ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৯ জুন ২০২৫, ১৬ আষাঢ় ১৪৩২

দেশ-বিদেশের স্বাদ এক বাগানে—চট্টগ্রামের তৈয়ব হয়ে উঠেছেন গাছের বন্ধু

মো. দেলোয়ার হোসেন, চন্দনাইশ, চট্টগ্রাম

প্রকাশিত: ২১:১৮, ২৮ জুন ২০২৫

দেশ-বিদেশের স্বাদ এক বাগানে—চট্টগ্রামের তৈয়ব হয়ে উঠেছেন গাছের বন্ধু

চন্দনাইশের বৃক্ষ প্রেমিক তৈয়ব তার বাগানে ১২ মাসে উৎপাদিত সফা আমের পরিচর্যা করছেন।

চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার বরমা কেশুয়া এলাকায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. আলী আজাদীর ভাতিজা আবু তৈয়বের শখের বাগানে এক গাছের ৫ শাখায় ৫ রকমের আমের ফলন হয়। সে সাথে দুষ্প্রাপ্য নবাব সিরাজদৌল্লার টেবিলের আম কোহিতুর শোভা পাচ্ছে তার বাগানে। এ দুষ্প্রাপ্য আমসহ ৫০ প্রজাতির দেশি-বিদেশি ফলের চাষ হচ্ছে এ বাগানে। 

সরেজমিনে গিয়ে বাগান মালিক মো. আবু তৈয়বের সাথে কথা বলে জানা যায়, তিনি দীর্ঘ ১৯ বছর প্রবাসে থেকে ২০১১ সালে দেশে ফিরে শখের বাগান শুরু করেন। ৬৫ শতক জমি ক্রয় করে ১৫ বছর ধরে এ বাগানে বিভিন্ন প্রজাতির আম, কাঁঠাল, কলা, মালটা, সরিপা, লিচু, লেবু, কমলা, জাম্বুরা, নারিকেল, পেয়ারা চাষ করে যাচ্ছেন।

তিনি বলেন, "বাগানে আলফ্রান্সো, সূর্য ডিম, নামডকমাই, কিউজায়, অকরং, মহাচনক, থাইওয়ান রেডম্যাঙ্গো, গ্রীনম্যাঙ্গো, চোকানান, বেনানা, কল্যাণ ভোগ পালমার, থ্রিটেস্ট, কিংঅব, সাকাপাত, চোষা ইন্ডিয়ান, চোষা পাকিস্তান, পুসা সোরাইয়া, রানি পছন্দ, জর্দালু, তোতাপুরী, আনোয়ার রাতাউল, দশেরী, হাইব্রীড-১০, বেগমফুলী, কোহিতুর, চিয়াংমাই, শীতাভোগ, কোশরী, ইমাম পছন্দ, নুরজাহান (প্রতিটি আমের ওজন ৪-৫ কেজি), কেনচিনটন প্রাইড, থাই কাচা মিটা, বি.এম-৭ বা বেগুনি আম, কেশর, ম্যাংগোমিন, সদাবাহার, সেভেন ষ্টেপ আর-২, ই-২, কাটিমন, মল্লিকা, গৌরমতি, হাড়িভাঙ্গা, বারি-৪,আম্রপালি জাতের আমের চাষ হচ্ছে এ বাগানে।" 

থাইল্যান্ডের রেড আই রবিকে বাংলাদেশে চ্যাংমাই থাই-১ আম বলা হয়ে থাকে। এ বাগানে নুর জাহান ও মাংগোমিন প্রজাতির আম প্রতিটি ২ থেকে ৫ কেজি ওজনের হয় বলে জানালেন তিনি।

এ বাগানে ১২ মাস আমের ফলন হয় এমন গাছও রয়েছে। যে গাছে গুলোতে জানুয়ারি মাসে ফল আসলে ও এখনো পর্যন্ত এসব ফল পরিপূর্ণ পরিপক্ব হয়নি। তার মতে ৭ থেকে ৮ মাস পর তথা জুলাইয়ের পর থেকে এসব আম পাকা শুরু হবে। যখন দেশে প্রচুর পরিমাণে আম পাওয়া যাবে না।

এ বাগানে সবচেয়ে মূল্যবান আম হিসেবে কোহিতুর আমকে তিনি দুলর্ভযোগ্য আম হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেছেন, "এ আমটি নবাব সিরাজদৌল্লার মহলে খাওয়ানো হত। তারা নবাব পরিবারের মধ্যে এ আম উপহার হিসেবে দিতেন। এ আমের বৈশিষ্ট্য হল, আমটি পাকার পর বাঁশের চিলা দিয়ে কাটতে হয়, ধাতব পদার্থ আমে লাগলে আমের প্রকৃত স্বাদ হারিয়ে যায়। তাছাড়া আমটি দিনে বা রাতে যে সময় পরিপক্ব হবে তখনই গাছ থেকে ছিড়ে নিতে হবে। আমটি পরিপক্ব হওয়ার সাথে সাথে পড়ে যায়, আর নিচে পড়ে গেলে আমের প্রকৃত স্বাদ হারিয়ে যায়।"

তিনি বলেন, টেলিভিশনে চ্যানেল আইয়ের স্বত্বাধিকারী শাইখ সিরাজের কৃষি বিষয়ক অনুষ্ঠান দেখে দেখে শাখা কলম শিখে তিনি নিজে এখন তার বাগানে একটি গাছে ৪ থেকে ১২ রকমের আমের ফলন ফলাচ্ছেন। তার এ বাগানে নাগপুরি, দার্জিলিং, পাকিস্তানি-১,২, ভুটানি, মিশরীয়, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, চাইনা, ডেকোফন, চাতকের কমলা, ফিকিনে অরেঞ্জ, বারি-১, বাউ-৩, মাল্টা তারাকো , মোরো, চেনগুনিলো, হিয়ারলোম নেভেল মালটা, কাগজি এলাচ, সীড লেন্স লেবু, হলুদ লেবু, কাফের লাইন, দেশী লেবু, বল সন্দুরী কুল, সীড লেন্স কুল, কাশ্মিরি কুল, এসএনবি, ইসরাইলী, চায়না, সিলেটি, সিয়াম জাম্বুরা, ভাগুয়া অস্ট্রেলিয়ার আনার, বারোমাসি পিংক কাঁঠাল, ভিয়েতনামী লাল কাঁঠাল, চায়না কাঁঠাল, চেম্পাডাক কাঁঠাল, দেশী নারিকেল, কেরালা, ভিয়েতনামের কাট জাতের নারিকেল, দেশী লিচু, চায়না-৩, চায়না-২, হুম্পেরিয়াল, এফোরার, এম্পেরার, ক্লেমন্টিন, নেপালি, গোল্ড নাগেত, ভ্যান্সিয়া, বেবি, আমেয়া-৮ কমলা, পাকিস্তানি মাল্টা,  জিনাইন, সাগর, চাঁপা, বাংলা কলা, থাই মাধুরী, কাঞ্চননগরের বাতাসা পেয়ারা, আলু বোখরা, সফেদা, বিভিন্ন প্রজাতের শরিফা, তিংক এনোনিয়া শরিফা, রোনানিয়া শরিফা, বিলেতি গাফ, কদবেল, আমড়া, কামরাঙা, ফার্সিমন, লটকন, কারিপাতা, আলু বোখড়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফলের বাগান করে যাচ্ছেন এ প্রবাসী।

তাকে সার্বিকভাবে দীর্ঘ ৫ বছর ধরে সহযোগিতা দিয়ে গেছেন কৃষি অধিদপ্তরের সহকারী কৃষি কর্মকর্তা পীযূষ রায় চৌধুরী। নিজের প্রচেষ্টায় তৈয়ব দীর্ঘসময় ধরে বাগান করতে গিয়ে গাছের সাথে নিজে মিশে গেছেন। তার বাগানের গাছে কোন সময় কোন সার, পানি, রোদের তাপ দরকার তিনি তা বুঝতে পারেন। এক কথায় তিনি গাছের বন্ধু হিসেবে বৃক্ষ প্রেমিক বলে এলাকাবাসী।

তার বাগানের উৎপাদিত ফল তিনি বিক্রি না করে স্বজনদের মাঝে বিলি করে থাকেন। তার একটি গাছে এক মৌসুমে ৪-৫ হাজার টাকার আম উৎপাদন হয় বলে জানান।

তিনি বলেন, মানুষ গাছ রোপণ করে ২০ বছর পর ২০/৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করায় আশায়। অথচ ফলজ গাছ রোপণ করলে ১ বছর পর থেকে হাজার হাজার টাকার ফল বিক্রি করা যাবে।

Mily

×