ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ২৩:৩১, ২১ জানুয়ারি ২০২২

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ আজকের ইন্টারনেটের যুগে কত কী নিয়ে থাকে প্রজন্ম! গোটাবিশ্ব তাদের হাতের মুঠোয়। বিনোদনের জন্য যত যা চাই, চাওয়া মাত্রই পাওয়া যাচ্ছে। ফেসবুক, ইউটিউব, নেটফ্লিক্স ঘুরে দিব্যি দিনরাত কেটে যায়। আছে হলিউডের ব্লকবাস্টার সিনেমা। জেমস বন্ডে অপলক চোখ। অথচ কিছুকাল আগেও এসব ছিল দূরকল্পনা। চিন্তাও করা যেত না। এবং ঠিক তখন মাসুদ রানা হয়ে উঠেছিল তারুণ্যের প্রধান আশ্রয়। এই থ্রিলার পাঠে যে রোমাঞ্চ তা আর কিছুতে খুঁজে পায়নি সে সময়ের তারুণ্য। তাদের শৈশবকে দারুণ রাঙিয়ে দিয়েছিল সেবা প্রকাশনীর মাসুদ রানা সিরিজ। আজ যখন পাঠাভ্যাস কমতে কমতে তলানীতে তখনও সিরিজটি তার ঈর্ষণীয় জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছে। অথচ তুমুল জনপ্রিয় এ চরিত্রের স্রষ্টা কাজী আনোয়ার হোসেন আর নেই! মাসুদ রানাকে নিজের মগজের কোষে যিনি জন্ম দিয়েছিলেন, কলমের কালিতে জীবন্ত করে তুলেছিলেন যিনি; সেই তিনি গত বুধবার চিরপ্রস্থান গ্রহণ করেছেন। নিভৃতচারী আসলে কাকে বলে তার সর্বোৎকৃষ্ট উদাহরণ কাজী আনোয়ার হোসেন। সে উদাহরণ আমাদের জন্য রেখে বিদায় নিয়েছেন কাজী দা। ৮৫ বছর বয়সী জীবনের প্রায় পুরোটাই শহর ঢাকায় কাটিয়ে গেছেন তিনি। এ শহরে কত বিজ্ঞাপন, বিলবোর্ড, টিভিসি! ভাইরাল যুগটাও তিনি দেখে গেছেন। কিন্তু সব কিছু থেকে সচেতন চেষ্টায় মুক্ত রেখেছেন নিজেকে। তা রেখেছেন। কয়েক প্রজন্মের পাঠকের হৃদয়াসনে একমাত্র রাজাও ছিলেন তিনি। কাজী আনোয়ার হোসেন ১৯৬৬ সালে সেবা প্রকাশনী প্রতিষ্ঠা করেন। ‘মাসুদ রানা’ সিরিজ লেখার শুরু তখন থেকেই। তারও আগে ‘কুয়াশা’ নামে আরেকটি জনপ্রিয় চরিত্রের জন্ম দেন তিনি। তার পরের ইতিহাস তো সবার জানা। বিপুল সমাদৃত হয় চরিত্র দুটি। বিশেষ করে মাসুদ রানা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে সুপার হিরো হয়ে আছে। চরিত্রটির মাঝে বেঁচে আছেন কাজী আনোয়ার হোসেন নিজেও। তার ভাষায়: আমি যা হতে পারিনি, তাই মাসুদ রানা। পাঠাভ্যাস গঠনে বিপুল ভূমিকা রাখা এই লেখক রাষ্ট্রীয় কোন স্বীকৃতি পাননি। দরকারও ছিল না। পাঠকই তার পুরস্কার। এমন পুরস্কার কজনের ভাগ্যে জুটে? বায়ুদূষণে শীর্ষে ঢাকা ॥ ঢাকার দূষণ নিয়ে কথা তো কম হলো না। কিন্তু পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে কই? সর্বশেষ বৃহস্পতিবার জানা গেল, বিশ্বে বায়ুদূষণে শীর্ষস্থান দখল করেছে রাজধানী ঢাকা। এদিন দুপুর ১২টায় ঢাকার বায়ুদূষণের মাত্রা ছিল সর্বোচ্চ পর্যায়ে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এয়ার ভিজ্যুয়ালের বায়ুমান সূচক (একিউআই) থেকে এ তথ্য জানা যায়। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে চীনের উহান ও কাজাখস্তানের নুর সুলতান শহর। শহর দুটির দূষণের মাত্রা যথাক্রমে ২৩১ ও ২২৯। বিশ্বের বায়ুমান যাচাই বিষয়ক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটি বলছে, বৃহস্পতিবার ঢাকায় বায়ুদূষণের মানমাত্রা ছিল ২৪১। আগের দিন বুধবার সকাল ১০টায় ২৬৯ রেকর্ড করা হয়। একিউআই স্কোর ২০১ থেকে ৩০০ হলে স্বাস্থ্য সতর্কতা জারি বা জরুরী অবস্থা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সে হিসেবে ঢাকার বায়ুদূষণের মাত্রা ছিল ভয়াবহ পর্যায়ে। এ অবস্থায় শিশু, প্রবীণ ও অসুস্থদের বাড়ির বাইরে বের না হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। বাকিদের করোনার জন্য তো বটেই, বায়ুদূষণ থেকে বাঁচতে মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ছয় ধরনের পদার্থ এবং গ্যাসের কারণে ঢাকায় দূষণের মাত্রা অনেক বেড়ে গেছে। এর মধ্যে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ধূলিকণা, মানে, পিএম ২.৫ ঢাকার দূষণ বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রেখেছে। এর আগে ক্যাপসের গবেষণা থেকে আরও কিছু তথ্য উঠে এসেছিল। সে অনুযায়ী, রাজধানীতে ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে গড় বায়ুদূষণ বেড়েছে ৯ দশমিক ৮ ভাগ। বায়ুমান সূচক অনুযায়ী, গড়ে ২০২০ সালে দূষণের মাত্রা ছিল ১৪৫, যা ২০২১ সালে ১৫৯ দশমিক ১ হয়ে ধরা দেয়। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে বায়ুমান সূচকের গড় মাত্রা ছিল ২৩৫ দশমিক ১। পরের বছর ২০২১ সালের জানুয়ারিতে বেড়ে ২৬১ দশমিক ৬ হয়। বলা চলে, এরই ধারাবাহিকতায় বায়ুদূষণে শীর্ষস্থান দখলে নিল ঢাকা। কিন্তু আমরা কি এ দূষণ নিয়ে আদৌ ভাবছি? করোনাকালে চলচ্চিত্র উৎসব ॥ করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। বন্ধের পথে সব উৎসব-অনুষ্ঠান। কিন্তু ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব সবাইকে অবাক করে দিয়ে দিব্যি চলছে। দর্শক কম। তবে ছবি দেখা থেমে নেই। গত শনিবার রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরে এ উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। ‘নান্দনিক চলচ্চিত্র, মননশীল দর্শক, আলোকিত সমাজ’ স্লোগানে আগামী ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে। এবারও প্রধান দুটি ভেন্যু পাবলিক লাইব্রেরি ও জাতীয় জাদুঘর। উৎসব উপলক্ষে উভয় ভেন্যু মোটামুটি সাজিয়ে নেয়া হয়েছে। জাতীয় জাদুঘরের দুটি মিলনায়তনে উৎসবের সিনেমা দেখানো হচ্ছে। প্রধান মিলনায়তন ও কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে একযোগে চলছে প্রদর্শনী। পাশেই পাবলিক লাইব্রেরীর শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তন, সেখানেও সিনেমা দেখানো হচ্ছে। শিল্পকলা একাডেমিতে দেখতে চাইলে যেতে হবে জাতীয় চিত্রশালা ও নৃত্যশালা মিলনায়তনে। ধানম-ির যারা, তাদের জন্য থাকছে আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ। চাইলে মধুমিতা সিনেমা হল এবং বসুন্ধরা সিটি ও সীমান্ত স্কয়ারের স্টার সিনেপ্লেক্সেও উৎসবের ছবি দেখা যাবে। উৎসবে বাংলাদেশসহ ৭৩ দেশের ২২৭টি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে এসব ছবি দেখা যাবে। সুযোগ থাকলে যান। দেখে আসুন। একসঙ্গে এত নতুন ও মানসম্পন্ন ছবি দেখার সুযোগ খুব কম পাওয়া যায়।
×