ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আয়ান আব্রাজ

কন্টার আলোচিত অবসর

প্রকাশিত: ০০:১৩, ৮ ডিসেম্বর ২০২১

কন্টার আলোচিত অবসর

ভক্ত-অনুরাগীদের অবাক করেই টেনিসকে বিদায় বললেন জোহানা কন্টা। গত বুধবার অবসরের ঘোষণা দেন সাবেক ব্রিটিশ নাম্বার ওয়ান এই তারকা। গত কয়েক মৌসুম ধরেই ক্রমাগত হাঁটুর সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। যে কারণেই শেষ পর্যন্ত এমন কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হলেন কন্টা। এর ফলে আর টেনিস কোর্টে দেখা যাবে না বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের সাবেক চার নাম্বার এই খেলোয়াড়কে। সামাজিক যোগাযোগের জনপ্রিয় মাধ্যম ইন্সটাগ্রামে নিজের অবসরের ঘোষণা দেন তিনি। গ্রেট ব্রিটেনের সফল এই প্রতিনিধি ‘কৃতজ্ঞ’ শিরোনামে একটি পোস্ট দিয়েতার ে ঘাষণা দেন। যেখানে জোহানা কন্টা লিখেছেন, ‘এটি এমন শব্দ যা আমি সম্ভবত আমার ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করেছি এবং আমি মনে করি যে শব্দটি শেষ পর্যন্ত এটি সবচেয়ে ভালো ব্যাখ্যা করে। আমার ক্যারিয়ারের সমাপ্তি টানতে যাচ্ছি। এই মুহুর্তেও আমার পুরো অবিশ্বাস্য ক্যারিয়ারের জন্য আমি কৃতজ্ঞ।’ অথচ, তার বয়স মাত্র ৩০ বছর। টেনিস কোর্টে এ বয়সেও দাপুটে খেলে যাচ্ছেন অনেকেই। দুটি গ্র্যান্ডস্লামের মালিক সিমোনা হ্যালেপের বয়সও কন্টার সমান। ৩১ ছাড়িয়ে গেছেন পেত্রা কেভিতোভা। ভিক্টোরিয়া আজারেঙ্কার বয়স ৩২। তিন গ্র্যান্ডস্লামের মালিক এ্যাঞ্জেলিক কারবারের বয়স ৩৩। উইলিয়ামস পরিবারের দুই মেয়ে সেরেনা এবং ভেনাস উইলিয়ামস এখনও টেনিস কোর্টের রাজা। ২৩ গ্র্যান্ডস্লামজয়ী সেরেনার বয়স চল্লিশ। ৭ গ্র্যান্ডস্লাম জয়ী ভেনাসের বয়স ৪১। তারপরও অবসর নিয়ে ভাবনা নেই তাদের কারও। কিন্তু ব্রিটিশ তারকা এ বয়সেই টেনিস থেকে অবসরের ঘোষণা দিতে বাধ্য হলেন মূলত চোটের কারণে। ক্যারিয়ারে মাত্র চারটি শিরোপা জয়ের স্বাদ পেয়েছেন তিনি। জীবনের সেরা অর্জন এসেছিল ২০১৭ সালে। মিয়ামি ওপেনের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর। সেবার রোমানিয়ার সিমোনা হ্যালেপ, আমেরিকার ভেনাস উইলিয়ামস এবং ডেনমার্কের সাবেক তারকা ক্যারোলিন ওজনিয়াকিকেও হারিয়েছিলেন জোহানা কন্টা। এছাড়া স্ট্যানফোর্ডে দুইবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন তিনি। ২০১৬ এবং ২০১৭ সালে টানা দুইবার এই টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন তিনি। অবশেষে ২০২১ সালে তার ঘরের মাটিতে নটিংহ্যাম ওপেনের শিরোপা জয়েরও কীর্তি গড়েছিলেন কন্টা। যেখানে এর আগের দুইবার ফাইনালে উঠেও হেরে গিয়েছিলেন তিনি। গত সপ্তাহে এক সাক্ষাৎকারে নটিংহ্যামের স্মৃতি রোমন্থন করেছেন কন্টা। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘চলতি বছরে নটিংহ্যামে চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা আমার কাছে অনেক কিছু। যদিওবা এর আগে দুইবার এই টুর্নামেন্টের শিরোপা জেতার চেষ্টা করেছিলাম (হা হা হা)। ডব্লিউটিএ ১০০০ পর্যায়ের দুটি টুর্নামেন্টেরও ফাইনালে উঠে তরী ডুবিয়েছিলেন কন্টা। ২০১৬ সালে বেজিংয়ের পর ২০১৯ সালে রোম ওপেনের ফাইনালেও হেরে রানার-আপের তৃপ্তি নিয়ে কোর্ট ছেড়েছিলেন ব্রিটিশ তারকা। গ্র্যান্ডস্লাম টুর্নামেন্টে তার বড় সফলতা সেমিফাইনাল। তিনবার ভিন্ন ভিন্ন তিনটি মেজর টুর্নামেন্টের শেষ চারে জায়গা করে নিয়েছিলেন কন্টা। ২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে, ২০১৭ সালে উইম্বলডনে এবং ২০১৯ সালে ফ্রেঞ্চ ওপেনে। এছাড়া ২০১৭ সালে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন এবং ২০১৯ সালে উইম্বলডন ও ইউএস ওপেনের কোয়ার্টার ফাইনালের টিকিটও কেটেছিলেন জোহানা কন্টা। সুদীর্ঘ ক্যারিয়ারে ২০১৯ সালটাকেই সেরা হিসেবে দেখছেন ব্রিটিশ তারকা। তিনি বলেন, ‘ট্যুর পর্যায়ে আমার সেরা মৌসুম ২০১৯। এই সময়ে যেসব মানুষগুলো আমার সঙ্গে ছিল তাদের প্রতি অসম্ভব ভালোবাসা। বিশেষ করে দিমিত্রি (যাভিয়ালোফ), ড্যান (স্মেথার্স্ট), গিল (মাইবার্গ) এবং জ্যাকসন (বয়ফ্রেন্ড) তো অবশ্যই। দিমিত্রির সঙ্গে কাজ করার সময়টা ছিল দারুণ। দিমিত্রি এবং ড্যানের সঙ্গে একত্রে কাজ করার সময়টাও বেশ উপভোগ করেছি। ২০১৭ সালের শেষ সময়টা খুব কঠিন ছিল। এরপর ২০১৮ সালে নিজেকে ফিরে পেতে শুরু করি। সেই সময়ে শেখার জন্য আমি খুব তৃঞ্চার্থ ছিলাম। শেখার মধ্যে আনন্দও পেয়েছিলাম। যে কারণেই পুরো বছরটাই আমার জন্য খুব ভালো ছিল।’ সুদীর্ঘ ক্যারিয়ারে শীর্ষ দশে থাকা খেলোয়াড়ের বিপক্ষে ২২বার জয়ের দেখা পেয়েছেন তিনি। চলতি মৌসুমে নটিংহ্যামের শিরোপা জিতলেও ইনজুরি আর অসুস্থতা তাকে বারবার ছিটকে দিয়েছে কোর্ট থেকে। এ বছরের শুরুতেই অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের প্রথম রাউন্ড থেকেই রিটায়ার্ডে যেতে হয় ইনজুরির কারণে। এরপর নটিংহ্যাম ওপেনের চ্যাম্পিয়ন হলেও কোভিড-১৯ সংক্রান্ত কারণে উইম্বলডন থেকেও নাম প্রত্যাহার করে নেন তিনি। শুধু তাই নয়, কোভিড-১৯ এ নিজে আক্রান্ত হওয়ার কারণে স্বপ্নের টোকিও অলিম্পিকেও অংশগ্রহণ করতে পারেননি জোহানা কন্টা। অবসরের আগে বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের ১১৩ নম্বরে থাকলেও তার সর্বোচ্চ অবস্থান ছিল ৪। ২০১৭ সালের জুলাইয়ের মাঝামাঝিতে এই অবস্থানে জায়গা করে নিয়েছিলেন তিনি। তবে চলতি বছরে বিশ্ব টেনিসে সবচেয়ে আলোচনায় জোহানা কন্টারই স্বদেশী এমা রাদুকানু। যিনি বাজিমাত করেছেন এবার ইউএস ওপেনের শিরোপা উঁচিয়ে ধরেন। সেইসঙ্গে এক লাফে বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের ২৩তম স্থানে উঠে আসেন তিনি। রাদুকানু বছর শুরু করেছিলেন ৩৪৫ বিশ্ব র‌্যাঙ্কিং দিয়ে। গ্রেট ব্রিটেনে তাঁর অবস্থান ছিল ১১ নম্বরে। টেনিস থেকে বিদায় নিলেও কন্টার বিশ্বাস মানুষ তাকে মনে রাখবে। এর পেছনে কারণ তার ভদ্র আচরণ, দয়ালু মন এবং সবসময়ই হাসি-খুশি থাকার বৈশিষ্ট্য। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, মানুষ আমাকে সবসময়ই মনে রাখবে কারণ আমি ট্যুরে সবসময়ই সুখী ছিলাম, সবসময় হাস্যৌজ্জ্বল থাকতাম। এছাড়াও ভদ্র এবং দয়ালু ছিলাম। আমি সত্যিই সবসময় এমন থাকার চেষ্টা করেছি। চেষ্টা করেছি মানুষকে সম্মান করতে, তাদের প্রতি দয়া দেখাতে এবং স্বাভাবিকভাবে সুখী থাকতে।’
×