ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

ছাত্রীকে ধাক্কা দেয়ায় রাইদার ৪০ বাস আটক

প্রকাশিত: ২২:৪৯, ৩০ নভেম্বর ২০২১

ছাত্রীকে ধাক্কা দেয়ায় রাইদার ৪০ বাস আটক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ২০১৮ সালে দুই বাসের রেষারেষির সময় রাজধানীর কুর্মিটোলায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় আন্দোলন হয়েছিল। পুরো রাজধানী স্থবির করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়কের দাবি তুলেছিল। নিরাপদ সড়ক গড়তে অনেক প্রতিশ্রুতিও দেয়া হয়েছিল, কিন্তু তার কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি। তাই এবার প্রতিশ্রুতি নয়, বাস্তবায়ন চান শিক্ষার্থীরা। দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন ও বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তারা। রাজধানীর সড়কে একের পর এক শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমেছেন। সহপাঠীর মৃত্যুর বিচার চেয়েছেন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন করেছেন। দাবির প্রেক্ষিতে সরকার ও সংশ্লিষ্টরা নিরাপদ সড়ক গড়ে তোলার অঙ্গীকার করেছেন, শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু অঙ্গীকার আর আশ্বাসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সড়কে মৃত্যু কমিয়ে আনতে কার্যত কিছুই করা হয়নি। তাই এবার আর আশ্বাসে বিশ্বাসী নয় শিক্ষার্থীরা। তারা বাস্তবায়ন চাচ্ছেন। সোমবার রাজধানীর কয়েকটি সড়ক অবরোধ করে এমন সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। তারা বলেছেন, এর আগেও শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় আন্দোলন হয়েছিল। নিরাপদ সড়ক গড়তে অনেক প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি। এবার প্রতিশ্রুতি নয়, বাস্তবায়ন চাই। দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন ও বিক্ষোভ চালিয়ে যাবো। বাসে হাফ ভাড়া নেয়া, সিটি কর্পোরেশনের গাড়ি চাপায় শিক্ষার্থী নাঈমের মৃত্যুর ঘটনায় বিচার ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে সোমবারও শান্তিনগর, রামপুরা ও নীলক্ষেত অবরোধ করে আন্দোলন করেছেন শিক্ষার্থীরা। শান্তিনগরে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করলেও সোমবার বিভিন্ন পরীক্ষা থাকায় নীলক্ষেতে আন্দোলন করেননি তারা। তবে সেখানে জমায়েত হয়ে হাফ ভাড়ার প্রজ্ঞাপনের দাবিতে বিআরটিএর সামনে আজ মঙ্গলবার অবস্থান কর্মসূচীর ঘোষণা করেন ওখানকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এসব দাবিতে ডাকা শাহবাগ অবরোধ কর্মসূচীতে আটটি বামপন্থী ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এদিকে এক ছাত্রীকে ধাক্কা দিয়ে বাস থেকে ফেলে দেয়ায় রাইদা পরিবহনের ৪০টি বাস আটক করেছে শিক্ষার্থীরা। পরে বিষয়টি সমাধানে বাস মালিক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসেছে পুলিশ। তবে ঢাকাসহ সারাদেশে বিআরটিসির ১৪০০ বাসে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া নেয়া হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কোন রকম হয়রানি করা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সোমবার দুপুর থেকে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার, বাহীবুল্লাহ বাহার কলেজ ও রাজারবাগ স্কুল এ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা শান্তিনগর মোড়ে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় নিরাপদ সড়কসহ সহপাঠীর হত্যার বিচার চেয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন তারা। শতাধিক শিক্ষার্থী প্রথমে শান্তিনগর মোড় অবরোধ করেন। পরে তারা মিছিল নিয়ে কাকরাইল মোড় হয়ে আবার শান্তিনগর এসে অবস্থান নেন। বেলা পৌনে দুইটার দিকে তারা সড়ক থেকে সরে যান। উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের ছাত্রী তাওহীদা রহমান বলেন, প্রায়ই প্রতিদিনই কেউ না কেউ সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। আমরা যখন আন্দোলন করি, তখন বিষয়টি নিয়ে তোড়জোড় শুরু হয়। পরে পরিস্থিতি ঠান্ডা হয়ে গেলে আর কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় না। যার বাস্তব উদাহরণ ২০১৮ সালে নিরাপদ সড়ক গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি। ওই সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নিয়ে বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সরকার। কিন্তু পরে এর কিছুই করা হয়নি। যদি নিরাপদ সড়ক গড়ে তোলার চেষ্টাও করা হতো, তাহলে নাঈমের রক্তে আজ রাজপথ রঞ্জিত হত না। তাই এবার প্রতিশ্রুতি নয়, আমরা বাস্তবায়ন চাই। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের কারণে শান্তিনগর সড়কে, মালিবাগ, মগবাজার, পল্টন, রাজারবাগ পুলিশ লাইন, বেইলী রোডসহ আশপাশের সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। যাত্রীদের অনেকে বিরক্ত হয়ে বাস থেকে নেমে হেঁটে হেঁটে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে। এসময় ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করতেও দেখা গেছে। পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারাও ঘটনাস্থলে আসেন। তারা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং রাস্তা ছেড়ে যেতে অনুরোধ করেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা পুলিশের কথা না শুনে আন্দোলন চালিয়ে যান। পরে মিছিল নিয়ে কাকরাইল মোড় হয়ে ফের শান্তিনগর গিয়ে আন্দোলন স্থগিত করেন। বাসে হাফ ভাড়া নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারির দাবিতে আজ মঙ্গলবার বিআরটিএ কার্যালয়ের সামনে অবস্থান ধর্মঘট করবে বলে জানিয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আরেক অংশ। দুপুর ১২টার দিকে নীলক্ষেত মোড়ে অবস্থান করে অবস্থান ধর্মঘটের ঘোষণা দিয়েছেন তারা। শিক্ষার্থীরা জানায়, আজ মঙ্গলবারের মধ্যে যদি অর্ধেক ভাড়া নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি না করা হয়, তাহলে সেখানে অবস্থান করে পরবর্তী কর্মসূচী দেয়া হবে। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে কোন ধরনের আশ্বাস পাইনি। এর আগেও বিভিন্ন আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন আশ্বাস পেয়েছি, কিন্তু আশ্বাসগুলো আশ্বাসই থেকে গেছে। সেটার আসলে কোন বাস্তবায়ন হয়নি। আমরা দাবি জানিয়েছি, সব বাসে অর্ধেক ভাড়া কার্যকরের জন্য। শুধু বিআরটিসি বাসে অর্ধেক ভাড়ার জন্য আমাদের এ দাবি নয়। তারা জানায়, সোমবার বিভিন্ন পরীক্ষা ছিল, সে জন্য আমরা কোন রাস্তা অবরোধ করিনি, শুধু জমায়েত হয়েছি। আমাদের আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য কিছু লোক রাস্তায় নেমে যায়। ছাত্রদের যৌক্তিক আন্দোলনকে তারা নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের জন্য অর্ধেক ভাড়া এবং বর্ধিত বাস ও লঞ্চ ভাড়া প্রত্যাহারের দাবিতে শাহবাগ অবরোধ কর্মসূচী পালন করেছে আটটি বামপন্থী ছাত্রসংগঠনও। এ সময় সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পূর্বঘোষিত কর্মসূচীর অংশ হিসেবে দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকা থেকে মিছিল বের করে আটটি ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরা। পাবলিক লাইব্রেরির সামনে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। পুলিশের সঙ্গে বাম সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীর কিছুক্ষণ ধাক্কাধাক্কি হয়। এরপর সেখানেই সমাবেশ শুরু করেন তারা। সেখানে কর্মসূচীতে পুলিশি বাধার প্রতিবাদ এবং তিন দফা দাবির পক্ষে বক্তব্য দেন সংগঠনের নেতারা। ফের রাইদার ৪০ বাস আটক ॥ এদিকে ঢাকা ইম্পেরিয়াল কলেজের এক ছাত্রীকে বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়ার অভিযোগে রাইদা পরিবহনের ৪০টি বাস প্রগতি সরণির রামপুরা বিটিভি ভবন এলাকায় আটকে রাখেন শিক্ষার্থীরা। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে আটকে রাখা বাস ছেড়ে দেয়া হয়। রামপুরা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, দুপুরের দিকে ইম্পেরিয়াল কলেজের এক ছাত্রী মুগদা থেকে করোনার টিকা নিয়ে রাইদা পরিবহনের একটি বাসে করে বাসায় ফিরছিলেন। রামপুরা পুলিশ বক্সের সামনে নামার সময় তাকে ওই বাসের হেলপার ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় বলে অভিযোগ করেন তিনি। এ খবর প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে তারা সংঘবদ্ধ হয়ে রামপুরা বিটিভি ভবনের সামনের রাস্তায় অবস্থান নেন এবং রাইদা পরিবহনের ৪০টি বাস আটকে দেয়। খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করি। আলোচনায় অংশ নিতে রাইদা পরিবহনের একজন পরিচালক থানায় আসেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা রাইদা পরিবহনের পরিচালকের কাছে কয়েকটি দাবি উত্থাপন করেন। শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেয়ায় আলোচনা শেষে শিক্ষার্থীরা পরিচালকের হাতে প্রায় ৪০টি বাসের চাবি তুলে দেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা জানান, আমাদের দাবির মধ্যে ছিল আজকের ঘটনায় দায়ী হেলপারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া, সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ কোন যাত্রীর সঙ্গে অশোভন আচরণ করা যাবে না, সকলের কাছ থেকেই ন্যায্য ভাড়া নেয়া এবং শিক্ষার্থীদের কাছে হাফ ভাড়া নেয়া। এর ব্যত্যয় ঘটলে রাইদা পরিবহন কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট চালক ও হেলপারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে পুলিশ। এর আগেও শিক্ষার্থীকে বাস থেকে নামিয়ে দেয়ার অভিযোগে রাইদা পরিবহনের প্রায় ৫০টি বাস আটক করেছিল শিক্ষার্থীরা। পরে মালিক পক্ষ ও থানা পুলিশের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে বাসগুলো ছেড়ে দেয়া হয়।
×