
অনেক বাবা-মায়ের জন্য সন্তানকে বড় হয়ে ওঠার বিষয়ে ‘টক’ দেওয়া মানেই যেন অস্বস্তিকর এক কাজ। তবে সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে, তারা সম্ভবত বিষয়টি ভুলভাবে ব্যাখ্যা করছেন। এই ‘টক’ আসলে যৌনতা নয়, বরং পিউবার্টি বা কৈশোরে প্রবেশ নিয়ে হওয়া উচিত — এবং সেটা আরও আগে হওয়া প্রয়োজন।
সময় থাকতেই শুরু করা দরকার
মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের সি. এস. mott চিলড্রেনস হাসপাতালের এক জরিপ অনুযায়ী, মাত্র ৩৬% বাবা-মা মনে করেন ১০ বছরের আগে সন্তানকে পিউবার্টি সম্পর্কে জানানো উচিত। অথচ এখন অনেক শিশুর ক্ষেত্রেই পিউবার্টি আগেই শুরু হচ্ছে।
জরিপে দেখা গেছে, ৪১% বাবা-মা শুধু তখনই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন, যখন সন্তান নিজের থেকেই প্রশ্ন তোলে।
‘সেক্স টক’ নয়, শরীর ও মনের পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা
গবেষক সারাহ ক্লার্ক বলছেন, ৭, ৮ বা ৯ বছর বয়সে শিশুদের যৌনতা নয়, বরং তাদের শরীর ও আবেগে যেসব পরিবর্তন আসছে বা আসবে, সেগুলো সম্পর্কে জানানো জরুরি।
“যখন আমরা জানি কী আসতে চলেছে, তখন সেটি মোকাবিলা করাও সহজ হয়,” বলেন ক্লার্ক।
শিশুর আগেই আপনি শুরু করুন কথা বলা
অনেক বাবা-মা সন্তান থেকে প্রশ্ন এলে তবেই আলোচনা শুরু করেন, কিন্তু এতে শিশুদের মনে উদ্বেগ বা বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে। বিশেষ করে যদি তারা দেখে যে বাবা-মা তাদের প্রস্তুত করেননি। আগেভাগে ধাপে ধাপে বয়স অনুযায়ী তথ্য দিলে শিশুরা বুঝতে পারবে যে এসব পরিবর্তন স্বাভাবিক।
ক্লার্ক বলেন, অনেক বাবা-মা মনে করেন তারা সন্তানের শারীরিক পরিবর্তন শনাক্ত করতে পারছেন, কিন্তু প্রাথমিক লক্ষণ যেমন শরীরে লোম গজানো বা কণ্ঠস্বর পরিবর্তন অনেক সময়ই চোখে পড়ে না।
যদি বাবা-মা না বলেন, বলবে সামাজিক মাধ্যম
আজকের শিশুরা নানা তথ্যের মুখোমুখি হয় খুব অল্প বয়সেই—বন্ধু, মিডিয়া বা সামাজিক মাধ্যম থেকে। সেখানে ভুল তথ্যের প্রভাব পড়তে পারে। তাই আগে থেকেই বাবা-মাকে কথোপকথনের মাধ্যমে এগিয়ে আসা উচিত।
নিজেরা পাননি শিক্ষা, তাই থেমে যান
জরিপে অংশগ্রহণকারী মাত্র ৩১% বাবা-মা জানিয়েছেন, তারা ছোটবেলায় নিজেদের বাবা-মায়ের কাছ থেকে যথাযথ পিউবার্টি শিক্ষা পেয়েছিলেন। ফলে আজকের অনেক বাবা-মা কীভাবে কথা শুরু করবেন, সেটাই জানেন না।
কিন্তু তাদের সব কিছু জানাতে হবে না — শুধু আলোচনার দ্বার খুলে দিলেই যথেষ্ট।
কীভাবে কথা শুরু করবেন?
-
নিঃশব্দ, একান্ত পরিবেশে শুরু করুন — হাঁটতে হাঁটতে, গাড়িতে বা ছোট ভাইবোন ঘুমিয়ে গেলে
-
তথ্য দিন সহজভাবে, অস্বস্তি ঝেড়ে ফেলুন
-
সন্তানকে জানান তারা একা না — এটা সবাইকেই পেরোতে হয়
-
প্রশ্নের সুযোগ দিন, পরে আবার কথা চালিয়ে যান
প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকেই শুরু করুন
দেহের বৃদ্ধি, ঘামের গন্ধ, আবেগের পরিবর্তন — সবই প্রাথমিক পর্যায়ে শুরু হয়। তাই মাঝারি স্কুলের আগেই এই আলোচনা শুরু হওয়া উচিত। সিনেমার দৃশ্য, ক্লাসে শেখা তথ্য বা নিজের অভিজ্ঞতাও হতে পারে কথোপকথনের উপযুক্ত শুরু।
তৈরি হতে দিন মানসিকভাবে
চাইল্ড সাইকিয়াট্রিস্ট ড. নেহা চৌধুরী বলেন, “যদি আপনি আগে থেকেই কথা বলেন, শিশুরা বুঝবে শরীরের এসব পরিবর্তন স্বাভাবিক। তারা মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে পারবে এবং আবেগ সামলানোর উপায়ও শিখতে পারবে।”
একবার নয়, চলমান আলোচনা হোক
এই আলোচনা একবারের নয়, বরং চলমান হওয়া উচিত। যেন শিশু জানে তারা মা-বাবার সহায়তা ও গাইডেন্স পাবে — এমন একটা পরিবেশ তৈরি করাই মূল লক্ষ্য।
“আপনার উত্তর না জানলেও সমস্যা নেই,” বলেন ক্লার্ক। “আপনার সন্তান জানুক, আপনি পাশে আছেন — এবং একসঙ্গে শেখা যায়।”
Jahan