ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৮ মে ২০২৫, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

পাবনার যমুনা চরাঞ্চলের একমাত্র ভরসা ঘোড়ার গাড়ি

হৃদয় হোসাইন,পাবনা

প্রকাশিত: ০৯:১০, ১৮ মে ২০২৫

পাবনার যমুনা চরাঞ্চলের একমাত্র ভরসা ঘোড়ার গাড়ি

ছবি: জনকন্ঠ

আগের দিনে মানুষ পায়ে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছাতো। এখনও দীর্ঘ বালুচর পায়ে হেঁটে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে যেতে হয়। পাবনার বেড়া উপজেলা যমুনার চরাঞ্চলে শুকনো মৌসুমে মানুষের একমাত্র ভরসা ঘোড়ার গাড়ি। চর গুলোতে মানুষের চলাচলসহ নিত্যপণ্য কৃষিপণ্য পরিবহনে অন্যকোনো মাধ্যম না থাকায় ঘোড়ার গাড়ি হচ্ছে বিকল্প মাধ্যম।

প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে রাস্তাঘাট না থাকায় নদীর হাটুপানি ও বালু চরে পণ্য পরিবহন, অসুস্থ রোগীকে বহন এবং যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয় ঘোড়ার গাড়িকে। জানা গেছে,উপজেলার হাটুরিয়া-নাকালিয়া,নতুনভারেঙ্গা,পুরানভারেঙ্গা ইউনিয়ন যমুনা নদী দ্বারা বেষ্টিত। শুকনো মৌসুমে চরনাকালিয়া,চরসাঁড়াশী,চরপেঁচাকোলা,যমুনারচর,নাগদাহ,কৈল্যানপুরসহ অসংখ্য চরে কখনও হাটুপানি ভেঙে ও বালুচরে মানুষের একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম হচ্ছে ঘোড়ার গাড়ি। চরাঞ্চলে যান্ত্রিক যানবাহন না থাকায় আগের দিনের মানুষ প্রচণ্ড গরমে উত্তপ্ত বালুতে পায়ে হেটে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিত এবং নিজেদের উৎপাদিত পণ্যগুলো মাথায় অথবা লাঠিতে করে ঘাড়ে নিয়ে বহন করত। কিন্তু ঘোড়ার গাড়ি চালু হওয়ায় পর চরাঞ্চলের মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় মালামাল পরিবহনসহ ব্যবসায়ীদের পণ্য আনা-নেওয়ার জন্য একমাত্র মাধ্যম হিসেবে গাড়িটি ব্যাপক ভূমিকা রাখছে।

বর্ষার সময়ে যমুনা নদী তার চিরোচেনা রূপ-যৌবন ফিরে পায়,পানিতে তলিয়ে যায় প্রত্যন্ত চরের নিম্নাঞ্চল। এসময় চরবাসীর একমাত্র যাতায়াতের মাধ্যম নৌকা। তবে শুকনো মৌসুমে যাতায়াতের একমাত্র প্রধান মাধ্যম ঘোড়ার গাড়ি। আর প্রত্যন্ত এসব চর এলাকার অনেক মানুষ ঘোড়ার গাড়ি দিয়েই তাদের জীবিকা নির্বাহ করছেন। এপার থেকে ওপারে দিনে নিয়ম করে কয়েকটি নৌকা চলাচল করে। স্থানীয়রা জানান,যমুনা চরাঞ্চালে শুকনো মৌসুমে নদীতে পানি কমে যায় এবং বিশাল এলাকাজুড়ে চর জেগে উঠে। চরে যাতায়াতের জন্য যান্ত্রিক গাড়ি,ভ্যান,রিকশা,অটো, মাইক্রো চলাচল একেবারেই অসম্ভব। তাই এই এলাকার যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে ঘোড়ার গাড়ির ব্যাপক ব্যবহার হয়।

চরাঞ্চলের রাস্তাঘাট না থাকায় এখানে যান্ত্রিক গাড়ি না চলায় চরবাসীকে পড়তে হয় বিড়ম্বনায়। এসব সমস্যাকে উপেক্ষা করে তাদের নিত্যদিনের কাজ পরিচালনার জন্য তারা ব্যবহার করেন অযান্ত্রিক ঘোড়ার গাড়ি। এই গাড়ি কৃষকদের পণ্য পরিবহন, অসুস্থ মানুষদের উপজেলা স্বস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার জন্য নৌকা ঘাটে পৌঁছে দেওয়া, চরাঞ্চলের উৎপাদিত পণ্য বিক্রির জন্য এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া এবং চরবাসীর অভ্যন্তরীণ যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে।

উপজেলার কৈল্যানপুর চরাঞ্চলের এক ঘোড়াগাড়ি চালক বলেন,'যমুনা চরাঞ্চলে সবসময় বিভিন্ন ধরনের চাষাবাদ হয়ে থাকে। বর্তমান আলু,বাদাম চাষ হয়েছে। বিভিন্ন চরাঞ্চল থেকে ঘোড়ার গাড়ি করে বস্তা এবং মানুষ ঘাট পাড়ে পৌঁছে দেই। তাতে প্রতিদিন আয় হয় আটশত থেকে এক হাজার টাকা। ঘোড়ার খাদ্যে প্রতিদিন খরচ হয় ২৫০ টাকা। বাকি টাকা দিয়ে সংসার ভালোই চলে।

ঘোড়ার গাড়ি আরেক চালক জানান,যমুনা চরে শুকনো মৌসুমে - মাস চলে ঘোড়ার গাড়ি দিয়ে পবিহনের কাজ।নদীতে পানি এলে বন্ধ হয়ে যায় ঘোড়ার গাড়ি। তখন থেকে তারা আবার অপেক্ষায় থাকেন কবে নদী শুকিয়ে যাবে। তিনি আরও জানান, যাতায়াতের জন্য একটা ব্রিজ নির্মাণ করা হলে আমাদের পণ্য বহনে অনেক সাশ্রয় হতো।

উপজেলার যমুনা পাড়ের এক বাসিন্দা জানান, এখন যমুনা নদীতে পানি অনেক কম। চর ভেসে উঠেছে যেখানে বালু আর বালু। এই চরাঞ্চলে কৃষি পণ্য বহন করার জন্য একমাত্র উপায় ঘোড়ার গাড়ি। নদীতে পানি এসে যখন নদী জীবন ফিরে পায় তখন নৌকা দিয়ে পারাপার করা হয়। বিভিন্ন চরাঞ্চল থেকে কৃষিপণ্য ঘোড়ার গাড়িতে নিয়ে এপার থেকে ওপারে নিয়ে আসা যাওয়া করছেন। উপজেলা সদরের মানুষের জীবন যাপন আর আমাদের জীবনে যোগাযোগ ব্যাবস্থা অনেক ভিন্ন। জরুরী প্রয়োজন বা অসুস্থ হলে অনুভব হয় নদীপাড়ের জীবন কতটা বৈচিত্র্যময়। চরাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সরকারের বৃহত্তর কর্মসূচী গ্রহণ করা জরুরি।

মুমু

×