ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

মুছা কালু ভোলা-তিন জনের গ্রেফতারেই খুলতে পারে জট

প্রকাশিত: ২৩:৪১, ২০ অক্টোবর ২০২১

মুছা কালু ভোলা-তিন জনের গ্রেফতারেই খুলতে পারে জট

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চাঞ্চল্যকর মাহমুদা খানম মিতু হত্যাকাণ্ডের জট যেন খুলছেই না। অনেক ধারণা থাকলেও সবকিছু স্পষ্ট হবে কিলিং মিশনে সরাসরি অংশ নেয়া সাবেক এসপি বাবুলের সোর্স মুছা ও কালুর সন্ধান পেলে। তবে ঘটনার পর থেকে এখনও মুছার সন্ধান পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে মিতু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় প্রথম মামলাটির চ‚ড়ান্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে বাবুলের নারাজি দেয়ার ঘটনাটি কোথায় গিয়ে ঠেকে তা নিয়েও চলছে অনেক জল্পনা কল্পনা। তদন্ত সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, আসামি ভোলাকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা গেলে আরও তথ্য পাওয়া যাবে। এছাড়া মুসা ও কালুকে ধরতে পারলে অনেক অজানা বিষয় পরিষ্কার হয়ে যাবে। তবে মুছার সন্ধান আদৌ মিলবে কিনা, তা নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন। বাবুল আক্তারের আইনজীবীরা বলছেন, বাবুলকে ফাঁসানোর জন্য আগের মামলায় মনগড়া অভিযোগপত্র দিয়েছে তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই, যা বিশেষ মহলের ষড়যন্ত্র। মিতু হত্যায় বাবুলের সংশ্লিষ্টতার কথা কোন আসামিই স্বীকারে করেনি বলে দাবি করেন তারা। বাবুল আক্তারের শ^শুরের দায়ের করা মামলার বর্তমান অগ্রগতি কতটুকু জানতে চাইলে পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর পরিদর্শক তদন্ত কর্মকর্তা সন্তোষ কুমার চাকমা জানান, মিতু হত্যা মামলা তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত আছে। মুছাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এই মামলায় মুছা কালু এবং ভোলা পলাতক। বাকিরা কারাগারে রয়েছে। পলাতকদের গ্রেফতারে চেষ্টা অব্যাহত আছে। তবে মুসার স্ত্রী পান্না আক্তারের দাবি- ঘটনার কিছুদিন পর পুলিশ পরিচয়ে তার স্বামীকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অনেক চেষ্টার পরও তার সন্ধান এখনও মেলেনি। সংবাদ সম্মেলন করে তিনি স্বামী মুছাকে ফিরিয়ে দেয়া অথবা আদালতে সোপর্দ করার দাবিও জানিয়েছিলেন। তদন্ত সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, যেহেতু মুছা কালু হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনায় এবং সরাসরি অংশ নিয়েছে, তাদের ধরতে পারলে অনেক কিছু খোলসা হবে। গায়ত্রীর খোঁজ না পেলেও বসে নেই পিবিআই। বিভিন্ন সূত্রে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ এবং এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত সংশ্লিষ্টদের ধরতে জোর কদমেই হাঁটছেন তারা। মিতু হত্যায় বাবুলের শ^শুরের দায়ের করা মামলায় বাবুল ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন- তার ‘সোর্স কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুছা, এহতেশামুল হক ভোলা, মুছার ভাই সাইদুল আলম শিকদার ওরফে শাক্কু, মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম, মোঃ আনোয়ার হোসেন, শাহজাহান ও খায়রুল ইসলাম কালু।’ এদিকে বাবুলের করা মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার আদালতে নারাজি আবেদন করা হয়। বাবুলের পক্ষে তার আইনজীবী শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী জানান, ২৭ অক্টোবর বাদীর উপস্থিতিতে আবেদনের শুনানি হবে। বাবুলের করা মামলায় ৫১ জনের বেশি সাক্ষীর ১৬১ ধারায় জবানবন্দী নেয়া হয়েছে। কোন সাক্ষী কিন্তু বাবুলের সম্পৃক্ততার বিষয়ে কোন অভিযোগ করেননি। কোন বক্তব্যই কেউ দেয়নি। যে দুজন সাক্ষীর জবানবন্দী দিয়েছে। তাদের ধরে এনে বাবুলের বন্ধু বানিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা। বাবুল আক্তার ষড়যন্ত্রের শিকার। চূড়ান্ত প্রতিবেদনটি দিয়েছে মনগড়া। গায়ত্রীর অবস্থান জানতে অনুসন্ধান থেমে নেই ॥ পিবিআই বাবুলের করা মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর থেকেই বলে আসছে হত্যাকাণ্ডে বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততার কথা। তারা মোটিভ অব ক্রাইমের আরও বিস্তারিত তদন্ত করছেন। চাঞ্চল্যকর মামলা তাই বিস্তারিত সকল ডকুমেন্টেশনের কাজ চলছে। বাবুলের সঙ্গে ভারতীয় নারী গায়ত্রী অমর সিংয়ের যে পরকীয়া তার জেরেই মিতুকে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ বাবুলের শ^শুর মোশাররফের। গায়ত্রীর সঙ্গে বাবুলের একসময়ে সর্ম্পক ছিল তা তদন্ত সংস্থাও জানিয়েছে একাধিকবার। গায়ত্রীর বিভিন্ন তথ্য নিয়ে তদন্ত চলছে বলে জানা গেছে। যেসব ডকুমেন্টস পিবিআইয়ের হাতে এসেছে তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। ভিনদেশী ওই নারীর খোঁজ জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক ইউএনএইচসিআর দিতে না পারলেও পিবিআই তার তদন্তের স্বার্থে বিভিন্ন সূত্রে এগোচ্ছে। প্রাথমিকভাবে গায়ত্রীর সঙ্গে বাবুলের সম্পর্কের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ায় পিবিআই বিস্তারিত তদন্তের জন্য আরও তথ্য সন্নিবেশ করতে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ে খুন হন বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু। তিনি ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে বেরিয়েছিলেন। দুর্বৃত্তরা তাকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে। সদ্য পদোন্নতি পেয়ে পুলিশ সদর দফতরে যোগ দিতে তখন বাবুল ঢাকায় ছিলেন। তার আগে বাবুল সিএমপির গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনারের দায়িত্বে ছিলেন। স্ত্রী মিতু হত্যার পর বাবুল বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন। প্রথমে জঙ্গীবিরোধী কার্যক্রমের কারণে বাবুলের স্ত্রী খুন করা হয়েছে, এমন ধারণা নিয়ে তদন্ত শুরু হলেও ধীরে ধীরে জট খুলে বাবুলের দিকেই আসে অভিযোগের তীর। পরে বাবুলকে ঢাকা গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তখন শুরু হয় স্ত্রী হত্যায় জড়িত থাকার গুঞ্জন। পুলিশের চাকরি ছেড়ে দিয়ে বাবুল প্রাইভেট চাকরিও করেন। এদিকে বাবুলের শ^শুরও একজন সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি শুরুতে বাবুলকে সন্দেহ না করলেও পরে পরকীয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ আনেন। পরবর্তীতে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ওই মামলার তদন্তভার ন্যস্ত হয় পিবিআইয়ের কাছে। হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতার ইঙ্গিত পেয়ে বাবুলকে চট্টগ্রামে পিবিআই কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এরপর পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন তার শ্বশুর মোশাররফ হোসেন। ওই মামলায় বাবুল আক্তারকে গ্রেফতার দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ড অনুমতি পায় পিবিআই। তবে রিমান্ডে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য দিলেও অনেক বিষয় এড়িয়ে যান বাবুল। এরপর ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেবেন বললেও শেষ পর্যন্ত জবানবন্দী দেননি। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। বর্তমানে ফেনী কারাগারে আছেন বাবুল আক্তার।
×