বিশেষ প্রতিনিধি ॥ নানামুখী ষড়যন্ত্র ও বিশ্বব্যাংকের অপবাদ মুছে দিয়ে নিজেদের সামর্থ্যে প্রমত্তা পদ্মার ওপর নির্মাণের শেষ পর্যায়ে থাকা সেতুটির নাম ‘শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু’ করার দাবি তুলেছেন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা। সূচনা বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দক্ষিণ জনপদের মানুষের যোগাযোগের এ সেতুটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে করার প্রস্তাব দিলে নেতাকর্মীরা তাতে সমস্বরে সমর্থন দেন। অন্য বক্তাদের কণ্ঠেও উঠে আসে একই দাবি।
মঙ্গলবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় এমন দাবি জানানো হয়।
পদ্মা সেতুর অর্থায়নে সাহসিকতার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর নেয়া সিদ্ধান্তের কথা তুলে ধরে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিশ্বব্যাংক আমাদের চোর অপবাদ দিয়ে পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন করা থেকে সরে গিয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সবাইকে, শেখ রেহানা, জয়, ববি, সবার বিরুদ্ধে চুরির অপবাদ দেয়া হয়েছিল। সেদিন শেখ হাসিনা না থাকলে পদ্মা সেতু করার সামর্থ্য, সাহস হতো না। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের কাছে জানতে চাই, পদ্মা সেতুর নাম সারা জাতি শেখ হাসিনার নামে নামকরণ করতে চায়। আপনারা কী চান?’
উপস্থিত নেতাকর্মীরা সমস্বরে ‘হ্যাঁ’ জানিয়ে তাতে সমর্থন দিলে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘আমিও প্রস্তাব দিয়েছি। বলেছি সর্বস্তরের মানুষ প্রস্তাব করেছে, পদ্মা সেতু যেহেতু শেখ হাসিনার সাহসের ফসল, সে কারণে সেতুর নাম শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু রাখা হোক। সে দাবি আজও আমরা করছি। আমরা সেতু বিভাগ থেকে সামারি পাঠাচ্ছি।’ তিনি বলেন, শেখ হাসিনার নাম ছাড়া পদ্মা সেতু, তাকে অসম্মান করা হয়। কিন্তু তিনি (শেখ হাসিনা) চান না। শেখ রেহানাও চান না। তারা বলেন, পদ্মা সেতু পদ্মা সেতুর নামেই হোক। আপনারা কি মানেন? এ সময় নেতাকর্মীরা হাত নেড়ে ‘না’ জানালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এটা নেত্রীকে জানিয়ে দেব।’
এ সময় পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের তারিখের কথা তুলে ধরে সেতুমন্ত্রী বলেন, দিনক্ষণ ঠিক করার জন্য সামারি যাচ্ছে নেত্রীর কাছে, তিনি তারিখ দেবেন যখন, তখনই উদ্বোধন হবে। তবে একথা ঠিক জুন মাসেই উদ্বোধন হবে। বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ রেহানা আছেন, তাকেও আমরা বলেছি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে থাকার জন্য।
প্রধানমন্ত্রীর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে ওবায়দুল কাদের বলেন, শেখ হাসিনা দেশে এসেছেন বলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্ভব হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যার পাপমোচন সম্ভব হয়েছে। শেখ হাসিনা বাংলাদেশে অসাধ্য সাধন করেছেন। সামনের দিনগুলোতে সকল প্রতিবন্ধকতা পেছনে ফেলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যেতে হবে। দেশের মানুষ তার (শেখ হাসিনার) সঙ্গে আছে, থাকবে। গত ৪৭ বছরে বাংলাদেশের সবচেয়ে দক্ষ প্রশাসক, সফল কূটনীতিক ও সৎ এবং জনপ্রিয় নেতার নাম শেখ হাসিনা।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরীর বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। যতদিন শেখ হাসিনার হাতে দেশে পথ হারাবে না বাংলাদেশ। আল্লাহ যেন শেখ হাসিনাকে সুস্থ রাখেন, দীর্ঘজীবী করেন। তার নেতৃত্ব, দক্ষতা যেন আরও বৃদ্ধি করেন। তার প্রভা যেন আরও বিকশিত হয়।
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, একাত্তর ও পঁচাত্তরের ঘাতকরা সবাই শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করেছে। কিন্তু মহান আল্লাহর রহমতে তিনি বেঁচে আছেন। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য, আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, যারা বলে বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হবে তারা পাকিস্তানে যাক। বাংলাদেশ কখনো শ্রীলঙ্কা হবে না।
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য খাদ্যমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বাংলাদেশ আজ শান্তির দেশ, সমৃদ্ধির দেশ। ষড়যন্ত্রকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, অতীতেও আমরা ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করেছি। আগামী দিনেও সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করেই আমরা দেশকে এগিয়ে নেব। বাংলাদেশে সুন্দর সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা আবারও প্রধানমন্ত্রী হবেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। তার নেতৃত্বে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা আমরা গড়বই গড়ব ইনশাআল্লাহ।
চোরাপথে ক্ষমতায় আসার চেষ্টা হচ্ছে অভিযোগ করে জাহাঙ্গীর কবির নানন বলেন, গণতন্ত্র নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে। চোরাপথে ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করা হলে প্রতিহত করা হবে। কোনও অন্ধকার গলির সরকারের ভূত, কোন ফর্মুলা দিয়ে থাকলে সেই পথও জয় বাংলার কর্মীরা প্রতিহত করবে।
কেউ কেউ জাতীয় সরকারের দিবাস্বপ্ন দেখছে দাবি করে আরেক সভাপতিম-লীর সদস্য আবদুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে ক্ষমতার পালাবদল কেবল নির্বাচনের মাধ্যমেই হয়ে থাকে। নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও জাতীয় সরকারের নামে যারা আজ আন্দোলনের নামে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চায়, শেখ হাসিনার একজন কর্মী বেঁচে থাকতে তাদের রাজপথ দখল করতে দেব না।
আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য এ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, শাজাহান খান, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী. উত্তরের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ ও উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন।