ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৬ মে ২০২৫, ১২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

আলমগীর সাত্তার

বিশ বছর পর বাংলাদেশের আয়তন

প্রকাশিত: ২০:০৫, ২৫ জানুয়ারি ২০২১

বিশ বছর পর বাংলাদেশের আয়তন

১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ যখন ভারত এবং পাকিস্তান নামের দুটি দেশ হলো তখন পাকিস্তানের পূর্বাংশ অর্থাৎ বর্তমান বাংলাদেশের আয়তন ছিল চুয়ান্ন হাজার বর্গমাইল। ১৯৭১-এ যখন আমরা রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র পেলাম তখন এই আয়তন বৃদ্ধি পেয়ে হয় চুয়ান্ন হাজার পাঁচ শ’ বর্গমাইল। এই পাঁচ শ’ বর্গমাইল বৃদ্ধি পেল কেমন করে? আমাদের দেশের বিশাল বিশাল নদ-নদী দিয়ে ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন বর্গমিটার পলিমাটি বর্ষাকালে বন্যার পানিতে বাহিত হয়ে নদ-নদী তো ভরাট করছেই, তদুপরি দক্ষিণাঞ্চলের সাগর উপকূলের কাছের জলে পড়ে দেশের আয়তনের বিস্তারও ঘটাচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশের আয়তন প্রায় সাতান্ন হাজার বর্গমাইলের কাছাকাছি। এর অর্থ বিগত পঞ্চাশ বছরে বাংলাদেশের আয়তন প্রায় তিন হাজার বর্গমাইল বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশের চৌষট্টিটি জেলা। পঞ্চাশ বছরে আয়তন বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় তিন হাজার বর্গমাইল। অর্থাৎ আয়তন বৃদ্ধির পরিমাণ তিনটি জেলার আয়তনের সমান। বিষয়টা সামান্য নয়। ত্রিশ বছর আগে আমাদের দেশের পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞদের চোখে-মুখে পাণ্ডিত্যের ভাব ফুটিয়ে বলতে শুনেছি, উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে সমুদ্রের জলের উচ্চতা বেড়ে যাবে। তাতে করে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিশাল এলাকা, যা বাংলাদেশের আয়তনের এক-তৃতীয়াংশের সমান, সমুদ্রের জলের দু’তিন ফুট নিচে তলিয়ে যাবে। বাস্তবে ত্রিশ বছর পর দেখছি বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের ভূমির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের অনেক এলাকা এখনও জোয়ারের সময় পানির নিচে তলিয়ে যায়, তবে তা আগের চেয়ে অনেক কম। আমার মামাবাড়ি বরিশাল জেলার দক্ষিণাঞ্চলে। ওখানেই আমার জন্ম এবং বড় হয়েছি ওখানেই। ওই অঞ্চল এখন পিরোজপুর জেলার মধ্যে পড়েছে। আমরা ছোটবেলায় দেখেছি ওই অঞ্চলের সবটাই নিচু ছিল। যাদের কৃষি জমি ছিল তারা তিন-চার বছর পরপর কৃষি জমি থেকে আট-দশ ইঞ্চি পরিমাণ মাটি বিক্রি করে দিত। যাদের বাড়ির প্রাঙ্গণ এবং আশপাশের জায়গা নিচু ছিল তারা ওই মাটি কিনে নিয়ে নিচু জমি ভরাট করত। রাস্তাঘাট তৈরি করত। যেসব কৃষি জমি থেকে মাটি বিক্রি করা হতো দেখা যেত তিন-চার বছরের মধ্যে বন্যার পানিতে আসা পলিমাটি ওসব জমি ভরাট করে আগের উচ্চতায় ফিরিয়ে দিয়েছে। আমি আমার মামাদের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখেছি, ওই গ্রাম এবং পার্শ্ববর্তী গ্রামের ভূমি আর তেমন নিচু নেই। মাঝে-মধ্যে পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞদের এখনও বলতে শুনি, জোয়ারের সময় সমুদ্রের নোনা জল নদ-নদীর অনেক ওপরের দিকে চলে আসে। সেটা তো আসবেই। কিন্তু আগের দিনে নোনা জল কতটা ওপরের দিকে আসত আর এখন কতটা আসে সে হিসাবটা তারা বলেন না। অর্থাৎ তাদের জানা নেই। এখন থেকে ত্রিশ বছর আগের কথা। আমি তখন বাংলাদেশ বিমানের ডিসি-১০ প্লেনের ক্যাপ্টেন। তখন বাংলাদেশ বিমানের নিজস্ব তিনটি ডিসি-১০ প্লেন ছিল। এর সঙ্গে লিজে আনা আরও দুটি ডিসি-২০ প্লেন যুক্ত হলো। তাই বেশ কয়েকটি ডিসি-১০ প্লেনের পাইলট এবং ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার এক্সপ্যাট্রিয়েট হিসেবে চাকরি দিয়ে আনতে হয়েছিল। এই এক্সপ্যাট্রিয়েট পাইলটদের একজন ছিলেন ইতালিয়ান। তাঁর নাম ছিল ডুগার। তিনি ছিলেন ক্যাথলিক খ্রীস্টান এবং খুব ধার্মিক। একদিন তিনি এবং আমি একসঙ্গে ফ্লাই করছিলাম। নূহ নবীর সময়ের মহাপ্লাবনের কথা খ্রীস্টানরা যেমন বিশ্বাস করে, আমরা মুসলমানরাও তেমনি বিশ্বাস করি। ক্যাপ্টেন ডুগার নূহ নবীর সময়ের মহাপ্লাবনের সত্যতা বোঝাতে গিয়ে বললেন, মাত্র বারো হাজার বছর আগে পৃথিবীটা শুক্র গ্রহের মতো আপন অক্ষরেখার ওপর একদম খাড়া-সোজাসুজি ছিল। মাত্র বারো হাজার বছর আগে আটাত্তর লাখ টন ওজনের একটি উল্কাপিণ্ড আমেরিকার আরিজোনা অঞ্চলে পতিত হয়। ওই উল্কাপিণ্ড এত বড় ছিল যে, যেখানে ওটা আঘাত হানে সেখানে একটা হ্রদের সৃষ্টি হয়। ওই উল্কাপিণ্ডের আঘাতে পৃথিবী আপন অক্ষরেখার ওপর সাড়ে তেইশ ডিগ্রী কাত হয়ে যায় এবং পৃথিবীতে ঋতুর সূচনা হয়। এর ফলে উত্তর এবং দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে জমে থাকা বিশাল বরফের স্তর গলতে শুরু করে। বরফের স্তর গলে সাগরের জলের স্তরের উচ্চতা অনেক বেড়ে গিয়ে যে মহাপ্লাবনের সৃষ্টি হয় তাকেই তৎকালীন বন্যা বলে অভিহিত করা হয়। ক্যাপ্টেন ডুগারকে প্রশ্ন করতে যাচ্ছিলাম যে, যে উল্কাপিণ্ডের পতন হয়ছিল সেটার ওজন যে আটাত্তর লাখ টন ছিল সেটা মেপেছিল কে এবং কেমন করে? তাঁর ধর্মবিশ্বাসে আঘাত লাগতে পারে মনে করে আর প্রশ্ন করলাম না। আমাদের দেশের পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞরা যেসব জ্ঞানগর্ভ বক্তব্য দেন তা ক্যাপ্টেন ডুগারের বক্তব্যের চেয়ে উন্নতমানের এ কথা বলা যাবে না। ক্যাপ্টেন ডুগারও বেশ উচ্চ শিক্ষিত ছিলেন। নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট নিয়ে সর্বমোট পঞ্চাশ-ষাটবার গিয়েছি। অসাধারণ সুন্দর একটি দেশ। ওই দেশের মানুষও খুব ভাল। দেশটির আয়তন ষোলো হাজার বর্গমাইল বা পঞ্চাশ হাজার বর্গকিলোমিটার। আমাদের দেশের তিন ভাগের এক ভাগের সমান। লোকসংখ্যা এক কোটি পঁচাত্তর লাখ। আমাদের দেশের জনসংখ্যা ছয় কোটি হলে দু’দেশের জনবসতির ঘনত্ব একই রকম হতো। নেদারল্যান্ডস তার দেশের এক-তৃতীয়াংশ বৃদ্ধি করেছে সমুদ্রের মধ্য থেকে ভূমি উদ্ধার করে। আমস্টারডাম বিমানবন্দর সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে বারো ফুট নিচে। ওই বিমানবন্দর থেকে ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ মাইল উত্তরে সমুদ্র তীরে বিশাল বেড়িবাঁধ বা ডাইক নির্মাণে সমুদ্র থেকে ভূমি উদ্ধার করে তা রক্ষা করা হচ্ছে। সে বেড়িবাঁধের উচ্চতা বিশ-পঁচিশ ফুটের বেশি হবে। প্রশস্ততায়ও অনেক। ওখানে অনেক পর্যটক বেড়াতে যায়। আমার দুর্ভাগ্য ওই বেড়িবাঁধ দেখার সুযোগ হয়নি। আমার বন্ধু ক্যাপ্টেন রফিউল হকের কাছে শুনে ওখানে যাওয়ার খুব ইচ্ছা হয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশ বিমানের আমস্টারডাম ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমার আর যাওয়া হয়নি। শুনেছি আমাদের সরকার ক্রসড্যাম তৈরি করে সমুদ্রবক্ষ থেকে ভূমি উদ্ধার করার পরিকল্পনা করেছে। আমি শুধু সরকারকে অনুরোধ করব এই পরিকল্পনা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কার্যকর করার জন্য। আমি পিআইএর পাইলট ছিলাম। ১৯৬৮ সালে পোস্টিং নিয়ে ঢাকায় আসি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ করেছি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ফকার ফ্রেন্ডশিপ প্লেন চালিয়েছি। তখন প্রায় নিত্যদিন ঢাকা-যশোর-চট্টগ্রাম-ঢাকার মধ্যেও একটি বা দুটি করে ফ্লাইট করতাম। সপ্তাহে দুদিন ঢাকা-যশোর-চট্টগ্রাম-ঢাকার মধ্যেও ফ্লাইট করতাম। তখন ভাটার সময় বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী এলাকা নোয়াখালী, বরিশাল, খুলনার কাছাকাছি অঞ্চলে অনেক চর দেখতে পেতাম। জোয়ারের সময় ওসব চর সমুদ্রের পানিতে ডুবে যেত। এখন ওসব চর পলির স্তর পড়ে পড়ে ছোট ছোট দ্বীপে পরিণত হয়েছে। আশা করা যায় এখন থেকে বিশ-পঁচিশ বছর পর ওগুলো পূর্ণ দ্বীপের আকৃতি নেবে। তখন ওসব দ্বীপের চারদিকে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে সাইক্লোন সেন্টার তৈরি করে দিলে মানুষের বসবাসের এবং কৃষি কাজ করার উপযুক্ত হবে। আশা করা যায় বাংলাদেশের আয়তন তখন ষাট হাজার বর্গমাইলের বেশি হবে। সাগর অভিমুখে আমাদের দেশের আয়তনের বিস্তার ঘটবে এটা কেবল আশাবাদের কথা নয়। এটাই বাস্তবতা। এছাড়া নদীর কূল ভরাট করে আরও কম করে হলেও পাঁচ শ’ বর্গমাইল চাষাবাদযোগ্য ভূমি উদ্ধার করা যেতে পারে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী ভূমির পরিমাণ উল্লেখ না করে শুধু বলেছেন, প্রশস্ত নদীগুলোর তীর ভরাট করে অনেক ভূমি উদ্ধার করা সম্ভব। ক্যাপ্টেন ডুগারের মতো জ্ঞানী আমাদের দেশের পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞদের চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর জ্ঞান এবং বিচক্ষণতা যে বেশি এ বিষয়ে কারও সন্দেহ থাকার কথা নয়। বিষয়টা হলো আমাদের পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, শিবশা, পশর নদীগুলো কোথা কোথাও দেড়-দু’মাইল প্রশস্ত। নদীগুলোর অমন প্রশস্ততার প্রয়োজন নেই। নাব্যের জন্য আমরা চাই নদীর গভীরতা। নদীপথে পণ্য পরিবহনের খরচ সবচেয়ে কম। আমি মনে করি আমাদের স্টিমার, লঞ্চ, নৌকা চলাচলের জন্য নদীর প্রশস্ততা আধামাইল হলেই তা হবে যথেষ্ট। একবার জার্মানিতে গিয়ে রিভার ক্রুজে গিয়েছিলাম। প্রথমে গেলাম ফ্রাঙ্কফুর্ট শহর থেকে বাসে চড়ে রোডে শাইম শহরে। রোডে শাইম শহর বিখ্যাত হলো ওখানকার ‘ওয়াইন পল্লীর’ জন্য। রোডে শাইম থেকে মাইন নদী দিয়ে বিরাট ক্রুজশিপে গেলাম সেন্টগোরেন হাউজেন শহরে। ওখানে প্রতি বছর একদিন আতশবাজির উৎসব হয়। ওখানে ওই আতশবাজিকে বলা হয় ‘বেঙ্গল ম্যাজিক’। এর কারণ, এক সময় আতশবাজি তৈরির ব্যাপারে বাংলার নাম ছিল সারাবিশ্বে প্রসিদ্ধ এবং এর কাঁচামাল রফতানিও হতো বাংলা থেকে। মাইন নদী দিয়ে বিশাল ক্রুজশিপে যাওয়ার সময় দেখলাম, ওই নদী প্রশস্ততায় কোয়ার্টার মাইল বা পাঁচ-ছয় শ’ মিটারের বেশি হবে না। ওই নদীপথে প্রতিদিন লাখ লাখ টান পণ্য বহন করে বার্জ শিপ জার্মানি থেকে বেলজিয়ামের রটারডাম, স্কিডাম বন্দরে আনা-নেয়া করা হয়। আমরা যদি আমাদের প্রধান প্রধান নদীগুলোর প্রশস্ততা কমিয়ে এক হাজার মিটার এবং নদী খননের মাটি দিয়ে দু’পাড়ে উচ্চভূমি তৈরি করি তবে চাষাবাদ এবং বৃক্ষরাজি রোপণ করার কতটা জমি পাব তা গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা উচিত। আমাদের দেশে যে অসংখ্য হাওড়-বাঁওড়, বিল-ঝিল এবং জলাভূমি আছে সেগুলো খনন করে বৃহদাকারের জলাধার নির্মাণ করা উচিত। তেমনটা করা হলে আমরা যে কতভাবে উপকৃত হব তারও হিসাব করা উচিত। এরকম জলাধার নির্মাণ করা হলে চারপাশে প্রচুর উঁচু ভূমি পাব। সেখানে বৃক্ষ রোপণ করতে পারব। মানুষ বসবাস করার জন্য ঘরবাড়ি নির্মাণ করতে পারবে। ফলফলাদির গাছ লাগাতে পারবে। শাক-সবজির চাষ করতে পারবে। বিশাল বিশাল জলাধারে মৎস্যচাষ করতে পারবে। জলাধারগুলো ভিত্তি করে সুন্দর সুন্দর পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠবে। জলাধারগুলোতে বর্ষাকালে প্রচুর পানি ধরে রাখতে পারব। ওই পানি দিয়ে শুষ্ক মৌসুমে কৃষি জমিতে সেচ ব্যবস্থা করা যাবে। বর্তমানে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করা হচ্ছে কৃষি জমিতে সেচ ব্যবস্থার জন্য। ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দিনের পর দিন নিচে নেমে যাচ্ছে। যার জন্য জমির উর্বরতাও কমে যাচ্ছে। আমি বহু বছর ফ্লাইট নিয়ে এথেন্স গিয়েছি। তখন বহুবার ম্যারাথন লেক দেখতে গিয়েছি। দেখতে যাওয়ার অর্থ ওসব ছিল আনন্দ ভ্রমণ। ম্যারাথন লেক ঐতিহাসিক ম্যারাথন যুদ্ধক্ষেত্রের কাছে। ম্যারাথন লেকের গ্রীক নাম ম্যারাথন লিমনি। পৃথিবীর বৃহত্তম শ্বেতপাথরের বাঁধ নির্মাণ করে ম্যারাথন লেকে বিশাল পরিমাণের জল আটকে রাখা হয়েছে। সেই আটকে রাখা জল কৃষি জমিতে সেচ ব্যবস্থায় ব্যবহার করা হয়। এথেন্স শহরের জন্য ব্যবহার্য প্রয়োজনীয় পানিও ম্যারাথন লেক থেকেই আনা হয়। ম্যারাথন লেক গ্রীসের অন্যতম প্রধান পর্যটন কেন্দ্র। আমাদের কাপ্তাই লেকও তো একটি সুন্দর পর্যটন কেন্দ্র। অন্য জলাধারগুলোও যদি পরিকল্পিতভাবে তৈরি করা হয় তবে সেগুলোও আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র হবে। ম্যারাথন লেকের তীরের রেস্তরাঁগুলোতে পিঠা (পরোটাকে গ্রীকরা পিঠা বলে), ল্যাম্বচাপ পাওয়া যায়। তেমনি আমাদের পর্যটন কেন্দ্রের রেস্তরাঁতেও শিক কাবাব, পরোটা পাওয়া যাবে। পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞদের জানা আছে কিনা অথবা অনুমান করতে পারেন কিনা, প্রতিবছর কত ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন কিউবিক মিটার পলিমাটি বন্যার পানির সঙ্গে এসে আমাদের নদ-নদী এবং জলাভূমি ভরাট করছে? অনেক আগে একখানা বইয়ে পড়েছিলাম, চৈনিক পর্যটক হিউয়েন সাং নালান্দা থেকে আমাদের পুণ্ড্রবর্ধন (বর্তমানের পাহাড়পুর) নৌকাযোগে এসেছিলেন। তখন তিনি দেখেছেন তখনকার নদীগুলো এত প্রশস্ত ছিল যে, এক তীর থেকে অন্য তীর দেখা যেত না। আর আজ ওসব নদী দিয়ে নৌকাও চলতে পারে না। আমাদের দেশের দুই-তৃতীয়াংশ ভূমিই তো পলিমাটির কারণে সমুদ্রের জলে পলিমাটি জমে জেগে উঠেছে। আমাদের নদ-নদী দিয়ে এত পলিমাটি বাহিত হয় যে, অন্য কোন দেশের নদ-নদী এত পলিমাটি বহন করে না। এ ব্যাপারে আমাদের মতো দ্বিতীয় একটি দেশ এ বিশ্বে আর নেই। কয়েক বছর আগে আড়িয়ল বিলের বিশাল এলাকা ভরাট করে এক লাখ কোটি টাকা ব্যয়ে বিমানবন্দর নির্মাণ করার নির্বোধ পরিকল্পনা ও প্রচেষ্টার কথা মনে পড়ে। স্থানীয় জনগণের বাধায় শেষ পর্যন্ত সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছিল। ওই বিশাল বিল ভরাট করতে বাধা দিতে গিয়ে দু’-একজনকে প্রাণ দিতে হয়েছিল। ওই সময় এ্যাভিয়েশন এবং পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব ছিলেন বোধ হয় একজন রাজাকার। বর্তমানে প্রশাসনে কোন রাজাকার নেই। কারণ তারা অবসরপ্রাপ্ত হয়েছে। কিন্তু প্রশাসনে রাজাকারপুত্ররা তো আছে! লেখক : বীর প্রতীক ও সাবেক বৈমানিক
×