ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সুমন্ত গুপ্ত

রিটার্নের প্রস্তুতি নিন

প্রকাশিত: ০১:২০, ৭ নভেম্বর ২০২১

রিটার্নের প্রস্তুতি নিন

নবেম্বর মাস চলে এসেছে। শেষ মুহূর্তের তাড়াহুড়া থেকে বাঁচতে এখনই প্রস্তুতি নিন। সংগ্রহ করুন প্রয়োজনীয় কাগজপত্র। রিটার্ন ফরম পূরণের আগে জেনে নেবেন এবারের বাজেটে কী পরিবর্তন আনা হলো। টিন (ঞধীঢ়ধুবৎ’ং ওফবহঃরভরপধঃরড়হ ঘঁসনবৎ ড়ৎ ঞওঘ) হচ্ছে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক প্রদত্ত ১২ সংখ্যার একটি ইউনিক আইডি নম্বর যা প্রত্যেক করদাতা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে জাতীয় রাজস্ব বিভাগ থেকে প্রদান করা হয়। প্রত্যেক করদাতা টিন নম্বরের বিপরীতে বছরের নির্ধারিত সময়ে সরকারকে কর প্র প্রদান করে থাকে। আয়কর বিবরণী বা রিটার্ন জমার আগে কিছু মৌলিক বিষয় জানতে হবে। এগুলো হলো করের হিসাব প্রতিবছরের জুলাই মাস থেকে পরের বছরের জুন মাস পর্যন্ত। আর করমুক্ত আয়সীমা তিন লাখ টাকা। এ ছাড়া কত টাকা আয় হলে কত হারে কর দিতে হবে। এরপর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করার কাজ। চাইলে আপনি নিজেও রিটার্ন জমার পুরো কাজটি করতে পারেন। আবার আয়কর আইনজীবীর মাধ্যমেও রিটার্ন জমা দিতে পারবেন। গতবারের মতো এবারও আয়কর মেলা হবে না। তাই নিজ নিজ কর অঞ্চল কার্যালয়ে গিয়ে রিটার্ন জমা দিতে হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সেখানে নবেম্বর মাসজুড়েই মেলার পরিবেশ থাকবে। থাকবে করদাতাদের জন্য সহায়তা কেন্দ্র। সেখানে ফরম পূরণ থেকে শুরু করে সব সুবিধা পাবেন করদাতারা। রিটার্ন জমার আলাদা বুথও থাকবে। করের হিসাব-নিকাশ রিটার্ন জমার সময় অবশ্যই আপনাকে কিছু প্রামাণ্য দলিল হিসেবে কাগজপত্র জমা দিতে হবে। যেমন আপনি চাকরিজীবী হলে বেতনের প্রমাণ হিসেবে ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন মাস পর্যন্ত ব্যাংকের হিসাব বিবরণী বা ব্যাংক স্টেটমেন্ট লাগবে। এই সময়ের মধ্যে আপনি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করলে কত টাকা সুদ বাবদ পেলেন, তার সনদ দিতে হবে। শেয়ারের বিপরীতে লভ্যাংশ আয়ের জন্য জমা দিতে হবে ডিভিডেন্ড ওয়ারেন্টপত্র। এমনকি আপনি সঞ্চয়পত্র বা এফডিআর থেকে সুদ হিসেবে যে টাকা পেয়েছেন, তার ওপরে যে উৎসে কর কেটে রেখেছে, সেই সনদও সংগ্রহ করতে হবে। আবার ভাড়ার চুক্তিপত্রও আয়কর রিটার্নে দিতে হয়। গাড়ি থাকলে আপনি গাড়ির ফিটনেস নবায়নের সময় যে অগ্রিম কর দিয়েছেন, সেই ব্যাংক রসিদের কপিও কিন্তু জমা দিতে হবে। অন্য কাগজপত্রের মধ্যে যেসব নথিপত্র লাগবে, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো পৌর করের রসিদ, বন্ধকী ঋণের সুদের সনদ, মূলধনি সম্পদের বিক্রয় কিংবা ক্রয়মূল্যের চুক্তিপত্র ও রসিদ, মূলধনি ব্যয়ের আনুষঙ্গিক প্রমাণপত্র ইত্যাদি। এসব কাগজপত্র জোগাড় করতে এখনই কাজ শুরু করে দিন। তা না হলে শেষ মুহূর্তে এসব কাগজপত্র জোগাড় করতে বেশ ঝক্কিঝামেলায় পড়তে হতে পারে। কর রেয়াত নিতে চাইলে জীবনবিমার কিস্তির প্রিমিয়াম রসিদ, ভবিষ্য তহবিলে চাঁদার সনদ, ঋণ বা ডিবেঞ্চার, সঞ্চয়পত্র, স্টক বা শেয়ারে বিনিয়োগের প্রমাণপত্র, ডিপোজিট পেনশন স্কিমে চাঁদার সনদ, কল্যাণ তহবিলে চাঁদা ও গোষ্ঠী বিমার কিস্তির সনদ, জাকাত তহবিলে চাঁদার সনদ- এসব দেখাতে হবে। কর শনাক্তকরণ নম্বরধারী (টিআইএন) সবাইকে বছর শেষে আয়-ব্যয়ের বিবরণী জানিয়ে রিটার্ন দিতে হবে। শুধু জমি বেচাকেনা কিংবা ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার জন্য যাঁরা টিআইএন নিয়েছেন, তাঁদের রিটার্ন না দিলেও চলবে। বাংলাদেশে ৬২ লাখ লোকের টিআইএন আছে। তাঁদের মধ্যে মাত্র ২৫ লাখের মতো বছর শেষে রিটার্ন দেন। মনে রাখবেন করমুক্ত আয়সীমা আগের মতোই তিন লাখ টাকা রয়েছে। তবে নারী ও ৬৫ বছরের বেশি বয়সী প্রবীণ করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে তিন লাখ টাকা। এ ছাড়া প্রতিবন্ধী করদাতাদের সাড়ে চার লাখ টাকা, গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা করদাতাদের বার্ষিক আয়ের পৌনে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত কর নেই। প্রতিবন্ধী সন্তানের পিতা-মাতা বা আইনগত অভিভাবকরা করমুক্ত সীমায় বাড়তি ৫০ হাজার টাকা ছাড় পাবেন। আপনার যদি দুই লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র থাকে, তাহলে এবার রিটার্ন দিতে হবে। কারণ, টিআইএন ছাড়া দুই লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কেনা যাবে না। একজন করদাতা এত দিন আয়ের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ কিংবা দেড় কোটি টাকা বিনিয়োগে কর ছাড়ের সুবিধা পেতেন। এই সীমা কমিয়ে এক কোটি টাকা করা হয়েছে। ধনীদের সারচার্জ হারও পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। আয়কর বিবরণী জমার শেষ সময় ৩০ নভেম্বর। প্রতিবারের মতো এবারও জাতীয় ও জেলা পর্যায়ে বিভিন্ন শ্রেণীতে ১৪১ জন সেরা করদাতাকে কর কার্ড ও সম্মাননা দেয়া হবে। ২৪ নবেম্বর এনবিআর সম্মেলনকক্ষে সেরা ১০ ব্যক্তি করদাতা এবং ১০ কোম্পানি করদাতাকে অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কর কার্ড ও সম্মাননা দেয়া হবে। এ ছাড়া অন্যরা সম্মাননা পাবেন নিজ নিজ কর কার্যালয়ের মাধ্যমে। ৩০ নবেম্বর জাতীয় আয়কর দিবস। দিবসটি উপলক্ষে এবার আগের মতো শোভাযাত্রার আয়োজন করা হচ্ছে না। তবে সভা-সেমিনারের আয়োজন থাকবে। স্বয়ংক্রিয়ভাবে রিফান্ড পাবেন করদাতারা। সুখবর হলো ব্যক্তিগত আয়কর রিটার্ন ফরম ও সম্পদের হিসাব-নিকাশ এখন ঘরে বসেই অনলাইনে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে পূরণ করা যাবে। এমনকি আয়কর পরিশোধ এবং রিটার্নও জমা দেয়া যাবে। আয়কর রিটার্ন দাখিল সহজতর করতে এসে গেল ডিজিট্যাক্স নামে একটি ওয়েব এ্যাপ্লিকেশন (এ্যাপ)। এটি নিয়ে এসেছে দেশ ইউনিভার্সেল নামের একটি প্রতিষ্ঠান। ‘করদাতারা যাতে সহজেই নির্দিষ্ট তথ্য দিয়ে আয়কর হিসাব করতে পারেন, সে জন্য এই এ্যাপ্লিকেশন প্রস্তুত করা হয়েছে। এই এ্যাপ ব্যবহার করে করদাতারা সহজেই রিটার্ন প্রস্তুত করতে পারবেন।’ করদাতারা স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে রিটার্ন পূরণ করে নিজে আয়কর অফিসে জমা দিতে পারেন অথবা গ্রাহক যদি চান, তবে ডিজিট্যাক্সের পেশাদার আইনজীবীর মাধ্যমেও রিটার্ন জমা দিতে পারবেন।
×