ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অর্থপাচার নিয়ে সংসদে ক্ষোভ, কমিশন দাবি

প্রকাশিত: ২৩:০০, ২৮ নভেম্বর ২০২১

অর্থপাচার নিয়ে সংসদে ক্ষোভ, কমিশন দাবি

সংসদ রিপোর্টার ॥ বিদেশে অর্থপাচার অব্যাহত রয়েছে দাবি করে তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও বিএনপি’র সংসদ সদস্যরা। তারা ঋণ খেলাপীদের সঠিক তথ্য প্রকাশ ও পাচারকারীদের চিহ্নিত করতে দ্রুত একটি ব্যাংক কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছেন। জবাবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল টাকা পাচারকারীদের তালিকা দেয়ার জন্য বিরোধী দলের সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, কারা বিদেশে টাকা পাচার করছে তা আমি জানি না। আমি কীভাবে জানব কারা টাকা পাচার করছে? আপনারা তালিকা দেন, আমরা ব্যবস্থা নেব। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শনিবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে ‘ব্যাংকার সাক্ষ্য বহি বিল-২০২১’ বিল পাসের আলোচনায় অংশ নিয়ে অর্থমন্ত্রী এ সব কথা বলেন। পরে কণ্ঠভোটে বিলটি পাস হয়। বিলের ওপর জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব নিয়ে আলোচনাকালে বিরোধীদলীয় সদস্যরা অভিযোগ করেন, বিদেশে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। খেলাপী ঋণ ছাড়িয়েছে এক লাখ কোটি টাকার বেশি। এ সব বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর সুনির্দিষ্ট বক্তব্য জানতে চাই। জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, অনেকভাবে অনেকে বলেছেন দেশ থেকে টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। আমি আপনাদের বলেছি, যারা পাচার করে তাদের তালিকা আমাকে দেন। আমি তো পাচার করি না। আমি বিশ্বাস করি আপনারাও পাচার করে না। সুতরাং পাচার কে করে, আমি জানব কেমন করে, যদি আপনারা না দেন। এ সময় বিরোধী দলের সদস্যরা অর্থমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে কথা বললেও মাইক বন্ধ থাকায় সেই বক্তব্য শোনা যায়নি। তবে অর্থমন্ত্রী বলেন, আপনারা বলেন। আপনারা লিস্ট দেন, পাচারকারীদের। বারবার আমি বলেছি, আমি জানি না। আমাকে জানিয়ে দেন। বিরোধী দলের বক্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করে আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, অর্থনীতি এখন একটি চ্যালেঞ্জিং সময় অতিক্রম করছে। সারাবিশ্বের অর্থনীতি ৩ শতাংশ কনট্র্যাকশন হয়েছে। কিন্তু দেশে এটি হয়নি। বলা হচ্ছে, ২০৩৫ সালে বাংলাদেশের অর্থনীতির পরিমাণ হবে সারাবিশ্বে ২৫তম। অথচ আপনারা যেভাবে বলেন মনে হয়, দেশে কোন অর্থনীতি নেই, ব্যাংকিং খাত নেই, দেশে কিছুই নেই। কিন্তু কিছুই না থাকলে আমরা উন্নতি করছি কীভাবে? এগুলো বাদ দিয়ে আমাদের প্রবৃদ্ধি আসছে কীভাবে? অর্থমন্ত্রী বলেন, ব্যাংকের সংখ্যা বেড়েছে, গ্রাহক বেড়েছে, আমানতও বেড়েছে। খেলাপী ঋণের পরিমাণ দেশসৃষ্টির পর থেকে সবচেয়ে বেশি এখন। তিনি আরও বলেন, একটি দেশের অর্থনীতির মূল চালক হলো সে দেশের ব্যাংকিং সেক্টর। সারাবিশ্বের অর্থনীতি যখন টালমাটাল অবস্থা সবাই কিন্তু বলছেন আমরা ভাল করছি। আপনার কাছে যদি কোন প্রমাণ থাকে যে আমরা তাদের চাইতে অর্থনৈতিকভাবে পেছনে আছি, তাহলে ‘ইন দ্যাট কেস ইউ কাম টু মি, আই উইল গেট ইউ টু দ্যা সল্যুশন।’ এর আগে আলোচনায় অংশ নিয়ে ব্যাংক কমিশন গঠনের প্রস্তাব দেন জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু। তিনি বলেন, খেলাপী ঋণের পরিমাণ একলাখ কোটি টাকার বেশি। কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে রাজনীতিবিদ, আমলাসহ অনেকে টাকা পাচার করেছেন বলে অভিযোগ আছে। এই অভিযোগে আমলা-রাজনীতিবিদদের বদনাম হয়। টাকা পাচার হয় কি না, হলে কারা করে- এটা বের করতে দ্রুত একটি ব্যাংক কমিশন গঠন করতে হবে। একই আলোচনায় বিএনপির হারুনুর রশীদ বলেন, অর্থমন্ত্রীকে আমরা অনেক প্রশ্ন করি, তিনি উত্তর দেন না। ঠা-া মাথায় এড়িয়ে যান। ই-কমার্সের নামে লুটপাট হচ্ছে। হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। অথর্মন্ত্রী বলছেন, দায় তার না। বাণিজ্যমন্ত্রী বলছেন, দায় তার না। তাহলে কে দায় নেবে? এটা স্পষ্ট করার আহ্বান জানান তিনি। বিএনপির মোশাররফ হোসেন বলেন, রাঘব বোয়ালরা হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে মেরে দিয়ে আয়েশি জীবনযাপন করছে। অথচ গরিব মানুষ ঋণ পায় না। অল্প টাকার ঋণখেলাপীর জন্য কৃষকদের জেলে যেতে হয়। কিন্তু হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাটকারীদের বিরুদ্ধে সরকার কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে তিনি দাবি করেন। জাতীয় পার্টির রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, ব্যাংকে অনিয়ম-দুর্নীতি, পাচার হলে কত টাকা পাচার হয়েছে এ সব বিষয়ে জানানো উচিত। এ জন্য তিনিও একটি ব্যাংক কমিশন গঠনের দাবি জানান। বিএনপির রুমিন ফারহানা বলেন, তিনি (অর্থমন্ত্রী) কথা কম বলেন বললে ভুল হবে। ওনি কথা বলেনই না প্রায়। কাগজে-কালমে মন্দ ঋণ এক লাখ কোটি টাকার মতো। বিশেষজ্ঞরা বলেন, কার্পেটের নিচে লুকিয়ে রাখা ঋণ হিসাব করলে সেটা আসলে মোট সাড়ে চার লাখ কোটি টাকা। তিনি আরও বলেন, রাজনীতিবিদ, আমলারা টাকা পাচার করেন, এমন শোনা যায়। কারা কত পাচার করে অর্থমন্ত্রী যদি পরিষ্কার চিত্র দেন তাহলে রাজনীতিবিদ ও সৎ আমলারা মুক্ত থাকতে পারেন। অর্থমন্ত্রীর উদ্দেশে জাতীয় পার্টির রওশন আরা মান্নান বলেন, কথা কম বলা ভাল। কিন্তু কিছুক্ষেত্রে কথা বলতে হয়। অর্থমন্ত্রী যদি মাঝেমধ্যে খুলে বলেন ঋণখেলাপীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিচ্ছেন তা হলে মানুষ জানতে পারে। না হলে মানুষের মধ্যে সন্দেহ তৈরি হয়।
×