
কিছু বিড়াল চুপচাপ, আবার কিছু বিড়াল সারাক্ষণ মিউ মিউ করে মনোযোগ চায়। এই পার্থক্যের কারণ লুকিয়ে থাকতে পারে তাদের জিনগত গঠনে—এমনটাই জানাচ্ছে জাপানের কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক এক গবেষণা।
যারা একাধিক বিড়াল পোষেন, তারা জানেন প্রতিটি বিড়ালের স্বভাব কতটা ভিন্ন হতে পারে। কেউ হয়তো খাবারের জন্য আওয়াজ করে, কোলের ওপর এসে জোরে প্যাঁচায়, আবার কেউ নিরবদর্শক হয়ে দূর থেকে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করে।
গবেষণায় কী পাওয়া গেছে?
ওয়াইল্ডলাইফ গবেষক ইউমে ওকামোতো এবং তাঁর সহকর্মীরা জাপানজুড়ে বিড়াল মালিকদের কাছ থেকে ফেলাইন বিহেভিয়ারাল অ্যাসেসমেন্ট অ্যান্ড রিসার্চ প্রশ্নপত্র পূরণ করান এবং বিড়ালের গাল থেকে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করেন।
তারা বিশেষভাবে লক্ষ্য করেন অ্যান্ড্রোজেন রিসেপ্টর (AR) নামে একটি জিনকে, যা এক্স ক্রোমোজোমে থাকে এবং টেস্টোস্টেরনের মতো হরমোনের প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। এই জিনে একটি নির্দিষ্ট ডিএনএ অংশ বারবার পুনরাবৃত্ত হয়, যার দৈর্ঘ্যের উপর নির্ভর করে জিন কতটা সক্রিয় হবে।
গবেষণায় দেখা গেছে—
-
ছোট আকারের AR জিন যাদের ছিল, তারা সাধারণত বেশি পুর করে এবং পুরুষ বিড়ালগুলো বেশি মুখে আওয়াজ করে (যেমন খাবারের জন্য মিউ মিউ করা)।
-
একই জিনবিশিষ্ট স্ত্রী বিড়ালরা আবার অপরিচিতদের প্রতি বেশি আগ্রাসী ছিল।
-
আর দীর্ঘ AR জিনধারী বিড়ালরা তুলনামূলকভাবে নীরব এবং কম প্রতিক্রিয়াশীল ছিল। এই ধরণের জিন বংশবদ্ধ পোষা বিড়ালদের মধ্যে বেশি পাওয়া যায়, যাদের সাধারণত শান্ত স্বভাবের জন্যই নির্বাচিত করা হয়।
জিন এবং পরিবেশ—উভয়ের প্রভাব
বিড়ালের গলার আওয়াজ বা পোষ মানা—এই সব কিছু যে কেবল গৃহপালনের ফল, তা নয়। অনেক সময় জিনগতভাবে আগ্রাসী বৈশিষ্ট্যও টিকে থাকে, বিশেষ করে যেসব বিড়াল চাপপূর্ণ বা প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশে বসবাস করে।
এটা মানুষের আশেপাশে থাকা সিগাল বা গাঙচিলের মতো পাখিদের সাথেও মেলে। যুক্তরাজ্যে শহরের গাঙচিলেরা গ্রামের তুলনায় বেশি সাহসী ও আগ্রাসী হয়। শহরের খাবার ও সম্পদের জন্য প্রতিযোগিতা তাদেরকে এমন করেছে। তাই মানুষ ও প্রাণীর সহাবস্থান সবসময়ই প্রাণীদের বেশি “ভদ্র” করে না—অনেক সময় তা আরও “চটপটে” করে তোলে।
এই গবেষণা বলছে, বিড়ালের স্বভাবে জিন ও পরিবেশ উভয়ই কাজ করে। ছোট AR জিন যেসব বিড়ালের আছে, তারা হয়তো মানুষের মনোযোগ পেতে বেশি কৌশলী ও চটপটে, কিন্তু সেই একই বৈশিষ্ট্য কখনো আগ্রাসী আচরণে রূপ নিতে পারে।
অবশ্য প্রাকৃতিকভাবে এমন স্বভাবগত ভিন্নতা থাকা প্রজাতির টিকে থাকার জন্য জরুরি। অর্থাৎ, বিড়ালের জন্য একটাই আদর্শ স্বভাব নেই, বরং বিভিন্ন ঘরোয়া পরিবেশে টিকে থাকার জন্য নানা ধরণের বৈশিষ্ট্য দরকার।
Jahan