নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, পটুয়াখালী ॥ সুক্ষ্ম ফাঁসের মশারি জাল দিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের রেণু পোনা নিধনের তান্ডব চলছে। কুয়াকাটা সংলগ্ন গভীর সাগরবক্ষে পূর্বদিকের চরবিজয়ে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। দিনে-রাতে সুক্ষ্ম ফাঁসের নেট দিয়ে মাইলের পর মাইল এলাকাজুড়ে বেড় দিয়ে ঘেরা থাকে এ চরটি। সাগরে ভাঁটার সময় এই জাল নিচু করে বেলাভূমে ফেলে চারদিকে বেড় দেয়া হয়। ঘিরে ফেলা হয় গোটা চরকে। জোয়ারে চরটি ডুবে গেলে জালটি উপরে তুলে দেয়া হয়। এরপরে সকল প্রজাতির মাছের রেণু পোনা থেকে শুরু করে মাছগুলো ধরা পড়ে। এভাবে প্রতিদিন কোটি কোটি মাছের পোনা ধরে খুলনা অঞ্চলে নিয়ে বিক্রি করা হয়। ফলে সাগরের মৎস্য সম্পদ ধ্বংস হয়ে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
যেখানে সরকার ইলিশের পোনাসহ জাটকা নিধন বন্ধে দেশব্যাপী নৌপুলিশ, কোস্টগার্ডসহ মৎস্যবিভাগ বিভিন্ন ধরনের অভিযান অব্যাহত রেখেছে। সেখানে একটি বিশেষ মহল সাগরে সুক্ষ্ম ফাঁসের জাল দিয়ে ইলিশসহ সকল ধরনের মাছের রেণু পোনা ধরছে। বর্তমানে এই পোনা ধরার প্রবণতা অনেকটা ফ্রি-স্টাইলে চলছে। চরবিজয়ের মতো নিরিবিলি এলাকায় এই মাছের রেণু পোনা ধরার রীতিমত তান্ডব চলছে। একেকবারে বেড় জালে কোটি কোটি পোনা ধরা পড়ছে।
মোঃ কামাল হোসেন নামের এক জেলে জানান, তারা এই রেণু পোনা তারা পেটের দায়ে ধরছেন। খুলনা অঞ্চলে নিয়ে বিক্রি করছেন। কুয়াকাটা ট্যুর গাইড এসোসিয়েশন এর সভাপতি কে এম বাচ্চু জানান, ইলিশসহ শতাধিক প্রজাতির সামুদ্রিক মাছের পোনা চরবিজয় এলাকায় নিধন হচ্ছে। বিশেষ করে ইলিশ, পোমা, ফালিশা, তপসি প্রজাতির পোনা বেশি নিধন হচ্ছে। বাচ্চুর দাবি, বিশাল এরিয়া জুড়ে জেগে ওঠা চর বিজয়ের তিনদিকে অগভীর এলাকা, একদিকে গভীর। অগভীর এলাকায় প্রত্যেক মাসের পূর্ণিমার তিন দিনে এবং অমাবস্যার তিন দিনে জো থাকে। তখন এই প্রজনন এলাকায় সুক্ষ্ম ফাঁসের ৪০০-৫০০ হাত লম্বা এক ধরনের মশারি নেট দিয়ে বেড় দিয়ে টেনে সকল ধরনের পোনা ধরা হয়।
এছাড়া ক্ষুদ্র ফাঁসের বেড় জাল তো আছেই। আছে জাটকা নিধনের জাল পর্যন্ত। বেড় জাল, চরখুডা ও মশারি নেট দিয়ে বিভিন্ন অঞ্চলের জেলেরা পূর্ণিমা-অমাবস্যার জোতে এক দিনে ২০-৫০ মণ রেণু পোনা শিকার করে। যেন সাগরের সৎস্য সম্পদ নিধনের তান্ডব চলে। দুর্গম যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে কলাপাড়া উপজেলা প্রশাসন থেকে শুরু করে মৎস্য বিভাগ, নৌ-পুলিশ প্রতিদিন ওই স্পটে অভিযান পরিচালনা করতে পারে না। তারপরও মাঝে-মধ্যে অভিযান পরিচালনা করলেও কয়েকদিন পরে আবার নিধন প্রক্রিয়া চলতে থাকে। সিনিয়র কলাপাড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা জানান, ১৫-২০ দিন আগে এক দফা অভিযান চালানো হয়েছে। জাল, চরের অস্থায়ী ঝুপড়িঘর, খুটি সব পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ফের শীঘ্রই অভিযান চালাবেন বলে জানালেন এই কর্মকর্তা।