ভ্রমণপিপাসু কাজী আসমা আজমেরী বাংলাদেশী পাসপোর্ট নিয়ে ১৩০টি দেশ ভ্রমণ করেছেন। উড়িয়েছেন বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা। সম্প্রতি তিনি জনকণ্ঠ ডিজিটালকে একটি সাক্ষাতকারে বলেছেন বাংলাদেশী পাসপোর্টের জন্য কিভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাকে হেনস্তা হতে হয়েছে। তাকে পুরো একটা দিন জেলেও থাকতে হয়েছে। এখন তিনি ‘পাসপোর্ট গার্ল’ বা ‘গ্রীন পাসপোর্ট গার্ল’ নামে পরিচিত। আসমা আজমেরী বিশ্বের সমস্ত সবুজ পাসপোর্টধারীকে বিশ্বভ্রমণে উৎসাহিত করার চেষ্টা করে আসছেন। তিনি বলেন, ‘সংগ্রাম করে যাচ্ছি এই বাংলাদেশী পাসপোর্টে সারা বিশ্বটা ঘুরব বলে। এবং এই পাসপোর্টের ব্র্যান্ডিং করব বলে।’
ট্রাভেলিংয়ে প্রতি আকর্ষণ কিভাবে বা কার উৎসাহে?
আমি ছোটবেলা থেকে ঘুরতে প্রচ- পছন্দ করি। আম্মু আমাকে মার্কো পোলোর বই, ইবনে বতুতা পড়ে পড়ে শোনাতেন। ওখান থেকে আমার ছোট্টমনে একটা ছবি আঁকত। সেই ছবি আঁকতে আঁকতেই আরব্য রজনী কিংবা ঠাকুরমার ঝুলি থেকেই এই আকর্ষণ। ছোট্ট একটি কাহিনীও আছে– আমার এক বন্ধু ২৬টি দেশ ভ্রমণ করেছিল, সে মেরিনে ছিল। আমার তখন মনে হলো আমি কেন পারব না! তার মা বলেছিল, তুমি তো মেয়ে তুমি পারবে না! এই যে জেন্ডার ইন-ইকোয়ালিটি, সেই জেদ থেকেই বিশ্ব ভ্রমণে অন্তত ৫০টি দেশ ঘুরব বলে আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই ২০০৯ এ।
বিভিন্ন দেশ ঘুরে আমাদের কালচারের সঙ্গে কি কি তারতম্য পেয়েছেন?
আতিথেয়তার দিক থেকে আমাদের দেশ সেরা। তবে তুর্কিমিনিস্তান, আমার ট্রাভেলিং এর ১০০তম দেশ। অনেক আতিথেয়তাপূর্ণ। ফিজিতে যেসব পুরুষেরা বিবাহিত না, তারাই শুধু কানে লাল রঙের ফুল গুঁজে থাকে। এখানে চোর নেই, তাই দরজা-জানালা নেই। এটা আমার কাছে একদম অন্যরকম লেগেছে। এখানে বাংলাদেশী পাসপোর্টের অন অ্যারাইভাল ভিসা। পেসিফিক আইল্যান্ডের আরও ৪/৫টা দেশ আছে যেখানে ভিসা ফ্রি।
আপনাকে কেন জেলে আটকে রাখা হয়েছিল? কিভাবে সেখান থেকে বের হয়েছিলেন?
২০১০ সাল আমার অনেক চ্যালেঞ্জিং একটা বছর। ভিয়েতনামে ২৩ ঘণ্টা জেলে থাকি। আমাকে রি-পোর্টেড করে পাঠিয়ে দেয়া হয়। কারণ, আমার বাংলাদেশী পাসপোর্ট। যাতে রিটার্ন টিকেট আর হোটেল বুকিং ছিল না। তারা ধারণা করে আমি তাদের দেশ থেকে ফিরব না। একজন বাংলাদেশী হিসেবে আমাকে অপমান করা হয়েছে। এটা আমি কখনই ভুলব না। গলা ধাক্কা দিয়ে জেলে ঢুকিয়ে দেয়।
কোন্ তিনটি দেশের খাবার সবচেয়ে বেশি ভাল লেগেছে এবং কেন?
মেক্সিকান টাকোস। মাংস ভেজে রুটির সঙ্গে খায়। থাইল্যান্ডের পাপায়ার সালাদ। লেমন স্টিম ফিস। বেইজিং এর ডাম্পলিং। আমার খুবই পছন্দের ডাম্পলিং। মোমোর মতো কিন্তু আরেটু মজার। চাইনিজ স্যডু। পেরুতে আরেকটি খাবার আছে, সেবিসে– কাঁচা মাছকে লবণ আর লেবুর রস দিয়ে সালাদ বানিয়ে খায়। সঙ্গে টমাটো থাকে। পৃথিবী বিখ্যাত বৈকাল হৃদ থেকে মাছ তুলেই খাওয়া যাচ্ছে। রান্না করতে হয় না। স্টিমও করতে হয় না। পৃথিবীর খাবার অনেক অনেক মজা। স্টোনিয়াতে ভাল্লুকের মাংস খেয়েছি। তার জন্য সাড়ে সাত হাজার টাকা খরচ করতে হয়েছে। তুর্কিমিনিস্তান, কাজাখিস্তান, খিরকিস্তান উজবেকিস্তানে ঘোড়ার মাংস প্রধান খাদ্য। এগুলো খেয়েছি।
ভ্রমণে কি আপনি একা যান? একজন মেয়ে হিসেবে কোন তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে?
১৩০টি দেশে আমি একাই গিয়েছি। ১৩ বছরের এই জার্নিতে ১৩০টি দেশের ছোট বড় অনেক শহরে আমি একাই ভ্রমণ করেছি। এবং শুধু বাংলাদেশ আর ইন্ডিয়া ছাড়া অন্য কোথাও একজন মেয়ে ট্রাভেলার হিসেবে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়নি। শুধৃ সম্প্রতি সাউথ আফ্রিকায় আমার ঘাড়ে ৪৫ মি বন্দুক রেখে আমার সবকিছু নিয়ে গিয়েছিল। আমার ড্রাইভার চিন্তা করছিল আমাকেও নিয়ে যায় কিনা। আমি অনেক কান্নাকাটি করায় আমার পাসপোর্টটা ফিরিয়ে দেয়। এটি আমার লাইফের একটা অনেক তিক্ত অভিজ্ঞতা। যেহেতু আমি একজন স্যুটার, তাই প্রথমে আমি পাত্তাই দিচ্ছিলাম না এটা বন্দুক। আমি বলব, কেউ যদি সাউথ আফ্রিকা যেতে চায় জোহানসবার্গে কক্ষনোই যাবেন না। কারন, এই জায়গাটা আমার মতে সবচেয়ে বেশি বিপজ্জনক পুরো পৃথিবীতে। এছাড়া মেয়ে হিসেবে মুসলিম দেশগুলোতে গেলে একটু বিরক্ত করে। কিন্তু আমরা যেহেতু বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি, আমরা জানি কিভাবে নো বলতে হয়।
কাজী আসমা আজমেরীর সম্পূর্ণ সাক্ষাৎকারটি দেখুন জনকণ্ঠের ইউটিউব চ্যানেলে।