
আপনার কি কখনো মনে হয় আপনি আপনার সঙ্গীর ওপর বিরক্ত? কর্মস্থল থেকে বাসায় ফেরার চিন্তায় কি বিরক্তি লাগে? ডেট নাইট তো দূরের কথা, যৌনতা নিয়েও কি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন? ভবিষ্যৎ চিন্তা করলেই কি মনে হয়, ‘সব একই থাকবে’?
এই অনুভূতিগুলোই হতে পারে সম্পর্ক ক্লান্তির লক্ষণ।
বেশিরভাগ থেরাপিস্টের মতে, তারা এমন রোগীর সঙ্গেই বেশি কাজ করেন যারা সম্পর্ক ক্লান্তিতে ভুগছেন বা সেই পথে হাঁটছেন—চাপ, হতাশা, বিরক্তি আর উদাসীনতায় জর্জরিত। আমি নিজে একজন দম্পতি থেরাপিস্ট হিসেবে দেখছি, অনেক বেশি মানুষ এই মানসিক অবসাদে পড়ছেন।
তারা একে অপরের প্রতি বিরক্ত, ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনো আশাবাদী চিন্তা নেই, একঘেয়েমি আর মানসিক দূরত্ব বেড়েই চলেছে।
সম্পর্ক ক্লান্তি আসলে কী?
মনোবিদ র্যাচেল নিডলের ভাষায়, “সম্পর্ক ক্লান্তি হলো এমন এক মানসিক অবসাদ, যা তখন তৈরি হয় যখন সম্পর্ক রক্ষা করার চেয়ে সম্পর্ক রক্ষায় প্রয়োজনীয় সহায়তা কমে যায়।”
এই ক্লান্তি যৌন জীবনেও প্রভাব ফেলে। নিউ ইয়র্কের থেরাপিস্ট ইভা ডিলন বলেন, “যখন কেউ মানসিকভাবে ক্লান্ত থাকেন, তখন আবেগ কমে যায়, যৌন ইচ্ছা হ্রাস পায়, ঘনিষ্ঠতাও হারিয়ে যায়।”
কী কারণে সম্পর্ক ক্লান্তি হয়?
-
দায়িত্বের অসম বণ্টন
-
কাজের চাপ ও ভারসাম্যহীনতা
-
পরিবারগত দ্বন্দ্ব
-
সম্পর্কের একঘেয়েমি
-
আবেগগত দূরত্ব
সাধারণত একটি বড় ঘটনা নয়, বরং ছোট ছোট অবহেলা, চাহিদার অপূরণ, দীর্ঘস্থায়ী টানাপোড়েনই ধীরে ধীরে সম্পর্ক ক্লান্তির দিকে ঠেলে দেয়।
সমাধানের পথ
১. বিষয়টি স্বীকার করুন
ইভন ক্রিস্টিন ফুলব্রাইট বলেন, “ভুল ধরিয়ে না দিয়ে বলুন, ‘আমি লক্ষ্য করছি...’ কিংবা ‘আমার মনে হচ্ছে...’ এরপর সঙ্গীর অনুভূতি জানুন।”
২. নিজের দায় স্বীকার করুন
অনেকে মনে করেন, সঙ্গী বদলালেই সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু মনোবিদ এরিক রোজেনব্লুম বলেন, “আপনারও তো সম্পর্কের এই পরিস্থিতি তৈরিতে অংশ রয়েছে।”
আপনি নিজে কেমন আচরণ করেছেন, সেটিও ভাবুন। নিউ ইয়র্কের সেক্স থেরাপিস্ট রেবেকা সোকল বলেন, “সঙ্গীর দোষ খুঁজে লিখুন, তারপর নিজেও কীভাবে সেই পরিস্থিতি তৈরি করেছেন, সেটাও লিখুন।”
৩. কথাবার্তা চালিয়ে যান
একটি নিয়মিত ‘চেক-ইন টাইম’ নির্ধারণ করুন। কথা বলার সময় একে অপরের অনুভূতি শুনুন, ছোট ছোট পরিবর্তন আনার চেষ্টা করুন।
৪. একসাথে নতুন কিছু করুন
একসাথে নতুন রান্না, হাইকিং, মুভি দেখা কিংবা কোনো গেম খেলুন। একঘেয়েমি কাটাতে এটা কার্যকর।
৫. নিজেকেও সময় দিন
নিজের যত্ন নেওয়া মানে সম্পর্কের যত্ন নেওয়া। ব্যায়াম, ঘুম, ধ্যান, বই পড়া, হবি—সবই আপনাকে চাঙা রাখতে পারে।
৬. পেশাদার সহায়তা নিন
কোনো সংকটে পড়ার আগেই থেরাপিস্টের শরণাপন্ন হওয়া ভালো। অনেক সময় নিরপেক্ষ কারো সহায়তায় সমস্যার সমাধান সহজ হয়।
শেষ কথা:
সম্পর্ক ক্লান্তি এড়িয়ে যেতে হলে সচেতন থাকতে হবে, নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হবে এবং নিজেদের যত্ন নিতে হবে। সময়মতো ব্যবস্থা নিলে সম্পর্ক আবারও ফিরে পেতে পারে তার উষ্ণতা ও অন্তরঙ্গতা।
Jahan