ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রায় দ্রুত কার্যকর চান বুয়েট ভিসি

প্রকাশিত: ২৩:০৮, ৯ ডিসেম্বর ২০২১

রায় দ্রুত কার্যকর চান বুয়েট ভিসি

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে উপাচার্য অধ্যাপক সত্যপ্রসাদ মজুমদার বলেছেন, আমরা সবাই সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়েছি, সর্বোচ্চ শাস্তিই হয়েছে। এখন আমরা আশা করি, এ রায় যেন দ্রুত ও স্বল্প সময়ের মধ্যে কার্যকর করা হয়। ভবিষ্যতে কোন শিক্ষার্থী এমন কর্মকা-ে জড়িত থাকলে তাদেরও সর্বোচ্চ শাস্তি ভোগ করতে হবে বলে জানান উপাচার্য। এদিকে রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বুয়েট শিক্ষার্থীরা বলেন, আদালতের প্রতি সকলের আস্থার প্রতিফলন ঘটেছে। বুধবার দুপুরে রায়ের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে সাংবাদিকদের কাছে নিজের মনোভাব তুলে ধরেন বুয়েট উপাচার্য। তিনি বলেন, আমাদের দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষিত রায় আজ পেয়েছি। খুব দ্রুতই রায় হয়েছে। তবে কোভিড পরিস্থিতি না থাকলে এ রায় আরও দ্রুত হতো। বিচার বিভাগের এ রায়ের ওপর আমাদের আস্থা রাখা উচিত। তবে বুয়েটে সাজাপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের জন্য মর্মাহত উল্লেখ করে বলেন, আমি বিভাগীয় প্রধান, ডিন এবং প্রভোস্টও ছিলাম। ইলেকট্রিক্যাল বিভাগের শিক্ষক ছিলাম। আমি আমার ছাত্রদের খুব ভালবাসি। বুয়েট ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক সহমর্মিতার পরিবেশ ফিরে আসার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, আমাদের সময় একেকজন ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত থেকেও একসঙ্গে ক্লাস করেছি। আমরা চাই, বুয়েট ক্যাম্পাসে সেই জিনিসটা আবার ফিরে আসুক। শিক্ষার্থীদের মধ্যে যেন পূর্বের সেই ভালবাসা এবং মানবতাবোধ ফিরে আসে। এ জন্য আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আরও নিবিড়ভাবে কাজ করার চেষ্টা করছি। আবরার ফাহাদ হত্যা মামলা চালাতে গিয়ে এখন পর্যন্ত বুয়েটের ৫৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে বলে উপাচার্য অধ্যাপক সত্যপ্রসাদ মজুমদার জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আবরারের পরিবারকে প্রতিমাসে ৭৫ হাজার টাকা দিচ্ছি। এছাড়া আইনী সহায়তা ও আইনজ্ঞের যে ফি এবং স্টুডেন্টদের আনা-নেয়া করা, সাক্ষী হিসেবে খরচ, আনুষঙ্গিক সব খরচ, এমনকি ঢাকায় এসে থাকার খরচ সবকিছু আমরা বুয়েট থেকে বহন করেছি। প্রায় ৫৫ লাখ টাকা এ পর্যন্ত গেছে। এর বাইরে প্রতিমাসে যেটা দেয়া হচ্ছে সেটা ১২ বছর দেয়া হবে। ওনারা আর্থিকভাবে সঙ্কটে পড়েছেন। ভবিষ্যতে উনি যদি আমাদের কাছে চান এই সাপোর্ট আমরা অবশ্যই দেব। এই রায়ে সারাদেশের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সতর্ক হবে উল্লেখ করে বুয়েটের ছাত্র কল্যাণ উপদেষ্টা অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, এই রায়ের মাধ্যমে একটা কঠোর বার্তা যাবে যে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কেউ এ ধরনের অপরাধ করলে তাদের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি অপেক্ষা করছে। আবাসিক হলগুলোতে যে র‌্যাগিং বা শিক্ষার্থী নির্যাতন হয়, এই রায়ের ঘটনায় তা অনেকটাই কমবে। এদিকে মৃত্যুদ-াদেশ প্রাপ্ত ২০ জনের ফাঁসি দ্রুত কার্যকরের দাবি জানিয়েছেন বুয়েটের শিক্ষার্থীরা। বুধবার দুপুর আড়াইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সামনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান তারা। রায়ের প্রতিক্রিয়ায় শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা আবরারের পরিবারের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে বলতে চাই, এই রায় যেন শেষ পর্যন্ত বহাল থাকে। তারা বলেন, বুয়েট ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দ্বারা পরিকল্পিতভাবে নির্মম নির্যাতনে নিহত বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার রায়ে সকলের আস্থার প্রতিফলন ঘটেছে। সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে তিনজন (এহতেশামুল রাব্বি তানিম, মুজতবা রাফিদ, মোর্শেদ-উজ-জামান ম-ল জিসান) এখনও পলাতক। পলাতক তিনজনকে দ্রুততম সময়ে আইনের আওতায় এনে রায় কার্যকর করার দাবি জানাচ্ছি। আমাদের প্রত্যাশা ভবিষ্যতে বাংলাদেশের কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-শিক্ষককে যেন রাজনৈতিক অপসংস্কৃতির বলি না হতে হয় এবং সকল ক্ষেত্রে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকে। এছাড়া এ রায় বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বলেও উল্লেখ করেন তারা।
×