
ছবি: সংগৃহীত
স্পেনের আতাপুয়েরকা পাহাড়ে অর্ধলক্ষ বছরের বেশি সময় ধরে মাটির নিচে চাপা পড়ে ছিল এক কিশোরীর খুলি। আজ সেই কিশোরী "বেনজামিনা" বৈজ্ঞানিক সমাজকে বাধ্য করছে মানব সমাজে সহানুভূতির ইতিহাস পুনর্বিবেচনা করতে।
মাদ্রিদের কমপ্লুতেন্সে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ববিদ হুয়ান লুইস আর্সুয়াগার নেতৃত্বে পরিচালিত সিমা দে লোস হুয়েসোস খননে মেলে ‘ক্রেনিয়াম ১৪’—একজন হোমো হেইডেলবার্গেনসিস কিশোরীর প্রায় সম্পূর্ণ মাথার খুলি, বয়স আনুমানিক ১০ থেকে ১২ বছর। সিটি স্ক্যান অনুযায়ী, তার মস্তিষ্কের আকার প্রায় ১,২০০ সেমি³, আধুনিক সময়ের প্রাক-কিশোরীদের তুলনায় কিছুটা ছোট।
খুলির বাম দিকের হাড় জন্মের আগেই একত্রে জোড়া লেগে গিয়েছিল—a বিরল রোগ, যার নাম ল্যাম্বডয়েড সিনোস্টোসিস। এই রোগে খুলির পেছনের অংশে হাড়ের স্বাভাবিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়, ফলে অন্য পাশে চাপ দিয়ে বিকৃতি তৈরি করে।
বর্তমান চিকিৎসা পদ্ধতিতে শিশুর এক বছর বয়সের মধ্যেই অপারেশনের মাধ্যমে হাড় খোলা হয়, নাহলে মাথাব্যথা, ভারসাম্যহীনতা ও মানসিক বিলম্ব দেখা দিতে পারে।
বেনজামিনা কখনোই এমন চিকিৎসা পায়নি। তবুও সে বেঁচে ছিল কমপক্ষে এক দশক, দুধের দাঁত পড়ে গিয়ে স্থায়ী দাঁত উঠেছিল। তার জীবিত থাকা বোঝায়, আশেপাশের মানুষ তাকে খাওয়ানো, সুরক্ষা এবং চলাফেরায় সাহায্য করেছিল।
খননকারীরা বলেন, “বেনজামিনা মানবজাতির ইতিহাসে সামাজিক সহানুভূতির প্রাচীনতম প্রমাণ।” হান্টার-গ্যাদারার সমাজে একজন প্রতিবন্ধী শিশুকে বড় করে তোলা শুধু সহানুভূতি নয়, বরং সম্পূর্ণ গোষ্ঠীর সক্রিয় অংশগ্রহণের ইঙ্গিত দেয়।
স্পেনেরই ভ্যালেন্সিয়া অঞ্চলে নেয়ান্ডারথাল শিশুদের দেহাবশেষেও একই ধরনের নজির মেলে—যেখানে কানে গুরুতর ত্রুটিসম্পন্ন একটি শিশু ছয় বছর পর্যন্ত বেঁচে ছিল শুধুমাত্র গোষ্ঠীর সহায়তায়।
বেনজামিনা নামটি এসেছে হিব্রু ভাষা থেকে, অর্থ "সবচেয়ে ছোট ও প্রিয় সন্তান"। গবেষকরা শুধু তার বয়স নয়, গোষ্ঠীর মমতা ও ভালোবাসার প্রতীক হিসেবেই এ নাম বেছে নিয়েছেন। তার খুলি বিশ্বের প্রাচীনতম ল্যাম্বডয়েড সিনোস্টোসিস রোগের প্রমাণ হিসেবে চিকিৎসা বিজ্ঞানের রেকর্ডে অনন্য স্থান অর্জন করেছে।
এই ধরনের রোগ কতটা পুরনো এবং কীভাবে জেনেটিক ফ্যাক্টরগুলো বিবর্তিত হয়েছে—তা গবেষণায় সাহায্য করছে বেনজামিনার আবিষ্কার।
সেভিল বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্টিন-ওলাল্লা বলেন, “আমি আমার থার্মোডাইনামিক্স ক্লাসে এই উদাহরণ দেখিয়েছি। আমি মনে করি, এরকম মানবিক গল্প বিজ্ঞানচর্চায় আরও জনপ্রিয় হবে।”
মুমু ২