
ছবি: সংগৃহীত
নতুন প্রযুক্তির নিদর্শন থেকে শুরু করে প্রাচীন ঐতিহ্যের নিঃসন্দেহ সৌন্দর্য। এগুলোই পৃথিবীর সবচেয়ে বিস্ময়কর স্থাপনাগুলোর তালিকা। পৃথিবী যেমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর, তেমনি মানুষের সৃষ্টিও কম বিস্ময়কর নয়। ইতিহাস জুড়ে মানুষ স্থাপত্যকলা ও নকশার মাধ্যমে অসাধারণ সব ভবন তৈরি করেছে, যেগুলো শুধু চোখে নয়, মনে গেঁথে যায়। এই তালিকায় এমন কিছু ভবনের উল্লেখ করা হয়েছে, যেগুলো প্রযুক্তির নান্দনিক উদাহরণ, কিছু অতিপ্রাচীন, কিছু নতুন কিন্তু চিন্তাধারায় যুগান্তকারী।
১. তাজ মহল, ভারত: নির্মাণকাল: ১৬৩২-১৬৫৩। মুঘল সম্রাট শাহজাহান তাঁর প্রিয় স্ত্রী মুমতাজ মহলের স্মৃতিতে এই অপূর্ব সমাধি নির্মাণ করেন। ২২ বছর ধরে গড়ে ওঠা এই সাদা মার্বেলের ভবনকে ইংরেজ কবি স্যার এডউইন আর্নল্ড বলেছিলেন, “এটি কেবল ভবন নয়, এটি প্রেমে গাঁথা এক সম্রাটের জীবন্ত ভালোবাসা।”
২. হলগ্রিমসকিরক্যা, আইসল্যান্ড: নির্মাণকাল: ১৯৪৫-১৯৮৬। রেইক্যাভিক শহরের সবচেয়ে বড় চার্চ। এর ডিজাইন দেখে মনে হয় রকেট, কিন্তু এটি প্রকৃতপক্ষে আইসল্যান্ডের প্রাকৃতিক ভূপ্রকৃতি থেকে অনুপ্রাণিত।
৩. গিজার পিরামিড, মিশর: নির্মাণকাল: ২৫৫০-২৪৯০ খ্রিস্টপূর্ব। প্রাচীন মিশরের রাজাদের সমাধি হিসেবে নির্মিত এই পিরামিডগুলো আজও সময়ের কাঁটায় টিকে আছে।
৪. ফলিংওয়াটার, যুক্তরাষ্ট্র: নির্মাণকাল: ১৯৩৬-১৯৩৯।প্রকৃতির মাঝে ঝরনার ওপর তৈরি এই ঘরটি তৈরি করেন ফ্র্যাঙ্ক লয়েড রাইট। ঘরের ভেতর-বাইরের সীমা মুছে যায় এটির নকশায়।
৫. আদ-দায়র, পেট্রা, জর্ডান: নির্মাণকাল: প্রথম খ্রিস্টীয় শতাব্দী।‘রোজ সিটি’ নামে পরিচিত পেট্রার সবচেয়ে বিখ্যাত এবং উচ্চতম পাথরের স্থাপনা এটি।
৬. ফঁদাসিওঁ লুই ভুঁইতঁ, ফ্রান্স: নির্মাণকাল: ২০০৭-২০১৪। ফ্র্যাঙ্ক গেহরির ডিজাইন করা ভবনটি দেখতে যেন এক ভবিষ্যতের জাহাজ, যা কাঁচের ১২টি পাল দ্বারা সাজানো।
৭. ট্রিনিটি কলেজ লাইব্রেরি, আয়ারল্যান্ড: নির্মাণকাল: ১৭১২-১৭৩২। প্রায় ৬০ লক্ষ বইয়ের সংগ্রহশালায় লম্বা হলঘর এবং গথিক পরিবেশে তৈরি এক বিশাল গ্রন্থাগার।
৮. গ্রেট মসজিদ অব জেনে, মালি: নির্মাণকাল: ১৩শ শতাব্দী (পুনঃনির্মাণ ১৯০৭)। বিশ্বের সবচেয়ে বড় মাটির তৈরি ভবন। প্রতিবছর এটি পুনরায় প্লাস্টার করার উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
৯. নাসির ওল মলক মসজিদ, ইরান: নির্মাণকাল: ১৮৭৬-১৮৮৮।‘পিঙ্ক মসজিদ’ নামে পরিচিত এই মসজিদ সূর্যোদয়ে কাঁচের জানালা দিয়ে সৃষ্ট রঙিন আলোয় অনন্য।
১০. দ্য টুইস্ট, নরওয়ে: নির্মাণকাল: ২০১৬-২০১৯। একটি শিল্পগ্যালারি এবং সেতু একসাথে—৯০ ডিগ্রিতে ঘূর্ণায়মান কাঠামো যা নদীর দুই তীরকে যুক্ত করেছে।
১১. সাগরাদা ফ্যামিলিয়া, স্পেন: নির্মাণকাল: ১৮৮২-বর্তমান (সম্ভাব্য শেষ ২০২৬): আন্তোনি গাউদির এই জীবনের কাজ এখনো চলছে। গথিক এবং আর্ট নুভো ধারার মিশ্রণ।
১২. জাতীয় সংসদ ভবন, বাংলাদেশ: নির্মাণকাল: ১৯৬১-১৯৮২: লুই কান ডিজাইন করেছিলেন এই আধুনিক স্থাপত্য, যা আলো ও ছায়ার চমৎকার ব্যঞ্জনা সৃষ্টি করে।
১৩. প্যানথিয়ন, ইতালি: নির্মাণকাল: ১১৮-১২৮ খ্রিস্টাব্দ: বিশ্বের সবচেয়ে বড় অরিনফোর্সড কংক্রিট গম্বুজ এবং প্রতি বছর ২১ এপ্রিল এর ‘ওকুলাস’ দিয়ে সূর্যালোক কেন্দ্র চত্বরে পড়ে।
১৪. পালমেনহাউস, অস্ট্রিয়া: নির্মাণকাল: ১৮৮০-১৮৮২। ভিয়েনার শোনব্রুন প্রাসাদের ভেতরে অবস্থিত গ্লাস-স্টিল গ্রীনহাউজ, তিনটি আলাদা জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ করে।
১৫. বাত চাং সিরামিক কমিউনিটি হাউজ, ভিয়েতনাম: নির্মাণকাল: ২০২১। মৃৎশিল্পের জন্য বিখ্যাত গ্রামের নতুন ভবন যা কুমোর চাকার নকশা থেকে অনুপ্রাণিত।
১৬. এলড্রিজ স্ট্রিট মিউজিয়াম, যুক্তরাষ্ট্র: নির্মাণকাল: ১৮৮৭। নিউইয়র্কের অভিবাসীদের দ্বারা নির্মিত প্রথম সিনাগগ, এখন একটি মিউজিয়াম।
১৭. সান্তুয়ারিও দে লাস লাজাস, কলোম্বিয়া: নির্মাণকাল: ১৯১৬-১৯৪৯। ৪০ মিটার উচ্চ সেতুর ওপর নির্মিত এই নব্য-গথিক চার্চ দর্শনার্থীদের পুণ্যভ্রমণে টানে।
১৮. মিউজিয়াম অব ওল্ড অ্যান্ড নিউ আর্ট (MONA), অস্ট্রেলিয়া: নির্মাণকাল: ২০১১। হোবার্টের কাছে একটি পাথুরে পাহাড়ে খোদাই করা এই আধুনিক মিউজিয়াম আলো-আঁধারির অভিনব নিদর্শন।
১৯. ম্যাগি'স সেন্টার, যুক্তরাজ্য: নির্মাণকাল: ২০২০। ক্যান্সার রোগীদের জন্য গঠিত সহানুভূতিশীল, প্রাকৃতিক উপাদানে গঠিত সান্ত্বনামূলক এক স্থাপনা।
২০. বাহাই টেম্পল অব সাউথ আমেরিকা, চিলি: নির্মাণকাল: ২০০৭-২০১৬। নয়টি কাচের পর্দা দিয়ে গঠিত এই ধর্মীয় স্থাপনাটি একতা ও খোলামেলা প্রার্থনার প্রতীক।
২১. ফুতুনা চ্যাপেল, নিউজিল্যান্ড: নির্মাণকাল: ১৯৫৯-১৯৬১। ওয়েলিংটনের উপশহরে অবস্থিত এই ক্ষুদ্র চার্চটি আলো ও কাঠের সমন্বয়ে এক অদ্ভুত আধ্যাত্মিক পরিবেশ তৈরি করে।
২২. কোমেরা লিডারশিপ সেন্টার, রুয়ান্ডা: নির্মাণকাল: ২০২২। স্থানীয় ‘ইমিগঙ্গো’ শিল্পের নকশায় অনুপ্রাণিত এই ভবনটি কমিউনিটি শিক্ষা ও ঐতিহ্যকে ধারণ করে।
২৩. জাতীয় হলোকাস্ট স্মৃতিস্তম্ভ, কানাডা: নির্মাণকাল: ২০১৭। এই স্মৃতিস্তম্ভটি ছয়টি ত্রিভুজ দিয়ে গঠিত, যা ডেভিডের তারা প্রতীক করে এবং অতীত ও ভবিষ্যতের দিকে ইঙ্গিত করে।
২৪. এনরিয়াকু-জি, জাপান: নির্মাণকাল: ৭৮৮: কিয়োটোর পাহাড়ে অবস্থিত এই বৌদ্ধ মঠ, ইতিহাসে সমৃদ্ধ ও আধ্যাত্মিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
শহীদ