ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

এনবিআরের সেমিনারে আইনমন্ত্রী

করের টাকাই দেশের উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি

প্রকাশিত: ২২:০৬, ১ ডিসেম্বর ২০২১

করের টাকাই দেশের উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, জনগণের করের টাকাই দেশের উন্নয়নের মূল চালিকা শক্তি। দেশের বিত্তবান ও সম্পদশালী মানুষ এবং ব্যবসায় ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকদের প্রতি এই আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা আয়কর দিয়ে গরিব-দুঃখী ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ান। কারণ আপনাদের করের টাকাই দেশের উন্নয়নের মূল চালিকা শক্তি, যা স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, যোগাযোগ ও পরিবহনসহ বিভিন্ন খাতে ব্যয় করা হয়। আপনারা যত বেশি আয়কর দিবেন, বাংলাদেশ তত বেশি এগিয়ে যাবে। মঙ্গলবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর সম্মেলন কক্ষে জাতীয় আয়কর দিবস-২০২১ উপলক্ষে ‘রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়ন ও আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে আয়করের ভূমিকা’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন তিনি। আইনমন্ত্রী বলেন, জনগণের নিকট হতে সংগৃহীত করের টাকা ব্যয়ের ব্যাপারে আমাদের আরও বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে। জনগণের করের টাকার যেন কোন অপচয় বা অপব্যবহার না হয় এবং করের টাকার যাতে সর্বোত্তম ব্যবহার হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। মন্ত্রী বলেন, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে বাংলাদেশে রাজস্ব সংগ্রহের প্রবৃদ্ধি কমার অন্যতম কারণ ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার করোনা অতিমারীকালীন কর সংগ্রহের ব্যাপারে বেশ কিছু ছাড় দিয়েছিলেন। এ সময় তিনি দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখার জন্য যেমন বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন, তেমনি জনগণের জীবন-জীবিকা ও আয়-রোজগারের বিষয়টিও বিবেচনায় রেখেছেন। উৎপাদনমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো সচল রাখার বিষয়টিও তিনি মাথায় রেখেছেন। তবে আসার কথা হলো প্রধানমন্ত্রীর সঠিক দিক নির্দেশনা এবং আয়কর বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীদের অক্লান্ত পরিশ্রমে আমরা করোনার চ্যালেঞ্জ অনেকটাই মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছি। শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো খুব দ্রুত আগের অবস্থানে ফিরতে শুরু করেছে এবং উৎপাদন অব্যাহত রেখেছে। যার ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে রাজস্ব সংগ্রহের প্রবৃদ্ধির ওপর। এর ফলেই ২০২০-২০২১ অর্থবছরে আয়কর সংগ্রহের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৩.৬৩ শতাংশ। তিনি বলেন, রূপকল্প ২০৪১ হচ্ছে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত ও সমৃদ্ধ আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথ নক্সা, যার মূল লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের বিলুপ্তি ঘটিয়ে এবং উচ্চ আয়ের দেশের মর্যাদায় আসীন করে বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলায় রূপান্তরিত করা। এই রূপকল্প বাস্তবায়নের অন্যতম অনুষঙ্গ হচ্ছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ তথা সরকারী রাজস্ব সংগ্রহ জোরদারকরণ। আমাদের প্রেক্ষিত পরিকল্পনা-২০৪১ এর রাজস্ব অভীষ্ট হলো ২০৩১ ও ২০৪১ সালে সরকারী রাজস্বকে মোট দেশজ আয়ের যথাক্রমে ১৯.৫৫ শতাংশ ও ২৪.১৫ শতাংশে উন্নীত করা। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে মোট রাজস্বে প্রত্যক্ষ করের অবদানকে ৫০ শতাংশের ওপরে উন্নীতকরণ। মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার গোড়াতে ফিরে গেলে আমরা দেখতে পাই ১৯৭২-১৯৭৩ অর্থবছরে বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ করের পরিমাণ ছিল ৯.৭২ শতাংশ । এর বিপরীতে পরোক্ষ করের পরিমাণ ছিল ৯০.২৮ শতাংশ। কিন্তু ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে এসে প্রত্যক্ষ করের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৫.৫০ শতাংশ এবং পরোক্ষ করের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৪.৫০ শতাংশ। এর অর্থ দাঁড়াচ্ছে দিনদিন প্রত্যক্ষ করের পরিমাণ বাড়ছে এবং পরোক্ষ করের পরিমাণ কমছে। সময়ের প্রয়োজনেই এটি হয়েছে। বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে প্রত্যক্ষ কর বাড়নোর বিকল্প নেই। সেজন্যই সরকার প্রত্যক্ষ কর বাড়নোর ওপর জোর দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, সরকারের উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় রাজস্ব জোগানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ক্রমবর্ধমান ও আশাব্যঞ্জক অবদান রেখে চলেছে। আয়কর বিভাগের আন্তরিক কর্মপ্রচেষ্টার মাধ্যমে জাতীয় রাজস্বে প্রত্যক্ষ করের অবদান ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশে টিআইএনধারীর সংখ্যা এখন ৭০ লক্ষ অতিক্রম করেছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড দেশের ব্যবসা ও বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ নিশ্চিতকরণের জন্য বিভিন্ন নীতি সহায়তা প্রদান করে যাচ্ছে। এছাড়া কর দাতাদের জন্য হয়রানিমুক্ত ও সহজ কর সেবা নিশ্চিত করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অংশীদার হিসেবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ই-রিটার্ন, ই-টিডিএস সেবা ইত্যাদি চালু করেছে। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মোঃ রহমাতুল মুনিমের সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন এফবিসিসিআই-এর সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিন; আলোচক হিসেবে ছিলেন এনবিআরের সদস্য মোঃ আলমগীর হোসেন, মোঃ মাসুদ সাদিক ও সামস উদ্দিন আহমেদ এবং বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. জামাল উদ্দিন আহমেদসহ অন্যরা।
×