ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

চট্টগ্রামে ৫৫টি শিপইয়ার্ড

স্ক্র্যাপ ও পুরনো জাহাজের দাম বেড়েছে, রডের বাজার অস্থিতিশীল

প্রকাশিত: ২৩:০৯, ২৬ জানুয়ারি ২০২২

স্ক্র্যাপ ও পুরনো জাহাজের দাম বেড়েছে, রডের বাজার অস্থিতিশীল

মোয়াজ্জেমুল হক ॥ আন্তর্জাতিক বাজারে স্ক্র্যাপ জাহাজের দাম বেড়ে গেছে। এরফলে বেড়েছে স্ক্র্যাপের দাম। ফলশ্রুতিতে কাঁচামাল স্ক্র্যাপ থেকে উৎপাদিত রডের দামও ক্রমশ বাড়ছে। স্ক্র্যাপ ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের সূত্রে জানানো হয়েছে, গত পনের দিনে আন্তর্জাতিক বাজারে স্ক্র্যাপ জাহাজের মূল্য বেড়েছে টনপ্রতি ৬০ ডলার। এ মূল্যবৃদ্ধি আঘাত হেনেছে স্থানীয় বাজারে। ফলে রডের মূল্যও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। স্থানীয় বাজারে রডের মূল্য বৃদ্ধির কারণে নির্মাণ শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা বিপাকে রয়েছেন। নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে এ শিল্পে। উল্লেখ্য, দেশে লোহা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ রি-রোলিং মিলসমূহে প্রায় ৭০ শতাংশ কাঁচামাল যোগান হয় জাহাজ ভাঙ্গা (স্ক্র্যাপ) শিল্প থেকে। দেশে চট্টগ্রামেই এ শিল্পের অবস্থান। চট্টগ্রামের কুমিরা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত প্রায় ৫৫টি শিপ ইয়ার্ডে পুরনো বা স্ক্র্যাপ জাহাজ আসে এবং ভাঙ্গা হয়। বিএসবিআরএ (বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স এ্যান্ড রিসাইক্লার্স এ্যাসোসিয়েসন) সূত্রে জানানো হয়েছে, গত বছর এ সময়ে যেখানে প্রতিটন স্ক্র্যাপের দাম ছিল ৫২০ থেকে ৫২৫ ডলার সেখানে আন্তর্জাতিক বাজারে মঙ্গলবার পর্যন্ত স্ক্র্যাপ জাহাজ প্রতিটনে বিক্রি হয়েছে ৬৩৬ ডলারে। এরফলে স্টিল, স্ক্র্যাপ, স্ক্র্যাপ জাহাজের দাম যেমন বেড়েছে তেমনি ফ্রেইটও বেড়েছে। সূত্র জানায়, ইউরোপ আমেরিকা জুড়ে ওমিক্রনের ভয়াবহ প্রতিক্রিয়ার জের হিসেবে বিশ^ব্যাপী জাহাজ মালিকরা পুরনো জাহাজকে মেরামত করে চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে স্বাভাবিক অবস্থায় যেভাবে পুরনো জাহাজ স্ক্র্যাপ করা হতো এখন তা হচ্ছে না। ফলশ্রুতিতে আন্তর্জাতিক বাজারে স্ক্র্যাপ জাহাজের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। প্রসঙ্গত, সিঙ্গাপুর, দুবাই যুক্তরাষ্ট্র থেকে সাধারণত বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা স্ক্র্যাপ জাহাজ কিনে থাকে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক এ বাজারে যেসব জাহাজ বিক্রি হচ্ছে এর উর্ধগতি অস্বাভাবিক। সব মিলিয়ে কাঁচামাল সরবরাহ হ্রাস, উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি ইত্যাদির কারণে রডের মূল্য বেড়ে গেছে। বাজার সূত্র জানায়, মঙ্গলবার প্রতিটন রডের দাম সর্বোচ্চ ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। অবশ্য গ্রেডভেদে কমমূল্যের রডও রয়েছে। যে সমস্ত প্রতিষ্ঠান বিদেশ থেকে স্ক্র্যাপ আমদানি করে রড উৎপাদন করে এর মূল্য সবচেয়ে বেশি। আর স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানির পর সেখান থেকে পুরনো লোহা রিসাইক্লিংয়ের মাধ্যমে রি রোলিং মিলগুলোতে যে রড তৈরি হচ্ছে এসবের দাম সামান্য কম। সেখানেও দাম বৃদ্ধি ঘটেছে। ইয়ার্ড মালিক এবং রি রোলিং মালিকদের সূত্র জানিয়েছে, মূল্য বৃদ্ধির কারণে যোগানও অনেকটা হ্রাস পেয়েছে। স্ক্র্যাপ ইয়ার্ডগুলো থেকে উচ্চমূল্যের কারণে সরবরাহ যেমন কিছুটা হ্রাস পেয়েছে তেমনি রি রোলিং মিলগুলোতে উৎপাদনও কিছুটা কমেছে। সবকিছু মিলিয়ে তারা বলছেন, কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধিই রডের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার অন্যতম কারণ। বিএসবিআরএ সূত্র আরও জানিয়েছে, গত বছরের তুলনায় এ সময়ে স্ক্র্যাপ জাহাজ প্রতিটনে ১০০ ডলারেরও বেশি বেড়ে যাওয়া অস্বাভাবিক। ফলে জাহাজ ভাঙ্গার পর স্ক্র্যাপের মূল্য বৃদ্ধির মূল কারণ। এরপরও সংস্থার পক্ষে ধারণা দেয়া হয়েছে, গেল অর্থবছরে ৩৬ লাখ টন স্ক্র্যাপ আমদানি হয়ে আসে। এবার তা ৪০ লাখ টনে উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কেননা, দেশজুড়ে যে উন্নয়ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে এর অন্যতম অনুষঙ্গের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন গ্রেডের রড। তবে দাম বৃদ্ধির কারণে নির্মাণ শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা লোকসানের আশঙ্কা করছে। পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে এ শিল্পের কার্যক্রম থমকে যাবারও আশঙ্কা করা হচ্ছে। এখানে আরও উল্লেখ্য, গত বছর ফিনিসড প্রোডাক্ট হিসেবে প্রতিটন লোহার মূল্য ৭০ হাজার টাকায় উন্নীত হয়। কিন্তু এ বছর তা আরও ১০ হাজার বেড়ে ৮০ হাজার টাকায় উন্নীত হয়েছে।
×