স্টাফ রিপোর্টার ॥ হলিউড তারকা লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও সেন্টমার্টিন দ্বীপের প্রাণ বৈচিত্র্য রক্ষায় ভূমিকা রাখার জন্য একটি টুইট করে বাংলাদেশ সরকার, স্থানীয় জনগোষ্ঠী ও বেসরকারী সংস্থাগুলোকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
টুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘সেন্টমার্টিন দ্বীপের চারপাশে নতুন প্রতিষ্ঠিত সামুদ্রিক সুরক্ষিত অঞ্চলের জন্য বাংলাদেশ সরকার, স্থানীয় জনগোষ্ঠী এবং এনজিওগুলোকে অভিনন্দন যা সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা এবং বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপে নিরাপদ আবাস নিশ্চিত করবে।’ টুইটের সঙ্গে তিনি বাংলাদেশের সেন্টমার্টিন দ্বীপের একটি ছবিও শেয়ার করেছেন।
কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে নয় কিলোমিটার দক্ষিণে নাফ নদীর মোহনায় অবস্থিত দ্বীপটি বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। সেন্টমার্টিন দ্বীপটি নারিকেল জিঞ্জিরা হিসেবে পরিচিত। প্রচুর নারিকেল পাওয়া যায় বলে এ নামটি অনেক আগে থেকেই পরিচিত হয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকার জন্য লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও পরিচিত রয়েছে। কিন্তু কেন তিনি বাংলাদেশের সেন্টমার্টিন সুরক্ষায় এই অভিনন্দন বার্তা জানালেন ? তার কারণ সেন্টমার্টিনকে রক্ষায় সরকারের পদক্ষেপ। সম্প্রতি সরকার তথা পরিবেশ বন ও জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সেন্টমার্টিন দ্বীপকে মেরিন প্রোটেক্টেড এরিয়া হিসেবে ঘোষণা করেছে। এরমধ্য দিয়ে এই অঞ্চলটি সামুদ্রিক সুরক্ষিত অঞ্চল হিসেবে বিশেষ মর্যাদা পেল এবং সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বিশেষ বিধিনিষেধ আরোপ করা হলো। পরিবেশবাদীরা দীর্ঘদিন ধরেই সেন্টমার্টিন দ্বীপকে সামুদ্রিক সুরক্ষিত অঞ্চল হিসেবে ঘননার দাবি জানিয়ে আসছিল। এখন সরকারকে এই এলাকা রক্ষায় আলাদাভাবে নিয়মকানুন তৈরি করে তা কার্যকর করতে হবে।
বাংলাদেশের সরকার গত ৪ জানুয়ারি সেন্টমার্টিন দ্বীপসহ আশপাশের ১ হাজার ৭৪৩ বর্গকিলোমিটার এলাকাকে মেরিন প্রোটেক্টেড এরিয়া (এমপিএ) ঘোষণা করেছে। এর আগে সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ডকে এমপিএ ঘোষণা করা হয়েছিল। ‘সেন্টমার্টিন মেরিন প্রোটেক্টেড এরিয়া’ ঘোষণার ফলে বৈশ্বিকভাবে হুমকির সম্মুখীন গোলাপী ডলফিন, হাঙ্গর, রে মাছ, সামুদ্রিক কাছিম, সামুদ্রিক পাখি, প্রবাল, সামুদ্রিক ঘাস এবং সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য ও এদের আবাসস্থল সংরক্ষণ, সামুদ্রিক মাৎস্য সম্পদের টেকসই আহরণের মাধ্যমে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবিকার মানোন্নয়ন, জাতীয় সুনীল অর্থনীতিকে সমৃদ্ধকরণ এবং বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা ও অভীষ্ট লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়ক হবে।
উল্লেখ্য, সিঙ্গাপুরের সিস্টারস আইল্যান্ড, ফিলিপিন্সের এ্যাপো আইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়ার নর্থ সুলাওয়েসি মেরিন প্রোটেক্টেড এরিয়ার অন্যতম উদাহরণ।
প্রকৃতি সংরক্ষণ বিষয়ক সংস্থাগুলোর জোট আইইউসিএনের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, যখন কোন এলাকাকে মেরিন প্রোটেক্টেড এলাকা ঘোষণা করা হয়, তার মানে হলো এমন একটি সুরক্ষিত ব্যবস্থাপনা ওই এলাকায় চালু করা, যা সেখানকার প্রকৃতি রক্ষায় কাজ করবে। অর্থনৈতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র্য রক্ষা বা বিশেষ কোন প্রজাতির সুরক্ষা- অনেকগুলো কারণে কোন এলাকাকে মেরিন প্রোটেক্টেড এরিয়া ঘোষণা করা হতে পারে।
এজন্য স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সঙ্গে নিয়ে এমন কৌশল তৈরি করতে হবে, যার ফলে সার্বক্ষণিক নজরদারি ও তদারকির মাধ্যমে সুরক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে হবে।