ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনে গরুই এখন বিজেপির মাথাব্যথা

প্রকাশিত: ২৩:৫৫, ২৭ জানুয়ারি ২০২২

উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনে গরুই এখন বিজেপির মাথাব্যথা

ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যে আগামী ফেব্রুয়ারিতেই বিধানসভা ভোট। প্রচার এখন তুঙ্গে। আর ঠিক এ সময়েই ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) গোরক্ষা রাজনীতি এখন সেখানে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের সামনে। উত্তরপ্রদেশের গ্রামগুলোতে মালিকবিহীন মুক্ত গরুর পাল নিয়ে মানুষ ক্রমেই আতঙ্কিত, বিরক্ত হয়ে উঠছে। গরুগুলো খাবারের জন্য ফসলের খেতে হামলে পড়ছে, এমনকি মানুষকে আক্রমণ করতেও ছাড়ছে না। গরুর গুঁতোয় ঘটছে মৃত্যুর ঘটনাও। হিন্দু ধর্মে গরু অত্যন্ত পবিত্র প্রাণী। সে বিবেচনায় উত্তর প্রদেশের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ক্ষমতায় আসার পরই রাজ্যে গোহত্যা নিষিদ্ধ করেছিলেন। এতে সেখানে গরুর সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। গত বছর নবেম্বরের হিম হিম সন্ধ্যায় ৫৫ বছরের কৃষক রাম রাজ বাড়ির উঠানে বসে চা খাচ্ছিলেন। হঠাৎ করেই একটি খ্যাপা গরু তার ওপর আক্রমণ করে। বাড়ির লোকদের চোখের সামনে কয়েক মিনিট ধরে চলা ওই আক্রমণে রাম রাজ গুরুতর আহত হন এবং হাসপাতালে যাওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। নিহতের ছেলের বউ অনিতা কুমারি বলেন, ‘আমাদের জন্য খুবই বেদনাদায়ক মৃত্যু ছিল সেটি। তারপর থেকে আমার শাশুড়ি শোকে ঠিকমত খাবারও খাচ্ছেন না।’ উত্তরপ্রদেশে গরুর এ ধরনের আক্রমণ এখন সাধারণ ঘটনা হয়ে উঠেছে। গরু জবাই নিষিদ্ধ হওয়ায় সেখানে গরুর সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি দাপটও এতটাই বেড়েছে যে, গরুই এখন রাজ্যের আসন্ন নির্বাচনে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। হিন্দুদের কাছে গরু পবিত্র হলেও বিজেপি নতুন আইন করার আগ পর্যন্ত উত্তরপ্রদেশের কৃষকরা ষাঁড় চাষ করার অনুপযুক্ত হলে এবং গাভী দুধ দেয়া বন্ধ করে দিলে সেগুলো কসাইখানায় বিক্রি করে দিতেন। দুঃসময়ে সেই অর্থ তাদের কাজে লাগত। কিন্তু গোহত্যা নিষিদ্ধ হওয়ার পর তারা আর সেকাজ করতে পারছেন না। ফলে অনেকেই গরু খোলা ছেড়ে দিচ্ছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন সরকার হিন্দুত্ববাদী কর্মসূচী হিসেবে গোহত্যা কঠোরভাবে দমন করেছে। বিজেপির নির্বাচনী ইশতেহারের একটি ছিল গোহত্যা বন্ধ করা। উত্তর প্রদেশসহ ভারতের ১৮টি রাজ্যে এখন গোহত্যা অবৈধ। কট্টরপন্থী বিজেপি নেতা মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ২০১৭ সালে উত্তরপ্রদেশের ক্ষমতায় আসার পর অবৈধ অভিযোগে বেশ কয়েকটি কসাইখানা বন্ধ করে দিয়েছেন। যদিও উত্তরপ্রদেশে মাংসের ব্যবসা রমরমা। মহিষের মাংসের প্রধান রফতানিকারক রাজ্য এটি। ভারতে সাধারণত মুসলমান এবং দলিত সম্প্রদায়ের লোকজন মাংসের জন্য গরু কেনাবেচা করে এবং কসাইখানাগুলো চালায়। গোহত্যা নিষিদ্ধ হওয়ার পর গত কয়েকবছরে তারা কয়েকবারই বিজেপি বা স্থানীয় ডানপন্থী উগ্র গোষ্ঠীর গোরক্ষা বাহিনীর আক্রমণের শিকার হয়েছেন। এমনকি বাড়িতে গরুর মাংস সংরক্ষণের অভিযোগ তুলেও হামলা এবং পিটিয়ে হত্যার মতো ঘটনা ঘটেছে।
×