
কিছুদিন আগে দেশে মৎস্য সপ্তাহ উদযাপন করা হয়েছে। এবারের প্রতিপাদ্য ছিল, ‘বেশি বেশি মাছ চাষ করি, বেকারত্ব দূর করি।’ এ সপ্তাহটি ছিল নানা আনুষ্ঠানিকতায় পরিপূর্ণ। আলোচনা ও প্রচারণায় সমৃদ্ধ। তথ্য-উপাত্তে ভরপুর। সাধারণ মানুষের মধ্যে মৎস্য চাষের গুরুত্ব তুলে ধরা এবং তাদের উদ্বুদ্ধ করাই ছিল সকল আনুষ্ঠানিকতার মূল উদ্দেশ্য। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রদান করা হয় জাতীয় মৎস্য পদক-২০২১। এবার ৯ ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানকে স্বর্ণপদক এবং ১২ ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয় রৌপ্যপদক। মৎস্য খাতের উন্নয়নে অংশীজনের অনন্য অবদানের জন্য প্রদান করা হয় এই পুরস্কার। তাতে এ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অংশীজনেরা অনুপ্রাণিত ও উৎসাহিত হবে এবং এ খাতের কাক্সিক্ষত উন্নয়ন হবে ত্বরান্বিত।
বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। বিশাল জলসম্পদে সমৃদ্ধ। দেশজুড়ে রয়েছে অসংখ্য নদী-নালা, খাল-বিল। হাওড়-বাঁওড় ও পুকুর। দক্ষিণে অন্তহীন সমুদ্র বঙ্গোপসাগর। মৎস্য উৎপাদনের সুবিস্তৃত ক্ষেত্র পড়ে আছে দেশের সর্বত্র। রয়েছে অসংখ্য প্রজাতির মাছ। এসব সুস্বাদু ও সহজপাচ্য মাছ তাই বাঙালীদের কাছে অতি প্রিয়। মাছ আর ভাত ছাড়া বাঙালীর খাবার মনপূত হয় না। তৃপ্তি মেটে না। বাঙালীর খাদ্যে মাছ এবং ভাতেরই প্রাধান্য। অনাদিকাল থেকে মাছ এবং ভাতের ওপর বাঙালীদের নির্ভরতার কারণে এ দেশের মানুষের পরিচয় হয়েছে ‘মাছে ভাতে বাঙালী।’ জাতীয় অর্থনীতিতে মৎস্য খাত এক গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করছে। স্থ‚ল জাতীয় উৎপাদনে এ খাতের অবদান ৩.৫২ শতাংশ। কৃষি খাতের সার্বিক উৎপাদনে এ খাতের শরিকানা ২৬ শতাংশ। জাতীয় রফতানি আয়ে মৎস্য খাতের শরিকানা ১.২ ভাগ। আমাদের নিত্যদিনের খাদ্য তালিকায় প্রাণিজ আমিষের শতকরা ৫০ ভাগেরও বেশি সরবরাহ আসে মাছ থেকে। এ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ডে প্রায় ১৪ লাখ নারীসহ ১ কোটি ৯৫ লাখ বা ১২ শতাংশের অধিক লোক কর্মরত রয়েছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নে, কর্মসংস্থানে, দারিদ্র্য মোচনে এবং প্রাণিজ আমিষের ঘাটতি দূরীকরণে মৎস্য খাতের উন্নয়ন নিতান্তই অপরিহার্য।
বাংলাদেশের মৎস্য উৎপাদন ক্ষেত্রকে প্রধানত অভ্যন্তরীণ ও সামুদ্রিক- এ দুই ভাগে ভাগ করা যায়। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে রয়েছে মুক্ত জলাশয় ও বদ্ধ জলাশয়। মুক্ত জলাশয়ের মধ্যে আছে প্লাবন ভ‚মি, নদী, খাল, বিল, কাপ্তাই হ্রদ ও সুন্দরবন। এর আয়তন প্রায় ৩৮ লাখ ৯০ হাজার হেক্টর। বদ্ধ জলাশয়ের মধ্যে আছে পুকুর, মরা নদীর অংশ বা বাঁওড় ও উপক‚লীয় চিংড়ি খামার। এর আয়তন ৮ লাখ ২২ হাজার হেক্টর। আর সামুদ্রিক জলসীমার পরিমাণ ১ লাখ ২৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার।
এ দেশে মাছের বার্ষিক উৎপাদন ৪৪.৮৫ লাখ মেট্রিক টন। অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে আহরিত মাছের পরিমাণ প্রায় ৮৫ শতাংশ এবং সামুদ্রিক জলসম্পদ থেকে প্রাপ্ত মাছের হিস্যা মাত্র ১৫ শতাংশ। অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সংগৃহীত মাছের শতকরা প্রায় ২৮ ভাগ সরবরাহ আসে মুক্ত জলাশয় থেকে এবং ৫৭ ভাগ আসে বদ্ধ জলাশয় থেকে। সামুদ্রিক মৎস্যের শতকরা প্রায় ৮২ ভাগ জোগান আসে আর্টিশনাল বা চিরায়ত আহরণ পদ্ধতির মাধ্যমে। আর বাকি ১৮ শতাংশ আসে ট্রলারকেন্দ্রিক শিল্পায়িত আহরণের মাধ্যমে। বছরের পর বছর সামুদ্রিক মৎস্য আহরণের হিস্যা হ্রাস পেয়েছে এবং অভ্যন্তরীণ আহরণের হিস্যা বেড়েছে। এর কারণ, সামুদ্রিক আহরণের প্রবৃদ্ধির হার কম, অভ্যন্তরীণ আহরণের প্রবৃদ্ধির হার বেশি। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে বদ্ধ জলাশয় তথা চাষাধীন জলাশয় থেকে আহরণের প্রবৃদ্ধির হার বেশি বিধায় মোট মৎস্য উৎপাদনে এ খাতের হিস্যা দ্রæত বেড়েছে। গত ৩৬ বছরে (১৯৮৩-৮৪ সাল থেকে ২০১৯-২০ সাল পর্যন্ত) অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়, বদ্ধ জলাশয় এবং সামুদ্রিক জলসম্পদ থেকে মৎস্য আহরণের প্রবৃদ্ধির হার ছিল যথাক্রমে ২.৭, ৮.৫৭ এবং ৩.৯৪ শতাংশ। এ সময় মাছের মোট উৎপাদন বেড়েছে শতকরা ৫ শতাংশ হারে। অভ্যন্তরীণ বদ্ধ জলাশয়ের মৎস্য উৎপাদনে দ্রæত প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হয়েছে উন্নত পদ্ধতিতে মাছ চাষের জন্য। এর পেছনে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সার্বিক উৎপাদনক্ষম মৎস্য প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ভ‚মিকা অনস্বীকার্য। গত ২০২০ সালে প্রতিষ্ঠানটিকে একুশে পদকে ভ‚ষিত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রুইজাতীয় মাছ উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি পাঙ্গাশ, কৈ, শিং, মাগুর ও তেলাপিয়া মাছের উৎপাদন বিপুল পরিমাণে বেড়েছে। তাতে অভ্যন্তরীণ পুকুর-দীঘিতে হেক্টর প্রতি মৎস্য উৎপাদন প্রায় ৫ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। মৎস্য খাতের উৎপাদনে সবচেয়ে বেশি লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে ইলিশের উৎপাদন দ্রæত বৃদ্ধি পাওয়া। ২০০৮-০৯ সালে ইলিশের মোট উৎপাদন ছিল ২.৯৯ লাখ মেট্রিক টন। ২০২০-২১ সালে তা বেড়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৫.৫ লাখ মেট্রিক টনে। নদীতে জাটকা আহরণ নিষিদ্ধকরণ এবং ইলিশ প্রজনন সুরক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নের ফলে ইলিশের উৎপাদন ও আকার আশাতীত বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্বে ইলিশ উৎপাদনকারী ১১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে। এ দেশে উৎপাদিত মোট মাছের প্রায় ১২ শতাংশ আসে ইলিশ থেকে। পৃথিবীর মোট ইলিশ উৎপাদনে দুই-তৃতীয়াংশেরও অধিক হিস্যা বাংলাদেশের রয়েছে। ইলিশ বাংলাদেশের জাতীয় মাছ। বিশ্ব দরবারে এর পরিচয় ‘বাংলাদেশ ইলিশ’ হিসেবে। এর ভৌগোলিক নিবন্ধন বা জিআই সনদ রয়েছে। মাছ একটি পচনশীল পণ্য। আহরণের পরই এর বাজারজাত করা অপরিহার্য হয়ে পড়ে। কিন্তু দেশের অনুন্নত অবকাঠামো ও পরিবহন ব্যবস্থার কারণে মাছের বাজার দক্ষ নয়। তা ছাড়া বরফ দেয়া, প্রক্রিয়াজাত করা, ক্রমানুসারে সাজানো, হিমায়িত করা ইত্যাদি কাজ সঠিকভাবে করা হয় না বলে ভোক্তার নিকট অনেক সময় গ্রহণযোগ্য তাজা মাছ পৌঁছে দেয়া সম্ভব হয় না। এক সমীক্ষায় দেখা যায়, আহরণ থেকে ভোক্তার নিকট পৌঁছে দেয়া পর্যন্ত শতকরা প্রায় ৩০ ভাগ মাছ নষ্ট হয়ে যায়। এক হিসাব মতে মাছের বিপণন খরচ ও মুনাফা ভোক্তা প্রদত্ত মূল্যের শতকরা প্রায় ৫০ ভাগ। এটি বিপণন অদক্ষতারই পরিচায়ক। তা ছাড়াও মৎস্য আহরণের কাজটি এলাকা ও মৌসুমনির্ভর বিধায় স্থান ও কালভেদে মাছের দামে বিরাট ফারাক পরিলক্ষিত হয়। মাছ হিমায়িতকরণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং পরিবহন ব্যবস্থার যথাযথ উন্নয়নের মাধ্যমে এ সমস্যাগুলো ন্যূনতম পর্যায়ে রাখা সম্ভব।
দেশের মৎস্য সম্পদ আহরণের একটি বিশাল ক্ষেত্র হাওড় ও চরাঞ্চল। দেশের অন্যান্য এলাকা থেকে সেখানে জীবনযাত্রার ধরন আলাদা। জীবন সেখানে ঝুঁকিবহুল ও অর্থনীতি ভঙ্গুর। মৎস্য উৎপাদন ও সংগ্রহের গুরুত্ব যেখানে অপরিসীম। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ৭টি জেলার ৪৭টি উপজেলাজুড়ে বিস্তৃত রয়েছে হাওড়। মোট আয়তন প্রায় ২০ হাজার বর্গকিলোমিটার। সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাসমূহে অবস্থিত হাওড়ের সংখ্যা ৩৭৩টি। বর্ষা মৌসুমে এ অঞ্চলের বিশাল এলাকা থাকে জলমগ্ন। বছরের প্রায় ৭-৮ মাস সেখানে মানবেতর জীবন কাটায় হাওড়ের অসংখ্য মানুষ। সেখানে আধুনিক মৎস্য চাষের সম্ভাবনা প্রচুর। তা ছাড়াও হাওড়ের উন্মুক্ত জলাশয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্র বিধায় এগুলো সংরক্ষণ করা দরকার। অপরদিকে দেশের চরাঞ্চলের অধীনে আছে মোট প্রায় ১৬ শতাংশ ভ‚মি। মোট বাসিন্দা প্রায় ১ কোটি মানুষ। সেখানকার মানুষের জীবন ঝুঁকিপূর্ণ, সামাজিক ও আর্থিকভাবে তারা সুবিধাবঞ্চিত। মৎস্য আহরণ, জলজ ফল সংগ্রহ, শামুক ও ঝিনুক কুড়ানো সেখানে অন্যতম অর্থনৈতিক খাত। চরের এই জনগোষ্ঠীকে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া দরকার। হাওড় ও চরের জেলেদের আহরণকৃত মৎস্য উপযুক্ত মূল্যে বাজারজাতকরণে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। তা ছাড়া ওইসব এলাকায় মাছের ভাণ্ডার সংরক্ষণ, জলজ আগাছা ও জলজ জীবের নিরাপদ অবস্থান নিশ্চিত করার জন্য উদ্যোগ নেয়া আবশ্যক।
সম্প্রতি দেশের মানুষের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে সমুদ্র সম্পদ অর্থনীতির ওপর। আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে ২০১২ সালে মিয়ানমার এবং পরে ২০১৪ সালে ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির পর ১ লাখ ১৮ হাজার ১৮৩ বর্গকিলোমিটার সমুদ্র এলাকায় বাংলাদেশের সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এর ফলে চট্টগ্রাম উপক‚ল থেকে ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপানে অবস্থিত সকল প্রাণিজ ও খণিজ সম্পদের ওপর মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয় আমাদের। এ বিশাল জলরাশিতে আহরণযোগ্য মাছের প্রজাতির সংখ্যা ৪৩০টি। চিংড়ির প্রজাতি আছে ১৪টি। এদের বিজ্ঞানভিত্তিক আহরণ ও অর্থনৈতিক ব্যবহার আমাদের জাতীয় অর্থনীতিকে অত্যন্ত সমৃদ্ধ করবে। উপক‚লীয় মানুষের কর্মসৃজন ও জীবনমান উন্নয়নের ক্ষেত্রে তা প্রস্তুত হবে সহায়ক। কিন্তু এ পর্যন্ত আমরা তাতে তেমন সফলতা দেখাতে পারিনি। ২০১৬ সালে প্রকাশিত বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার এক প্রতিবেদন অনুসারে বঙ্গোপসাগর থেকে বছরে ৮০ লাখ টন মাছ ধরা হয়। তাতে বাংলাদেশের শরিকানা মাত্র ৯৫ হাজার টন। বাকি মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে ভারত, মিয়ামনার ও থাইল্যান্ড। বাংলাদেশের অন্তর্গত সমুদ্রসীমার মধ্যে ৩৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকায় মাছ ধরা সম্ভব। কিন্তু আমরা তার মাত্র কিয়দংশ এলাকা থেকে মাছ ধরতে সক্ষম। গভীর সমুদ্র থেকে মাছ ধরে আনার সক্ষমতা আমাদের কম অথবা নেই বললেই চলে। এর জন্য দক্ষ জনশক্তি, উন্নত মানের সরঞ্জাম ও প্রযুক্তির প্রকট অভাব। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ, উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার এবং জেলেদের প্রশিক্ষণ প্রদান নিশ্চিত করা দরকার। আমাদের সমুদ্র সীমার মধ্যে মৎস্য মজুদের পরিমাণ নির্ধারণ করে টেকসই মৎস্য আহরণের পরিকল্পনা নেয়া দরকার। তা ছাড়াও সমুদ্রে তেল ও গ্যাস আহরণের অব্যাহত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া দরকার। অধিকন্তু সুনীল শক্তি উৎপাদন (বায়ু ও ¯্রােত) এবং সামুদ্রিক খনিজ আহরণ ও তার ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দেয়া দরকার। এক্ষেত্রে পর্যাপ্ত জ্ঞানের অন্বেষণে ও মানবসম্পদ সৃষ্টিতে সর্বাধুনিক গবেষণা জাহাজ সংগ্রহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া উচিত।
সমুদ্রে পর্যাপ্ত মাছ আছে। আছে খনিজ পদার্থ। আছে অফুরন্ত সম্পদের ভাণ্ডার। বর্তমান বিশ্বের ৪৩০ কোটিরও বেশি মানুষের ১৫ ভাগ প্রোটিনের জোগান দিচ্ছে সমুদ্রের মাছ ও জীবজন্তু। পৃথিবীর ৩০ ভাগ গ্যাস ও জ্বালানি তেলের সরবরাহ আসছে সমুদ্রতল থেকে। পৃথিবীর ৩ ভাগই জল, ১ ভাগ স্থল। সমগ্র বিশ্বের এবং বাংলাদেশেও ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাহিদা পূরণের জন্য সমুদ্র সম্পদকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে হবে। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট এবং রূপকল্প-২০৪১ সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গোপসাগরের সম্পদ অনুসন্ধান, আহরণ ও তার সুষ্ঠু ব্যবহারের ওপর সর্বশেষ জোর দিয়েছেন। তা বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব আমাদের সবার। গভীর সমুদ্র থেকে আহরিত বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, সালমন, টুনা, শামুক, ঝিনুক, কাঁকড়া, অক্টোপাস, হাঙ্গরসহ বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রাণী বিশ্ববাজারে বেশ জনপ্রিয়। এদের আহরণ ও রফতানি সম্প্রসারণ করা দরকার। পর্যটনকেন্দ্র হিসেবেও সমুদ্র সৈকতকে সর্বোচ্চ ব্যবহারের নিশ্চয়তা বিধান করা আবশ্যক। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ, যা বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত। একে আকর্ষণীয় ও ঝুঁকিমুক্ত করতে হবে। সামুদ্রিক পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটাতে হবে। এর জন্য প্রয়োজনে নিতে হবে আন্তর্জাতিক সহায়তা। ভারত, চীন, জাপান ও অস্ট্রেলিয়া এক্ষেত্রে সহযোগিতা দিতে পারে। এর বিপুল সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে হবে। সর্বোপরি সুনীল অর্থনীতি বা বøু-ইকোনমি উন্নয়নের জন্য মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়নে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।
লেখক : কৃষি অর্থনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ ও মুক্তিযোদ্ধা। গবেষণায় অবদানের জন্য একুশে পদকপ্রাপ্ত