ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৮ মে ২০২৫, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

মস্তিষ্ক ছাড়াই টিকে থাকা সাতটি প্রাণী

প্রকাশিত: ০১:১৭, ১৮ মে ২০২৫

মস্তিষ্ক ছাড়াই টিকে থাকা সাতটি প্রাণী

ছবিঃ সংগৃহীত

এটা স্বাভাবিক এবং যুক্তিসঙ্গত ধারণা যে, পৃথিবীতে চলাফেরা করা, সাঁতার কাটা বা হামাগুড়ি দেওয়া প্রতিটি প্রাণীরই একটি মস্তিষ্ক থাকা উচিত। মস্তিষ্কই আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে, বিপদের প্রতিক্রিয়া দিতে, পরিবেশ বোঝাতে এবং বেঁচে থাকতে সাহায্য করে।

কিন্তু এখানে রয়েছে এক চমকপ্রদ তথ্য: সব প্রাণীর মস্তিষ্ক থাকে না।আসলে, কিছু প্রাণী কোটি কোটি বছর ধরে কোনো ধরনের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র ছাড়াই বেঁচে আছে এবং বেশ ভালোভাবেই টিকে আছে। এরা মস্তিষ্কের পরিবর্তে সহজতর কিছু ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করে—যেমন স্নায়ু জাল (nerve net) বা বিশেষায়িত কোষ যা পরিবেশের প্রতি প্রতিক্রিয়া জানাতে সহায়তা করে। যদিও এসব প্রতিক্রিয়া মানুষের মানদণ্ডে প্রাথমিক এবং সরল, তবুও তারা কার্যকর।

এখানে এমন সাতটি প্রাণীর কথা বলা হলো যারা বুদ্ধিমত্তা ও টিকে থাকার ধারনাকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে:

জেলিফিশ 
জেলিফিশ পৃথিবীর মহাসাগরে ৫০ কোটিরও বেশি বছর ধরে বিচরণ করছে, যা এদেরকে প্রাচীনতম বহুঅঙ্গবিশিষ্ট প্রাণীদের একটিতে পরিণত করেছে। তবে এত দীর্ঘকাল টিকে থাকার পরও, এদের কোনো মস্তিষ্ক নেই। এর পরিবর্তে, এরা একটি স্নায়ু জালের মাধ্যমে পরিবেশের পরিবর্তন—যেমন আলো বা কাছাকাছি শিকার—অনুভব করতে পারে। এই ব্যবস্থাই তাদের চলাফেরা করতে ও খাদ্য ধরতে সাহায্য করে। কিছু জেলিফিশ প্রজাতি এমনকি মস্তিষ্ক ছাড়াও শিখতে পারে—যা বিজ্ঞানীদের বিস্মিত করে।

সী স্টার বা তারামাছ 
তারামাছ কোনো মাছ নয়, এবং এর কোনো মস্তিষ্কও নেই। তারা একটি স্নায়ু বৃত্ত এবং প্রতিটি বাহু বরাবর চলা স্নায়ুর মাধ্যমে কাজ করে। একটি বাহু যখন খাদ্য স্পর্শ করে বা বিপদ অনুভব করে, তখন সে বার্তা স্নায়ু বৃত্তের মাধ্যমে অন্যান্য বাহুতে পৌঁছে যায়।

সী আর্চিন 
স্পাইকি এবং বিপজ্জনক চেহারার এই প্রাণীগুলোর কোনো মস্তিষ্ক বা প্রচলিত স্নায়ুতন্ত্র নেই। তবে এদের মুখের চারপাশে একটি স্নায়ু বৃত্ত আছে, যা তাদের চলাফেরা, খাদ্য গ্রহণ এবং আত্মরক্ষা করতে সাহায্য করে। আশ্চর্যের বিষয়, কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, এদের পুরো শরীর আলো ও ছায়ার প্রতি প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে—যেন এটি একটি দেহ-চোখ।

কোরাল 
কোরাল দেখতে যেমন পাথর বা গাছের মতো, আসলে তারা একটি মস্তিষ্কহীন প্রাণী। প্রতিটি কোরাল অসংখ্য ছোট পলিপের সমষ্টি, যারা প্ল্যাঙ্কটন ও ক্ষুদ্র মাছ ধরতে শুঁড় ব্যবহার করে। একটি সাধারণ স্নায়ু জালের মাধ্যমে এরা প্রতিক্রিয়া জানায় এবং বিরক্ত হলে নিজেদের কঙ্কালের মধ্যে লুকিয়ে যেতে পারে।

সী স্পঞ্জ
সী স্পঞ্জ পৃথিবীর অন্যতম সহজতর গঠনের বহুকোষী প্রাণী। এদের কোনো মস্তিষ্ক, স্নায়ু, পেশি বা অঙ্গ থাকে না। এরা জলপ্রবাহের মাধ্যমে খাবার ও অক্সিজেন গ্রহণ করে এবং বর্জ্য বের করে দেয়। বিশেষ কোষ খাবার ধরতে এবং অন্য কোষগুলো পুষ্টি বিতরণে সাহায্য করে।

সী কিউকাম্বার 
শাকসবজির মতো দেখতে হলেও সী কিউকাম্বার এক প্রকার মস্তিষ্কহীন ইকাইনোডার্ম। এরা স্নায়ু বৃত্ত এবং বাহু বরাবর চলা স্নায়ুর সাহায্যে চলাফেরা ও খাবার গ্রহণ করে। বিপদের সময় এরা নিজেদের অভ্যন্তরীণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বের করে শত্রুকে ধোঁকা দেয়, পরে আবার তা গড়ে তোলে।

পর্তুগিজ ম্যান ও' ওয়ার
অনেকে একে জেলিফিশ মনে করে, তবে এটি আসলে একটি সিফোনোফোর—একাধিক বিশেষায়িত জীবের একটি উপনিবেশ যারা একসাথে কাজ করে। এর কোনো মস্তিষ্ক নেই। প্রতিটি অংশ খাওয়া, আত্মরক্ষা বা প্রজননের মতো আলাদা কাজ করে এবং স্নায়ু কোষের মাধ্যমে একে অপরের সাথে যোগাযোগ করে। এর বিষাক্ত শুঁড় শিকার ধরতে ও শত্রুকে আঘাত করতে সক্ষম।

এই প্রাণীগুলোর অস্তিত্ব প্রমাণ করে যে, প্রকৃতি প্রায়শই আমাদের প্রচলিত ধারণার বাইরে গিয়ে বিস্ময় সৃষ্টি করে। মস্তিষ্ক ছাড়াও টিকে থাকার এবং খাপ খাইয়ে নেওয়ার অসাধারণ উপায় উদ্ভাবন করেছে এরা এবং তাতে প্রমাণিত হয়, বুদ্ধিমত্তা সব সময়ই কেন্দ্রীভূত নয়।

নোভা

×