ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৭ মে ২০২৫, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

২০২৫ সালের পাঁচ সুখী শহরের তালিকা

প্রকাশিত: ১২:২০, ১৭ মে ২০২৫

২০২৫ সালের পাঁচ সুখী শহরের তালিকা

ছবি : সংগৃহীত

বন্ধুত্ব, পরিবার ও সম্প্রদায়ের অনুভব আমাদের সুখী করতে পারে ঠিকই, তবে আমাদের বাসযোগ্য পরিবেশও জীবনের গুণগত মানে বড় প্রভাব ফেলে।

ঠিক কী কারণে একটি শহর "সুখী শহর" হয়ে ওঠে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করতে সম্প্রতি ‘ইনস্টিটিউট ফর দ্য কোয়ালিটি অব লাইফ’ প্রকাশ করেছে ২০২৫ সালের হ্যাপি সিটি ইনডেক্স। এই সূচকে ৬টি মূল বিভাগে ৮২টি সূচকের ভিত্তিতে শহরগুলোর সুখের মান বিচার করা হয়েছে— নাগরিক, শাসনব্যবস্থা, পরিবেশ, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য ও গতি (মোবিলিটি)।

গবেষণাটি বলছে, "সবচেয়ে সুখী শহর" বলতে একক কোনো শহরকে চিহ্নিত করা সম্ভব নয়। বরং ৩১টি শহরকে "গোল্ড সিটি" তালিকায় রাখা হয়েছে, যারা সব সূচকে ব্যতিক্রমধর্মী ফল করেছে। এই তালিকার শীর্ষ পাঁচটি শহরের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে বোঝার চেষ্টা করা হয়েছে— কী নীতিমালা ও সুবিধা সত্যিকার অর্থে একটি শহরকে সুখী করে তোলে। 

১. কোপেনহেগেন, ডেনমার্ক

সবুজ পরিবেশ, সুগঠিত বাইক লেন, প্রাণবন্ত সাংস্কৃতিক আয়োজন ও নির্ভরযোগ্য গণপরিবহন এই শহরকে করেছে সবচেয়ে সুখী।

পরিবেশ বিভাগে এটি দারুণ নম্বর পেয়েছে— সবুজ এলাকা, টেকসই জীবনধারা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এখানে বিশ্বমানের। অর্থনীতি বিভাগেও ভালো স্কোর করেছে— উচ্চ গড় আয়, উদ্ভাবনীতা ও আন্তর্জাতিক কোম্পানির উপস্থিতি এর বড় কারণ। এছাড়া নাগরিক অংশগ্রহণ ও সাংস্কৃতিক সম্পদ (পাঠাগার, জাদুঘর, ইভেন্ট) সম্পর্কিত সূচকগুলোতেও এটি এগিয়ে।

এখানকার বাসিন্দা মারি-আনে দাউরা বলেন, “এখানে শহর সবসময় নানা ফ্রি ইভেন্ট আয়োজন করে, যেমন— Copenhagen Light Festival, Human Library, Copenhagen Cooking, Distortion Street Parties। প্রতিটি সপ্তাহেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা থাকে।”

অ্যারন ওয়ার্থেইমার বলেন, হ্যান্স ক্রিশ্চিয়ান অ্যান্ডারসন ব্রিজ সাইকেল করে পার হলে পুরো শহর ও খালগুলোর সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। আর দাউরার মতে, Reffen স্ট্রিট ফুড মার্কেটই কোপেনহেগেনের আসল প্রতিচ্ছবি।

২. জুরিখ, সুইজারল্যান্ড

দ্বিতীয় happiest city হিসেবে উঠে এসেছে সুইজারল্যান্ডের বৃহত্তম শহর জুরিখ। নাগরিক সুযোগ-সুবিধা ও সরকারের ডিজিটালসেবা ব্যবস্থায় এটি উচ্চ নম্বর পেয়েছে।

এখানের বাসিন্দা রাকেল গনকালভেস বলেন— “আমি দুই সন্তানের মা। জুরিখ পরিবার পালনের জন্য আদর্শ। শিশুদের একাই স্কুলে যাওয়া নিরাপদ, পাবলিক ট্রান্সপোর্ট সময়মতো চলে, আর শহর অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন ও সংগঠিত।”

নিরাপত্তা, সময়ানুগ ট্রান্সপোর্ট, পরিচ্ছন্নতা ও সরকারের কার্যকর সেবা শহরবাসীর জীবনকে করেছে চাপমুক্ত।

৩. সিঙ্গাপুর

এশিয়ার অন্যতম সুখী দেশ সিঙ্গাপুর, এবার শহর হিসেবেও উচ্চ স্থান পেয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগে এটি দারুণ স্কোর করেছে— জনস্বাস্থ্য কর্মসূচি, টিকাদান ও স্বাস্থ্য খরচে সুরক্ষা এখানে ভালোভাবে নিশ্চিত করা হয়েছে।

শাসনব্যবস্থায় এটি শক্তিশালী, যা জীবনযাত্রার ব্যয় হ্রাসে সহায়তা করেছে। বাসিন্দা হুই-বুন ইয়ার বলেন, “সিঙ্গাপুরে ঘরবাড়ির মালিকানার সুযোগ ও হাউজিং মূল্যবৃদ্ধি মানুষকে শুধু আশ্রয়ই নয়, ভবিষ্যতের আর্থিক নিরাপত্তাও দেয়।”

৪. আরহুস, ডেনমার্ক

আরহুস, ডেনমার্কের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর, পরিচিত ‘বিশ্বের সবচেয়ে ছোট বড় শহর’ নামে। নাগরিক সেবা, পরিবেশ ও স্বাস্থ্য বিভাগে এই শহর খুব ভালো নম্বর পেয়েছে।

বাসিন্দা কার্লা পোর্নেলোস বলেন, “এই শহরে আনন্দ জড়ানো থাকে দৈনন্দিন জীবনের নকশায়— বিলাসিতা নয়, বরং সচেতন পরিকল্পনায়।

৫. অ্যান্টওয়ার্প , বেলজিয়াম

বিশ্বের সুখী শহরগুলোর তালিকায় এবার জায়গা করে নিয়েছে বেলজিয়ামের অ্যান্টওয়ার্প। দেশটির রাজধানী ব্রাসেলসের তুলনায় ছোট হলেও নাগরিক সুবিধা, পরিবেশবান্ধব নীতিমালা ও সুশাসনের কারণে শহরটি এগিয়ে রয়েছে ‘হ্যাপি সিটি ইনডেক্স ২০২৫’-এ।

অ্যান্টওয়ার্পের নাগরিকরা শহরটির নির্ভরযোগ্য গণপরিবহন, সাইকেলবান্ধব অবকাঠামো এবং ছোট্ট আয়তনের কারণে যাতায়াতের সহজতাকে অন্যতম সুবিধা হিসেবে দেখেন।

স্থানীয় বাসিন্দা গ্রেস কার্টার বলেন, “২০-এর দশকে আমি এখানে আসি শুধু ভাল খাবার আর সুন্দর স্থাপত্যের আশায়। কিন্তু আমি থেকে গেছি এই শহরের সহজ, শান্ত জীবনধারার জন্য।”

তিনি আরও জানান, শহরটি কাজের মানুষদের জন্য নানা সুবিধা, সামাজিক বাসস্থান ও পরিবেশবান্ধব নীতিতে বিনিয়োগ করে, যা জীবনকে সহজ এবং আনন্দময় করে তোলে। গ্রিন স্পেস ও সংস্কৃতিচর্চায় অ্যান্টওয়ার্পের গুরুত্ব তাকে বিস্মিত করেছে। “নদীর ধারে পার্ক থেকে শুরু করে বিশ্বমানের জাদুঘর—এই শহর সত্যিই মানুষকে জীবন উপভোগ করার সুযোগ দেয়,” বলেন গ্রেস।

 

সা/ই

×