ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পাবনায় মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের ৮তম প্রয়াণ দিবস পালন

প্রকাশিত: ১৪:৪৯, ১৭ জানুয়ারি ২০২২

পাবনায় মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের ৮তম প্রয়াণ দিবস পালন

নিজস্ব সংবাদদাতা, পাবনা ॥ পাবনায় বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের ৮ম প্রয়াণ দিবস পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে আজ সোমবার সকাল সাড়ে ১১ টায় সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংগ্রহ শালায় স্থাপিত মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ অর্পণ,স্মরণসভা,চলচ্চিত্র প্রদর্শনির আয়োজন করা হয়। সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষরণ পরিষদের উপদেষ্টা কৃষিবিদ জাফর সাদিকের সভাপতিত্বে স্মরণ সভায় বক্তব্য রাখেন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. হাবিবুল্লা,পাবনা প্রেসক্লাব সভাপতি এ বি এম ফজলুর রহমান,সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক সরোয়ার উল্লাস,আবৃতিকার মতিউর মুন্তাসির,সঙ্গীত শিল্পি মাজহারুল ইসলাম,আবৃতিকার অঞ্জলি ভৌমিক, সমাজসেবক বিনয় জ্যোতি কুন্ডু ও সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষরণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ড. নরেশ মধু প্রমুখ। এছাড়াও সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংগ্রহ শালায় দিনব্যপি সুচিত্রা অভিনিত চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। ১৯৩১ সালের ৬ এপ্রিল পাবনায় সুচিত্রা সেনের জন্ম। তখন নাম ছিল রমা দাশগুপ্ত। বাবা করুণাময় দাশগুপ্ত ছিলেন পেশায় শিক্ষক। তিনি ছিলেন বাবা-মায়ের পঞ্চম সন্তান। পাবনাতেই রমা দাশগুপ্তের পড়াশুনা, বেড়ে ওঠা। তিনি মহাকালি পাঠশালা এবং পাবনা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করেন। এরপর তিনি পশ্চিমবঙ্গে গমন করেন। ১৯৪৭ সালে শিল্পপতি আদিনাথ সেনের ছেলে দিবানাথ সেনের সঙ্গে তার বিবাহ হয় । সুচিত্রা তখনও রুপালি পর্দায় আসেননি। ১৯৫২ সালে রমা দাশগুপ্ত এলেন বাংলা সিনেমায়। নাম দেয়া হলো সুচিত্রা সেন। 'শেষ কোথায়' তাঁর প্রথম ছবি। ১৯৫৩ সালে উত্তম কুমারের বিপরীতে 'সাড়ে চুয়াত্তর' ছবিতে অভিনয় করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন সুচিত্রা। ১৯৫৫ সালে 'দেবদাস' ছবিতে অভিনয় করে পুরস্কৃত হন। ১৯৫৯ সালে 'দীপ জ্বেলে যাই' ছবিতে নার্সের ভূমিকায় অভিনয় করে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেন। ১৯৬৩ সালে সুচিত্রা 'উত্তরফাল্গুনি ছবিতে মা এবং মেয়ের দ্বৈত ভূমিকায় অভিনয় করেন। বিপরীতে ছিলেন বিকাশ রায়। তাঁর শেষ ছবি হল 'প্রণয়পাশা' (১৯৭৮)। সারা জীবনে তিনি ৫৯টি বাংলা ছবিতে অভিনয় করেছেন। হিন্দি ভাষায় সুচিত্রা সেনের সর্বজনপ্রশংসিত ছবি হল 'আঁধি' (১৯৭৪)। তিনি সঞ্জীবকুমারের বিপরীতে অভিনয় করেন। তাঁর অভিনীত অন্যান্য হিন্দি ছবি হল 'মুসাফির', 'মমতা', 'বোম্বাই কা বাবু' ইত্যাদি। জীবনে কম পুরস্কার পাননি তিনি। বেস্ট অ্যাকট্রেস অ্যাওয়ার্ড ছাড়াও ১৯৭২ সালে পেয়েছেন 'পদ্মশ্রী'। ২০০৫ সালে তাঁকে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু, তিনি অন্তরাল ভেঙে পুরস্কার নিতে রাজি হননি বলে তাঁর হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া সম্ভব হয়নি। বারবার বিভিন্ন জন আবেদন জানালেও তিনি অন্তরাল ছেড়ে বেরিয়ে আসতে রাজি হননি। ২০১২ সালে তাঁকে 'বঙ্গবিভূষণ' পুরস্কার দেয় পশ্চিমবঙ্গ সরকার। ১৯৫২ সালে শেষ কোথায় ছবির মাধ্যমে তার চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু হলে ও ছবিটি মুক্তি পায়নি। উত্তম কুমারের বিপরীতে সাড়ে চুয়াত্তর ছবিতে তিনি অভিনয় করে দর্শকমহলে ব্যাপক সাড়া ফেলেন। ছবিটি বক্স-অফিসে সাফল্য লাভ করে এবং উত্তম-সুচিত্রা জুটি উপহারের কারণে আজও স্মরনীয় হয়ে আছেন। বাংলা ছবির এই অবিসংবাদিত জুটি আজও বাঙ্গালীর হৃদয়ে স্থায়ী আসনে অধিষ্টিত রয়েছেন। ১৯৫৫ সালের দেবদাস ছবির জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার পান। যা ছিল তার প্রথম হিন্দি ছবি। উত্তম কুমারের সাথে বাংলা ছবিতে রোমান্টিকতা সৃষ্টির জন্য তিনি বাংলা চলচ্চিত্রের সবচেয়ে বিখ্যাত অভিনেত্রী। স্বামী মারা যাওয়ার পরও তিনি অভিনয় চালিয়ে যান। সে সময় হিন্দি ছবি আন্ধি চলচ্চিত্রে তিনি একজন নেত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করেন। বলা হয় যে চরিত্রটির প্রেরণা এসেছে ইন্দিরা গান্ধী থেকে। এই ছবির জন্য তিনি ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে মনোনয়ন পান এবং তার স্বামী চরিত্রে অভিনয় করা সঞ্জীব কুমার শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার জেতেন। হিন্দি চলচ্চিত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে প্রতিবছর দাদাসাহেব সম্মাননা প্রদান করে ভারত সরকার। চলচ্চিত্রের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ এ সম্মাননা নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন সুচিত্রা সেন। ২০০৫ সালে দাদাসাহেব সম্মাননা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন তিনি। সম্মাননা নিতে কলকাতা থেকে দিল্লি যেতে চাননি বলেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। সুচিত্রা অভিনীত শাপমোচন (১৯৫৫), সাগরিকা (১৯৭৬), শিল্পী (১৯৭৬), হারানো সুর (১৯৫৭), পথে হলো দেরী (১৯৫৭), জীবন তৃষ্ণা (১৯৫৭), রাজলক্ষী ও শ্রীকান্ত (১৯৫৬), ইন্দ্রাণী (১৯৫৮), দ্বীপ জ্বেলে যাই (১৯৫৯), চাওয়া পাওয়া (১৯৫৯), হসপিটাল (১৯৬০), বোম্বাই কা বাবু (১৯৬০), সপ্তপদী (১৯৬১), বিপাশা (১৯৬২), সাত পাকে বাধা (১৯৬৩), স্মৃতিটুকু থাক (১৯৬০), চন্দ্রনাথ (১৯৫৭), মেজ বৌ (১৯৫৫), সাঁঝের প্রদীপ (১৯৫৫), গৃহপ্রবেশ (১৯৫৪), অগ্নি পরীক্ষা (১৯৫৪), মরণের পরে (১৯৫৪), দেবদাস (১৯৫৫), ভালবাসা (১৯৫৫), সবার উপরে (১৯৫৫), শুভরাত্রি (১৯৫৬), একটি রাত (১৯৫৬), মুসাফির (১৯৫৭) আজও বাংলা ভাষাভাষীর হৃদয়ে ঝড় তোলে। বাংলা চলচ্চিত্রের এ মহানায়িকা ২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি ভারতীয় সময় সকাল ৮টা ২৫ মিনিটে কলকাতার বেল ভিউ হাসপাতালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে কোটি কোটি বাঙ্গালি চলচ্চিত্র প্রেমিদেও কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে গমন করেন।
×