিকে মহারাজা শশীকান্ত আচার্যের স্মৃতিবিজড়িত শশীলজ। বর্তমানে এটি এখন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীন একটি জাদুঘর। এর আঙিনার ভিতর উত্তর-পূর্ব পাশে কয়েকটি অশোক গাছে ফুল ফুটে শোভা ছড়াচ্ছে। রাস্তায় চলার পথে পথচারীরা এই ফুল দেখে একবার হলেও  থমকে দাঁড়ায়। কবিতা-সাহিত্যে অশোকবন্দনা অনেক রয়েছে।
ময়মনসিংহ মুমিনুন্নেছা সরকারি মহিলা কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান চয়ন বিকাশ ভদ্র জনকণ্ঠকে বলেন, অশোক মাঝারি আকৃতির চিরসবুজ বৃক্ষ। এটি এই অঞ্চলের নিজস্ব বৃক্ষ। অশোকগাছের বৈজ্ঞানিক নাম Saraca asoca, এটি Fabaceae গোত্রের Caesalpinioideae উপগোত্রের বৃক্ষ। উদ্ভিদের অন্যান্য নাম হেমাপুষ্প, অঞ্জনপ্রিয়া, মধুপুষ্প।
এই বৃক্ষ পঁচিশ থেকে ত্রিশ মিটার উঁচু হয়। পাতা যৌগিক। একটি পাতায় দশটি পত্রক থাকে, পাতার রং গাঢ় সবুজ। পাতা লম্বা, চওড়া ও বর্শা ফলকাকৃতির। কচি পাতা নরম, ঝুলন্ত ও তামাটে। বসন্তকাল ফুল ফোটার সময়। আষাঢ়ের শুরু পর্যন্ত  গাছে ফুল থাকে। ফুল ছোট, মঞ্জরিতে অনেক ফুল জন্মায়, পুংকেশর দীর্ঘ।
অশোকের ছায়াতেই গৌতম বুদ্ধের জন্ম। সীতাকে হরণের পর রাবণ অশোক কাননেই রেখেছিল। গৌতম বুদ্ধ জন্মেছিলেন লুম্বিনী কাননে অশোকগাছের নিচে। ঢাকার রমনা পার্কে, বোটানিক্যাল গার্ডেনে অশোকগাছ রয়েছে। ময়মনসিংহে শশীলজের সামনে এবং আনন্দমোহন কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের বাগানে,  কিশোরগঞ্জে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনের বাগানে অশোক বৃক্ষ রয়েছে। হিন্দু এবং বৌদ্ধদের কাছে এই ফুল অত্যন্ত পবিত্র। কামদেবের পঞ্চশরের অন্যতম শর এই ফুলে সজ্জিত।
এই বৃক্ষের ডালপালা ঘন পল্লবময়। কান্ডের গা থেকেও মঞ্জরি দন্ড উৎপন্ন হতে পারে এবং তা থেকে ফুল উৎপন্ন হয়। ফুলের রং কমলা থেকে লাল। ফল শিমজাতীয়, মাংসল ও লাল। ফলে বেশ কিছু খয়েরি রঙের বীজ থাকে। অশোকের ভেষজ গুণও রয়েছে। শুকনো ফুল রক্ত আমাশয়ে এবং বীজ মূত্রনালির রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
ফুল ফুটলে মিষ্টি গন্ধে চারপাশ ভরে যায়। শারদীয় দুর্গাপূজায় অশোকের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। অশোকের ডাল ছাড়া দুর্গাপূজার নবপত্রিকাকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দেওয়া যায় না। চৈত্র মাসের শুক্ল ষষ্ঠীতে মায়েরা পুত্রের মঙ্গল কামনা করে অশোক ফুল দিয়ে অশোক ষষ্ঠী পূজা করেন। আইইউসিএন অনুসারে এই বৃক্ষটি শঙ্কাকুল হিসেবে চিহ্নিত।

প্যানেল

×