ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মধুটিলা ইকোপার্কে প্রাণ জুড়ায় ভ্রমন পিপাসুদের

প্রকাশিত: ১৭:৩৫, ১ ডিসেম্বর ২০২১

মধুটিলা ইকোপার্কে প্রাণ জুড়ায় ভ্রমন পিপাসুদের

নিজস্ব সংবাদদাতা, নালিতাবাড়ী, শেরপুর ॥ প্রকৃতির সান্নিধ্য পেয়ে কর্মক্লান্তি ভুলে মুগ্ধ হন ভ্রমন পিয়াসীরা। সারাদিন নয়নাভিরাম পাহাড়ি বন-বনানির দৃশ্য দেখে ভ্রমন পিয়াসীরা ফিরে যান নিজ গৃহে। শেরপুর জেলার অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র নালিতাবাড়ী উপজেলায় স্থাপিত ‘মধুটিলা ইকোপার্কে শীত মৌসুমের শুরুতেই ভ্রমন পিয়াসীদের ভীড় বাড়ছে। ভারত সীমান্তবর্তী এই পার্কের চারপাশে উচু-নিচু পাহাড়ীটিলা আর সবুজের সমারোহ দেখতে ইকোপার্কটিতে বর্তমানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রায় প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দর্শনার্থী ও ভ্রমন পিয়াসীরা ভীড় জমায়। শেরপুর জেলা শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার, নালিতাবাড়ী উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার উত্তরে ওই এলাকার এমপি ও সাবেক কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীর উদ্যোগে পোড়াগাঁও ইউনিয়নে ময়মনসিংহ বন বিভাগের ব্যবস্থাপনায় মধুটিলা ফরেষ্ট রেঞ্জের সমশ্চুড়া বন বীটের আওতায় ৩৮০ একর বনভূমিতে গারো পাহাড়ের মনোরম পরিবেশে সরকারীভাবে ২০০০ সালে নির্মিত হয় ‘মধুটিলা ইকোর্পাক’ তথা পিকনিক স্পট। এই পার্কটির প্রধান ফটক পেড়িয়ে ভেতরে ঢুকতেই প্রথমে হাতের বামপাশে চোখে পড়বে ডিসপ্লে মডেল, তথ্যকেন্দ্র ও সারি সারি গাছ। রাস্তার ডান পাশে গাড়ী পাকিং জোন আর দু-পাশে রকমারি পণ্যের দোকান। সামনের ক্যান্টিন পার হলেই পাহাড়ী ঢালু রাস্তা। এর পরই হাতি, হরিণ, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, সিংহ, বানর, কুমির, ক্যাঙ্গারু, মৎস্য কন্যা, মাছ, ব্যাঙ, কুমির ও পশু-পাখির ভাষ্কর্য। পাশের আঁকাবাঁকা পথে ঘন গাছের সারি লেকের দিকে চলে গেছে। তারপর ষ্টার ব্রিজ পেরিয়ে পাহাড়ের চুড়ায় পর্যবেক্ষণ টাওয়ারে আরোহণ করলেই নজর কেড়ে নেয় ভারতের উঁচু নিচু পাহাড় আর সবুজের সমারোহ। মধুটিলা রেঞ্জকর্মকর্তা আব্দুল করিম জানান, ইকোপার্কে ঢুকতে জনপ্রতি ১০ টাকায় টিকেট কাটার ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে আলাদা আলাদা ফি পর্যবেক্ষণ টাওয়ারে উঠা, শিশু পার্কে প্রবেশের সুযোগও রয়েছে। শুধু দিনের বেলায় ব্যবহারের জন্য ভ্যাটসহ ৬ হাজার ৯শ টাকার বিনিময়ে পাহাড়ের চূড়ায় চার কক্ষ বিশিষ্ট শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) সুসজ্জিত মহুয়া নামের রেষ্টহাউজ। এ রেষ্টহাউজ ব্যবহার করতে চাইলে মধুটিলা রেঞ্জঅফিস, ময়মনসিংহ অথবা শেরপুর বন বিভাগ অফিসে বুকিং দিতে হয়। এছাড়াও এখানে রয়েছে ক্যান্টিন, মিনি চিড়িয়াখানা, বন্য প্রাণী বিরল প্রজাতির পশু-পাখির ভাষ্কর্য। আরো আছে ঔষধি ও সৌন্দর্য বর্ধক প্রজাতির বৃক্ষ এবং ফুলসহ বিভিন্ন রঙের গোলাপের বাগান। ২০০৯ সালে এ পার্কের আরো সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য ঝুলন্ত ব্রিজ, লেক এক্সটেনসহ পার্কটির সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য ২ কোটি ৮০ লাখ টাকার প্র¯তাবনা পাঠানো হলে তা নাকচ করা হয়। সরকার প্রতি বছর এ পার্ক থেকে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকার রাজস্ব আয় করলেও পার্কের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য কোন প্রকার অর্থ ব্যয় করছে না। নিরাপত্তার ১টি পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপনসহ পার্কটি পরিচ্ছন্ন ও নিরাপওাকর্মী রাখা জরুরী হয়ে পড়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ইকোপার্কটি জীববৈচিত্র ও বিভিন্ন প্রাণীর সমাহার ঘটিয়ে যেভাবে সাজানোর কথা ছিল এখনও তার কিছুই হয়নি। কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টির অভাবে সম্ভাবনাময় ইকোপার্কটির সম্ভাবনা ম্লান হতে বসেছে। ভ্রমণপিপাসু মানুষ প্রকৃতির অপার নৈসর্গিক সৌন্দর্যের টানে বারবার এ পার্কে ছুটে আসেন। অন্যদিকে বিনোদন ও পাহাড়ী এলাকার মানুষের কর্মসংস্থানের জন্য পার্কটি বিশাল ভূমিকা রেখেছে। সম্ভাবনাময় এ পার্কটির প্রতি নজর দেওয়ার জন্য জোর দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। রাজধানী ঢাকা থেকে মধুটিলা ইকোপার্কের দুরত্ব প্রায় ২শ কিলোমিটার। মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে ময়মনসিংহ হয়ে শেরপুর আসতে হবে। শেরপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে নালিতাবাড়ী উপজেলার নন্নী বাজার পর্যšত আটোবাইক, সিএনজি ও মোটরসাইকেল রয়েছে। এছাড়া নিজস্ব গাড়ীতে সরাসরি ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ হয়ে শেরপুর পৌঁছানোর আগে নকলা উপজেলা থেকে নালিতাবাড়ী সদর হয়ে ইকোপার্কে আসা সহজ হয়। সব মিলিয়ে শীত মৌসুম ছাড়াও সম্ভাবনাময় এই ইকোপার্কে প্রায় সাড়া বছরই দেশি-বিদেশি পর্যটক ও ভ্রমন পিয়াসীদের ভীড় লেগেই থাকে।
×