ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

অন্তিম শয়ানে কিংবদন্তি ফুটবলার সেলিম

প্রকাশিত: ০১:৪৮, ৬ জানুয়ারি ২০২২

অন্তিম শয়ানে কিংবদন্তি ফুটবলার সেলিম

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশের ফুটবল থেকে আরেকটি নক্ষত্র ঝরে পড়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশের ফুটবলের এগিয়ে চলার পথে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা খেলোয়াড় এবং ভারতের বিরুদ্ধে প্রথম জয়ের কারিগর সহিদ উদ্দিন আহমেদ সেলিম পাড়ি জমিয়েছেন না ফেরার দেশে। জাতীয় দলের সাবেক এই অধিনায়ক ও কোচ বুধবার ভোরে চিকিৎসারত অবস্থায় মারা গেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর। সাবেক তারকা এই ফুটবলারের মৃত্যুতে শোকে ভাসছে দেশের ক্রীড়াঙ্গন। গতকাল নিউজিল্যান্ডে টেস্টে ইতিহাস গড়া জয় পেয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল। সেই ক্ষণে সেলিমের মৃত্যুর খবরে ক্রীড়াঙ্গনের সবার মধ্যে শোক নেমে আসে। তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে), ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাব লিমিটেড, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেড, ব্যতিক্রমধর্মী মোহামেডান সমর্থকগোষ্ঠী মহাপাগল, সাবেক ও বর্তমান ফুটবলারসহ আরও অনেকে। সহিদ উদ্দিন সেলিম মরণব্যাধি ক্যান্সারের কাছে হার মেনেছেন। তার দাঁতের মাড়িতে টিউমার ধরা পড়েছিল। ২০২০ সালের মাঝামাঝি সেটা রূপ নেয় ক্যান্সারে। ছয় মাস আগে অস্ত্রোপচার করার পর সুস্থ হয়ে বাড়িও ফিরেছিলেন। চিকিৎসার অংশ হিসেবে ওই সময় তিনটি কেমো দিয়েছিলেন। কিন্তু মঙ্গলবার রাতে শ্বাসকষ্ট শুরু হলে পুনরায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সেলিম। বুধবার গোপীবাগে ব্রাদার্স ইউনিয়ন মাঠে জানাজার পর বনানী করবস্থানে মা-বাবার কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হয়েছেন ব্রাদার্স ক্লাবের এই প্রাণপুরুষ। কুয়েতে ১৯৮১ সালে এশিয়া কাপের চূড়ান্ত পর্বে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সহিদ উদ্দিন সেলিম। ১৯৯১ সালে কলম্বো সাফ গেমসে ছিলেন জাতীয় দলের কোচের দায়িত্বে। ওই টুর্নামেন্টেই আন্তর্জাতিক ফুটবলে ভারতের বিরুদ্ধে প্রথম জয়ের স্বাদ পায় লাল-সবুজের দেশ। ম্যাচটি বাংলাদেশ জিতেছিল ২-১ গোলে। দেশের ঐতিহ্যবাহী ক্লাব ব্রাদার্স ইউনিয়ন ফুটবল দলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠার পর তার ধরেই বাংলাদেশের ফুটবলে শক্ত ভিত পায় ক্লাবটি। তিনি ব্রাদার্সের অধিনায়ক ছিলেন টানা ১০ বছর। গোপীবাগে রামকৃঞ্চ মিশন রোডে সহিদ উদ্দিন সেলিমের বাড়িতে ক্যাম্প হতো ব্রাদার্সের। এজন্য বলা হতো ‘ব্রাদার্সের আরেক নাম সহিদ উদ্দিন সেলিম’। প্রতিষ্ঠার দুই বছর পর দ্বিতীয় বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়ে প্রথম বিভাগে উঠে আসে ব্রাদার্স। ১৯৭৫ সালে ঢাকার প্রথম বিভাগে খেলতে নেমেই ওই সময়ের লীগ জয়ী আবাহনী ক্রীড়া চক্রকে হারিয়ে হৈচৈ ফেলে দেয় সেলিমের ব্রাদার্স। ১৯৮০ সালে প্রথম ফেডারেশন কাপেই মোহামেডানের সঙ্গে যৌথভাবে চ্যাম্পিয়ন হয় ব্রাদার্স। পরের বছর ঢাকায় অনুষ্ঠিত আগাখান গোল্ডকাপে ব্রাদার্স যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন হয় থাইল্যান্ডের ব্যাংকক ব্যাংক ক্লাবের সঙ্গে। ক্লাবটির এমন স্বর্ণসাফল্যে সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছেন সদ প্রয়াত সেলিম। কিংবদন্তি সেলিমের আরেকটি পরিচয় আছে। তিনি ঢাকা শহরের অন্যতম সাংস্কৃতিমনা রুচিশীল পরিবারের সন্তান।
×