ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ২৩:২১, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ ঢাকাকে বলা হয় রিক্সার শহর। এ শহরে গণপরিহনের সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। সেইসঙ্গে ব্যক্তিগত গাড়ির ছড়াছড়ি। এত কিছু সত্তে¡ও ঐতিহ্য হয়ে আছে রিক্সা। ঢাকা যত প্রাচীন, রিক্সাও তত পুরনো। বাহনটির প্রতি তাই অনেকেরই দুর্বলতা আছে। রিক্সায় চড়ে চারপাশের দৃশ্যাবলী অবলোকন করতে করতে যাওয়া যায়। বেশ লাগে। পাশাপাশি আছে রিক্সা বিরোধিতাও। অযান্ত্রিক এই বাহনকে ঢাকার যানজটের অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা হয়। এ যুক্তিতে প্রধান প্রধান সড়ক থেকে রিক্সাকে আগেই সরিয়ে দেয়া হয়েছিল। এখন মূলত অলিগলিতে চলাচল করতে দেখা যায়। অভিন্ন কারণে বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল রিক্সার লাইসেন্স প্রদান। যতদূর তথ্য, ১৯৮৬ সালের পর রিক্সার লাইসেন্স দেয়া বন্ধ করে দেয় অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশন। তবে এতে যে রিক্সার সংখ্যা কমেনি তা তো বলাই বাহুল্য। বরং বেড়েছে। অসংখ্য অবৈধ রিক্সা নামানো হয়েছে রাস্তায়। বুয়েটের এক গবেষণা বলছে, রাজধানীতে বৈধ রিক্সা আছে মাত্র ৭৯ হাজার ৫৫৪টি। আর অবৈধ? শুনলে চোখ কপালে উঠবে, ১১ লাখ! অবৈধ রিক্সার ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে ৩০টির মতো সংগঠন। সংগঠনগুলো লাইসেন্সের কথা বলে রিক্সা মালিকদের কাছ থেকে নিয়মিত টাকা আদায় করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এবার মূল প্রসঙ্গে আসা যাক, যে কথা বলতে এত কথা বলা সেটি হচ্ছে, সম্প্রতি রিক্সার লাইসেন্স দেয়ার নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন। ইতোমধ্যে এ ইস্যুতে কাজ শুরু করে দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। জানা যাচ্ছে, দুই লাখ ১২ হাজার ৯৯৭টি আবেদনের প্রেক্ষিতে বুধবার পর্যন্ত এক লাখ ২০ হাজার রিক্সার লাইসেন্সও প্রদান করা হয়েছে। উত্তর সিটি কর্পোরেশনও রিক্সার লাইসেন্স প্রদানের পক্ষে। নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। তার আগে এ সংক্রান্ত নীতিমালা করতে চান মেয়র আতিকুল ইসলাম। এটি হয়ে গেলেই নতুন করে রিক্সার লাইসেন্স দেয়া শুরু হবে। হঠাৎ কেন এমন সিদ্ধান্ত? ঠিক কোন চিন্তা থেকে? জানতে কথা হয় মেয়র আতিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, রিক্সা ঢাকার ঐতিহ্য এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু রিক্সা যানজট বৃদ্ধিরও অন্যতম কারণ। রাস্তা সচল রাখতে গতি বাড়াতে এবং বিশৃঙ্খলা মুক্ত করতে রিক্সার লাইসেন্স দেয়া বন্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু আমরা এখন দেখছি লাইসেন্স বন্ধ থাকলেও রিক্সা নামা বন্ধ নেই। অলিতে গলিতে অবৈধ রিক্সা। অথচ সিটি কর্পোরেশন রাজস্ব পাচ্ছে না। তাই সব দিক বিবেচনায় নতুন লাইসেন্স প্রদানের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর ফলে রিক্সা খুব বাড়বে না। যেগুলো অবৈধ চলাচল করত সেগুলো বরং বৈধ হবে। একটা সিস্টেমের মধ্যে এগুলোকে আনা যাবে। পাঁচ বছরের জন্য লাইসেন্স প্রদান করা হবে। রিক্সা কোন সড়কে চলবে, আর কোথায় চালানো যাবে না সেসব শর্তও লাইসেন্সের সঙ্গে জুড়ে দেয়া হবে। প্রতিটি রিক্সাকে কিউআর কোর্ডের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। যারা যোগ্য তাদেরই লাইসেন্স দেয়া হবে জানিয়ে মেয়র বলেন, প্রভাব খাটিয়ে অন্য কেউ লাইসেন্স নিতে পারবে না। দুর্গোৎসবের প্রস্তুতি চলছে ॥ দুর্গোৎসবের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। না, আজ বা গতকাল থেকে নয়। কিছুদিন ধরেই প্রস্তুতি চলছে। আগামী ১০ অক্টোবর মহাপঞ্চমী। এদিন থেকে শুরু হবে উৎসব। চলবে দশমীর দিন পর্যন্ত। বর্তমানে শহরের সনাতন ধর্মাবলম্বীরা যে যার মতো করে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। দেশীয় বুটিক হাউসগুলো পূজা উপলক্ষে নতুন জামা কাপড় শোরুমে তুলেছে। জমে উঠেছে কেনা বেচা। পুরান ঢাকার অলিতে গলিতে উৎসবের আমেজ। সরব হয়ে উঠছে তাঁতীবাজার, শাঁখারী বাজার। এসব স্থানে দিন রাত ধরে চলছে প্রতিমা গড়ার কাজ। শুধু তো প্রতিমা নয়, প্রতিমা ও মণ্ডপ সাজানোর উপকরণও চাই! সবই পাওয়া যাচ্ছে শাঁখারী বাজারে। দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন এসব কিনতে আসছেন। দেখে মনে হয় উৎসবের বুঝি আর বাকি নেই! তবে মণ্ডপ তৈরির কাজ এখনও শুরু হয়নি। অচিরেই শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। রাজধানীর পূজ উদ্যাপন কমিটির প্রাথমিক তথ্য, এবার ২৩০টির মতো মণ্ডপ হতে পারে ঢাকায়। গত বছর করোনার কারণে উৎসবটির রাস কিছুটা টেনে ধরা হয়েছিল। এবার পরিস্থিতি অপেক্ষাকৃত ভাল। তাই উৎসব উদ্যাপনও ভালভাবে সম্ভব হবে বলে আশা করছেন সনাতনীরা।
×