স্টাফ রিপোর্টার ॥ কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত একটি পলিসি কনক্লেভে (সাংসদ সম্মিলন) গত ১০ থেকে ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় ১৫ জন সংসদ সদস্য যোগদান করেন, যাতে বাংলাদেশের অগ্রগতি এবং আগামী বছরগুলিতে সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য যেসব উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন তা নিয়ে আলোচনা করা হয়।
সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য কর্মসংস্থান, দক্ষতা এবং সামাজিক অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রগুলি চাবিকাঠি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। সংসদ সদস্যরা এই অভিযানকে একসাথে এগিয়ে নেওয়ার জন্য “সামাজিক ন্যায়বিচার সংসদীয় ককাস” গঠনের প্রস্তাবনা করেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন। যেহেতু স্বাধীন বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সংগ্রাম ছিল সমতা ও ন্যায়বিচার, তাই আমাদের সংবিধান প্রতিশ্রুতি দেয় যে, রাষ্ট্রের একটি মৌলিক লক্ষ্য হবে "সকল নাগরিকের জন্য রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক - সমতা ও ন্যায়বিচার" নিশ্চিত করা।
গত পাঁচ দশক ধরে, বাংলাদেশ একটি এশিয়ান টাইগার অর্থনীতিতে পরিবর্তিত হচ্ছে। আমাদের মাথাপিছু আয় বেড়েছে, দারিদ্র্য হ্রাস পেয়েছে, বৃদ্ধি হয়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, খাদ্য নিরাপত্তায় উচ্চারিত হচ্ছে বাংলাদেশের নাম। গড় আয়ু বেড়েছে এবং লিঙ্গ সমতার পাশাপাশি জনগণের দৃঢ়তা এবং পরিবর্তিত সময়ের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার মাধ্যমে যেসমস্ত অগ্রগতির ফল পাওয়া যাচ্ছে, তা এখনও সমাজের সকল স্তরের নাগরিকদের মধ্যে সমানভাবে বিতরণ সম্ভব হয়নি, কারণ আমরা সামাজিক অন্তর্ভুক্তির অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছি।
স্থানীয় পর্যায়ে, যেকোনো উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দুতে নীতিনির্ধারকদের অতি দরিদ্র এবং দুর্বল মানুষের কথা মাথায় রাখা জরুরি। সংসদ সদস্যরা বিশেষভাবে গতানুগতিক ইটের ভাটার কথা উল্লেখ করে এর বিকল্প দাবি করেছেন, যা শুধু পরিবেশ দূষণের কারণই নয় বরং আয় এবং কর্মসংস্থানের বৈষম্য হিসাবে কাজ করে। যেখানে গুটিকয়েক ইটভাটার মালিক লাভবান হয় এবং দরিদ্র কৃষকদের জমি প্রচন্ডভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সংসদ সদস্যরা বিশেষ করে নদী ভাঙ্গন বন্ধ করতে এবং দরিদ্র মানুষের জীবিকা ও কর্মসংস্থান রক্ষার জন্য টেকসই বাঁধকে তুলে ধরে জলবায়ু ন্যায়বিচার এর কথা বলেন। সংসদ সদস্যরা কর্মসংস্থানের প্রতিবন্ধকতা ও অতীতের বৈষম্য দূরীকরণ এবং কর্মসংস্থানে ন্যায়সঙ্গত সুযোগ প্রদানের জন্য পার্থক্য মিটানোর বিষয়েও আলোচনা করেন।
কোটা আন্দোলনের সময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংখ্যালঘু এবং শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থার পরামর্শ দেন, যা প্রস্তাব করার জন্য সংসদ সদস্যরা তাকে ধন্যবাদ জানান এবং সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান।
জনসংখ্যার পরিবর্তিত প্রকৃতি এবং কাজের ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (টিটিসি) পাঠ্যক্রম আপডেট করার কথাও সদস্যরা বলেন। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য এবং অন্যান্য দেশে উদ্ভূত নতুন প্রবণতা সম্পর্কে বক্তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেন। অন্যদিকে, অজানা ভবিষ্যতের কারণে, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সাথে প্রবর্তিত মানসিক বুদ্ধিমত্তা এবং প্রযুক্তিগত সংযোজনের মতো বিষয়গুলিও পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন বলে জানান৷ সংসদ সদস্যরা টিটিসির সংযোগ ব্যবস্থা, বিভিন্ন দুর্বল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়েও আলোচনা করেছেন, বিশেষ করে কিছু গোষ্ঠী যেমন- ঝাড়ুদার সম্প্রদায়, হরিজন জনগোষ্ঠী যারা সাধারণত কর্মসংস্থানের অন্যান্য ক্ষেত্র থেকে বাদ পড়ে যায়।
আনোয়ারুল আবেদীন খান এমপি, চেয়ারম্যান এবং ডেপুটি স্পিকার মোঃ ফজলে রাব্বী মিয়া এমপি, উপদেষ্টা হিসেবে সামাজিক ন্যায়বিচার সংসদীয় ককাসে কাজ করবেন। ইনস্টিটিউট অফ ইনফরম্যাটিক্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইআইডি) সামাজিক ন্যায়বিচার সংসদীয় ককাসের সচিবালয় হিসেবে থাকবে।
এই পলিসি কনক্লেভে যোগ দেওয়া অন্যান্য সংসদ সদস্যদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন- আহসান আদেলুর রহমান এমপি, গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার এমপি, শফিকুল ইসলাম শিমুল এমপি, শামীম হায়দার পাটোয়ারী এমপি, রানা মোহাম্মদ সোহেল এমপি, ছানোয়ার হোসেন এমপি, শামসুন নাহার এমপি, মো. ছলিম উদ্দীন তরফদার এমপি, মজিবুর রহমান চৌধুরী এমপি, তানভীর শাকিল জয় এমপি, আনোয়ার হোসেন হেলাল এমপি, মোয়াজ্জেম হোসেন রতন এমপি, আশেক উল্লাহ রফিক এমপি, এবং মাহজাবিন খালেদ সাবেক এমপি, সামাজিক ন্যায়বিচার সংসদীয় ককাসের সেক্রেটারি।