ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

‘আগের রাতেই মণ্ডপে কেউ কোরান শরীফ রেখে যায়’

প্রকাশিত: ২৩:১১, ১৭ অক্টোবর ২০২১

‘আগের রাতেই মণ্ডপে কেউ কোরান শরীফ রেখে যায়’

শংকর কুমার দে ॥ পাকিস্তানী আমলের সাম্প্রদায়িক রাজনীতির কায়দায় পূর্ব পরিকল্পিতভাবে স্বাধীন বাংলাদেশেও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা (রায়ট) ছড়িয়ে দেয়ার ছক কষে মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত ও বিরোধিতাকারী রাজনৈতিক অশুভ শক্তি। এবার এজন্য বেছে নেয়া হয় সনাতন ধর্মাবলম্বী হিন্দু সম্প্রদায়ের দুর্গাপূজা। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতায় দ্রুততার সঙ্গে ত্বরিত সিদ্ধান্তে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাকারীদের পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। সারাদেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ার আগেই তা কঠোর হস্তে দমন করেছে বিজিবি, এপিবিএন, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সনাতন ধর্মাবলম্বী হিন্দু সম্প্রদায় তাদের পাঁচ দিনব্যাপী দুর্গাপূজার মতো বড় ধরনের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের শেষ দিন বিজয়া দশমীর অনুষ্ঠানও কোন ধরনের সাম্প্রদায়িক সহিংস ঘটনা ছাড়াই সম্পন্ন হওয়ার ঘটনা দেশ-বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে বলে গোয়েন্দা সংস্থার দাবি। বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। যে ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে তার প্রশংসা করেছে ভারত। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি জানিয়েছেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের সময়োচিত ব্যবস্থা গ্রহণে বড় রকমের সংঘাত এড়ানো সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের ভূমিকার প্রশংসা করে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি বলেছেন, শেখ হাসিনা সরকারকে সমস্যায় ফেলা এবং ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ককে বিঘিœত করার যে চেষ্টা হয়েছিল তা সম্ভব হয়নি বলেই মনে করছে ভারত। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী দল জামায়াতে ইসলামী ও সাম্প্রদায়িক সংগঠন হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটা হেফাজতে ইসলামের কর্মী-ক্যাডার, সমর্থকদের হিন্দু সম্প্রদায়ের দুর্গাপূজায় ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক সহিংস ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার তথ্য, প্রমাণ, আলামত পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। নেপথ্যে থেকে উস্কানি দিতে মদদ দিয়েছে বিএনপি। বলির পাঠা করা হয় সনাতন ধর্মাবলম্বী হিন্দু সম্প্রদায় ও তাদের সবচেয়ে ধর্মীয় অনুষ্ঠান দুর্গাপূজা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠ পর্যায়ে কোন ধরনের আন্দোলনে গড়ে তোলার জন্য জনসমর্থন জোগাড় করতে না পেরে চোরাগলির পথ বেছে নিয়েছে অশুভ শক্তি। দেশ-বিদেশ থেকে মদদ ও অর্থের জোগান পেয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবেই এবারের হিন্দু সম্প্রদায় ও তাদের বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজাকে বেছে নেয়া হয়েছে। দেশ-বিদেশে জানিয়ে দেয়া যে, বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নেই। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংকে হামলা করে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বীজ বপন করার অপচেষ্টা করা হয়, যা অঙ্কুরে বিনষ্ট বা বানচাল করে দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লার একটি পূজাম-প থেকে পবিত্র কোরান উদ্ধারের ঘটনায় ওই এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে দেয়ার অপচেষ্ট করে অশুভ শক্তি। মঙ্গলবার শেষ রাতে নগরীর নানুয়ার দীঘিরপাড়ের একটি দুর্গাপূজার ম-পে হনুমান মূর্তির কোলে পবিত্র কোরান শরীফ রেখে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে সাম্প্রদায়িক সহিংস ঘটনা ছড়ানোর অপচেষ্টা করা হয়। পরদিন এ ঘটনায় বুধবার সকাল থেকে বিক্ষুব্ধ শত শত মানুষ জড়ো করে মিছিল করানো, পূজাম-পে ভাংচুর চালানো, হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে ভাংচুর, লুটপাট, হামলার ঘটনা ঘটানো হয়। বুধবার সন্ধ্যায় কুমিল্লা শহরের নানুয়াদীঘি এলাকার আলোচিত ঐ পূজাম-পের পাশের বাড়ির কাজী তানিম নামের এক যুবক তার ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন আদ্যপান্ত, যা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দৃষ্টিগোচর হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ ॥ কাজী তানিমের বর্ণিত পুরো ঘটনা তুলে ধরা হলো : কুমিল্লায় পূজাম-পে মূর্তির সঙ্গে পবিত্র কোরান রাখার ঘটনা আমার এলাকার। আমার বাসার পাশেই ম-প। জানালা থেকেই সব দেখা যায়। কোরান শরীফটা কাল রাতেই (বুধবার) কেউ সেখানে রাখছে (রেখেছে)। যখন কেউ ওই ম-পে ছিল না তখন। এটা একটা আবাসিক এলাকা। আর এই ম-পটা অস্থায়ী। শুধু দুর্গাপূজা উপলক্ষে ১০ দিনের জন্য বানানো হয়। পূজা শেষ হবার পরেই আবার ম-প ভেঙ্গে ফেলা হয়। এখানে রাতে মানুষ থাকে না। আর নানুয়াদীঘির পারে রাতে এমনিতেও মানুষ সহজে বাইরে বের হয় না। এমনকি কোন প্রশাসনের লোকও কাল রাতে ম-প পাহারা দেয়ার জন্য সেখানে ছিল না। কারণ এই ম-পে কখনো কোন সমস্যা হয় নাই। কাল রাতে (বুধবার) পূজা ম-প খালি ছিল সম্পূর্ণ। রাত প্রায় ৩-৪ টার দিকেই ম-প খালি করে সব বাতি নিভিয়ে দেয়া হয়। সকালে পূজা শুরু হবার আগেই কোরান শরীফটা এলাকাবাসীর নজরে পড়ে। তখনও পুরোহিত আসে নাই। পুরোহিত আসার পর পুরোহিত নিজে অনুরোধ করেছে যাতে এই কোরান শরীফটা সরিয়ে নেয়া হয়। কিন্তু এলাকাবাসী সেটা না করে প্রশাসনকে খবর দিয়ে পূজাই বন্ধ করে দেয়ার চেষ্টা করেছে। হিন্দুরা এটায় বাধা না দেয়ায় প্রথমে বাইরে থেকে লোকজন এনে পুরা ম-প ভাঙছে (ভেঙ্গেছে), প্রতিমা ভেঙ্গে দীঘিতে ফালাইয়া দিসে (ফেলে দিয়েছে), এরপর যেই হিন্দুরেই সামনে পাইছে (পেয়েছে) তারেই পিটাইছে। পার্শ্ববর্তী কিছু মাদ্রাসা কমিটির লোকেরা এটায় নেতৃত্ব দিসে (দিয়েছে)। এরপর পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়ার জন্য ব্যবস্থা নিছে (নিয়েছে)। এই ম-পটাতে হিন্দুদের থেকে মুসলিমরা বেশি যায়। বছরের পর বছর ধরে আমাদের এলাকায় হিন্দু মুসলিম একসঙ্গে মিলে মিশে থাকে। পূজায় হিন্দু মুসলিম একসঙ্গে আনন্দ করে। কখনও কোন সমস্যা হয়নি। এলাকায় বিপুল পরিমাণে হিন্দু লোকজন বসবাস করে। যাদের বেশিরভাগই স্থানীয়। সবাই একসঙ্গে বসবাস করে। আর এটাই কিছু মানুষ এর সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াইছে। ইচ্ছা করে এই কাজটা করা হইছে (হয়েছে) দুই সম্প্রদায়কে আলাদা করার জন্য। বড় কোন ষড়যন্ত্রের পূর্বাভাস মনে হচ্ছে। আর কোরান শরীফটা রাখছেও (রেখেছেও) এমনভাবে যেন সবার চোখে পড়ে। একদম সামনের দিকে হনুমান মূর্তির কোলের ওপর। আর পূজার জন্য তৈরি করা মূর্তির ওপর কোরান রাখা হয়নি। ম-পের বাইরের দিকে রাস্তার পাশে দর্শনের জন্য রাখা আলাদা মূর্তি রাখা হয়েছিল। যেটার কাছে যে কেউ যেতে পারবে। হিন্দুরা তো এত বলদ না যে এভাবে কোরান রাখবে। এটা যে কেউ ইচ্ছা করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর উদ্দেশ্যে করছে সেটা সহজেই বুঝা যায়। কিন্তু ক্ষেপা পাবলিককে এটা বুঝবে কে। তারা একটার পর একটা গুজব ছড়াইয়া (ছড়িয়ে) যাচ্ছে। কোরান নাকি দুর্গার পায়ের নিচে রাখছে (রেখেছে), কোরান রেখে পূজা হইছে (হয়েছে), পুরোহিতকে বলার পরও পূজা বন্ধ হয় নাই। এইগুলো বলে বলে মানুষকে আরও বেশি উসকে দিচ্ছে। অথচ কালকে রাতের পর এখানে আর পূজা হয়নি। সকালের পরিস্থিতি যেমন ছিল প্রশাসন যদি শক্ত না হতো তাহলে রামু ট্র্যাজেডির মত ভয়াবহ কিছু হতে পারত। প্রশাসনের আন্তরিক চেষ্টার জন্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়া সম্ভব হয়। শিবিরের সভাপতি গ্রেফতার ॥ কুমিল্লার নানুয়াদীঘির পাড়ের পূজাম-পে রাতের আঁধারে পবিত্র ধর্মগ্রন্ধ কোরান শরীফ রেখে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধানোর উস্কানির অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে কুমিল্লা জেলার দক্ষিণের সভাপতি জয়নাল আবেদীনসহ চার জনকে। তাদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জয়নাল আবেদীনের নেতৃত্বেই কোরান শরীফ পূজাম-পে রাখা হয়েছে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায় দেখা গেছে বলে পুলিশের দাবি। এরপরই দ্রুত গতিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউবে ছড়িয়ে দেয়া হয় কোরান অবমাননার ঘটনা। প্রশ্ন উঠেছে, পূর্ব পরিকল্পিত ঘটনা না হলে এত দ্রুত গতিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ধর্মপ্রাণ মানুষজনকে বিভ্রান্ত করে জড়ো করা হলো কিভাবে? নিশ্চয়ই শিবিরের সভাপতি জয়নালকে পেছন থেকে তার দল জামায়াতে ইসলামী ইন্দন দিয়েছে। কারণ জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য বারবার চেষ্টা করে যাচ্ছে স্বাধীনতাবিরোধী এই দলটি। মামুনুল হকের মুক্তির সেøাগান ॥ রাজধানী বায়তুল মোকাররমসহ কুমিল্লায় যেসব স্থানে সাম্প্রদায়িক সহিংস ঘটনা ঘটেছে সেখানে সেøাগান তোলা হয়েছে, হেফাজতের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মামুনুল হকের মুক্তি চাই। প্রশ্ন উঠেছে, হিন্দু সম্প্রদায়ের দুর্গাপূজায় সাম্প্রদায়িকতা দাঙ্গার বাধানোর চেষ্টার সঙ্গে মামুনুল হকের মুক্তির সেøাগান দেয়া হলো কেন? এতেই প্রমাণ হচ্ছে, হেফাজতে ইসলামের লোকজনই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধানোর চেষ্টাকারীদের সঙ্গে রয়েছে। তবে হেফাজতে ইসলাম ও জামায়াতে ইসলামী এই দুটি দলই সাম্প্রদায়িক রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এই দল দুটিকে অতীতে যেভাবে বিএনপি মদদ দিয়ে উস্কানি দিয়েছে এবারও একাই কায়দায় সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিয়ে দাঙ্গা বাধানোর চেষ্টা করা হয়েছে। এতে বিএনপিই লাভবান (বেনিফিসিয়ারি) হবে? রিমোট কন্ট্রোল কোথায় ॥ তদন্ত করে দেখা হচ্ছে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধানোর নেপথ্যে থাকা রিমোট কন্ট্রোলটি কার হাতে? বিএনপি-জামায়াত-হেফাজত নামের ‘মাফিয়া’ রাজনৈতিক শক্তির হাতে বলে যে অভিযোগ উঠেছে তার তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। স্বাধীনতার ৫০ বছরে বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতায় থেকে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করেছে বিএনপি-জামায়াত। এখন তাদের সঙ্গে জুটেছে হেফাজত। এর আগেও হেফাজতে ইসলাম বঙ্গবন্ধুর মূর্তি, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর করাকে কেন্দ্র করে সহিংস সন্ত্রাসের তা-বলীলা চালিয়েছে হেফাজত। তারও আগে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে সহিংস সন্ত্রাস চালিয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটিয়েছে তারা। বিএনপির ভূমিকা ॥ গত এক দশকে বিএনপি নামক দল বা জোটটির ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় তৈরি করার অনেক ইস্যুর নজির রয়েছে। আগুন সন্ত্রাস ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লাশ ফেলার পরিকল্পনার কথা জনগণ এখনও ভুলেনি। নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, কোটা আন্দোলন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল আন্দোলন, হেফাজতের আন্দোলন, সাঈদীকে চাঁদে দেখা আন্দোলন- সবখানে দলটির দাওয়াত দেয়ার নজির রয়েছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আন্দোলনের পরিবেশ পরিস্থিতি তৈরি করতে দুর্গাপূজা বা কোন পূজাম-পকে টার্গেট করা একটা সহজসাধ্য ব্যাপার। অতি সহজে ধর্মপ্রাণ ধর্মান্ধ বাহিনীকে মাঠে নামানো যায়। ২০১৫ সালের আগুন সন্ত্রাস থেকে দল বা জোটটির অর্জন কি? সেসময় দেশব্যাপী তারা তা-ব চালিয়েছিল, কিন্তু মানুষের মন কি জয় করতে পেরেছিল? ওই ঘটনার পর থেকে দেশের রাজনীতিতে বিএনপি যে অনেকখানি পিছিয়ে গেছে, তা তাদের পরম বন্ধুরাও স্বীকার করবে। আগুন সন্ত্রাসের মতো ধ্বংসাত্মক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে পূজাম-পের পরিকল্পনাটি করা হয়েছিল বলে যে অভিযোগ উঠেছে তার তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। কারা ফোন দিয়েছে, তদন্ত হচ্ছে ॥ কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেছেন, কোরান পূজাম-পে কারা রেখেছে সেটি তদন্ত করতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে কমিটি করেছি এবং পুলিশও আলাদা তদন্ত করছে। এজেন্সিগুলো থেকেও তথ্য নিচ্ছি। আশা করি যারা দায়ী তাদের চিহ্নিত করতে পারব। পূজাম-পে কোরান রাখার তথ্য তারা পেয়েছিলেন জাতীয় জরুরী সেবা নাম্বার ৯৯৯ এর মাধ্যমে এবং এ ঘটনার জের ধরে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ, র‌্যাবের পাশাপাশি বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, কারা এত ভোরে উঠে মন্দিরের প্রতিমার মধ্যে পবিত্র ধর্মগ্রন্থটি দেখল? কারাই বা জাতীয় জরুরী সেবায় খবরটি দিয়েছে? এ সব প্রশ্ন এসেছে তদন্তের সামনে। শুধু তাই নয়, কিন্তু দশটা নাগাদ একটি ছবি ব্যাপকভাবে সামাজিক মাধ্যমে ছড়াতে থাকে যেখানে দেখা যায় প্রতিমার হাঁটুর কাছে কোরান। সকালে নানুয়ারদীঘির ম-পে কোরান নজরে পড়লে দ্রুত পুলিশকে জানানো হয় এবং পুলিশ তখনি এসে কোরানটি সরিয়ে নেয়। কঠোর হস্তে দমনের অভিযান ॥ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধানোর জন্য উস্কানি দিয়ে মন্দিরে হামলার ঘটনায় অর্ধ শতাধিক জনকে আটক করা হয়েছে। উসকানি দেয়ার জন্য ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। নানুয়াদীঘির পাড়ের ঘটনায় প্রথম যে ভিডিওটি ফেসবুকে প্রকাশ পেয়েছে, তাতে খুবই উসকানিমূলকভাবে ধারা বর্ণনা দেয়া হচ্ছিল তা তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। পুলিশ ওই ভিডিও পোস্টকারী ফায়েজ নামের একজনকে আটক করেছে। ফায়েজের কাছ থেকে তথ্য নেয়া হচ্ছে। সেগুলোর যাচাই চলছে। কুমিল্লা ছাড়া আর যেখানে যেখানে হামলার ঘটনা ঘটেছে সব জায়গায় পুলিশ তৎপর রয়েছে। প্রতিটি ঘটনাতেই মামলার প্রস্তুতি চলছে। এখন পর্যন্ত মোট অর্ধশতাধিক জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। কুমিল্লার ঘটনার জেরে গাজীপুর, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও মৌলভীবাজারে বেশ কিছু মন্দির ও পূজাম-পেও হামলা ও ভাংচুর হয়। চাঁদপুরে হামলাকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে প্রাণহানিও ঘটে। পরে সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে দুর্গাপূজার সময় নিরাপত্তা রক্ষায় মোট ২২টি জেলায় সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিজিবির সদস্যদের মাঠে নামানো হয়।
×