ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ধানমণ্ডি থানার মামলায় রাসেল রিমান্ডে, স্ত্রী কারাগারে

প্রকাশিত: ২২:৫৭, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১

ধানমণ্ডি থানার মামলায় রাসেল রিমান্ডে, স্ত্রী কারাগারে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রথম দফায় রিমান্ডে কোন তথ্যই আদায় করতে না পারলেও দ্বিতীয় দফায় আবারও রিমান্ডে নেয়া হয়েছে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী (সিইও) মোহাম্মদ রাসেলকে। এবার ধানমণ্ডি থানায় দায়ের করা মামলায় একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। তবে একই মামলায় তার স্ত্রী ও প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ হাসিবুল হকের আদালত এ আদেশ দেন। এ দিন ধানমণ্ডি থানায় প্রতারণা করে অর্থ আত্মসাতের মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা এসআই নাজমুল হুদা আসামিদের আদালতে হাজির করেন। এরপর এই মামলায় তাদের গ্রেফতারসহ ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। অন্যদিকে, আসামিপক্ষের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত এ আদেশ দেন। মঙ্গলবার রাসেল এবং তার স্ত্রীকে গুলশান থানার মামলায় তিন দিনের রিমান্ড শেষে দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে ঢাকার চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। এরপর ধানমণ্ডি থানার মামলায় রিমান্ড শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। কামরুল ইসলাম নামে এক ব্যবসায়ী শনিবার রাতে এই মামলা দায়ের করেন। মামলায় ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল ও চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনসহ ১২ জনকে আসামি করা হয়। মামলার অপর আসামিরা হলেন- ইভ্যালির ভাইস প্রেসিডেন্ট আকাশ, ম্যানেজার জাহেদুল ইসলাম, সিনিয়র এ্যাকাউন্টস ম্যানেজার তানভীর আলম, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ (কমার্সিয়াল) জাওয়াদুল হক চৌধুরী, হেড অব এ্যাকাউন্ট সেলিম রেজা, এ্যাকাউন্টস ম্যানেজার জুবায়ের আল মাহমুদ, এ্যাকাউন্ট শাখার কর্মী সোহেল, আকিবুর রহমান তুর্য, সিইও’র পিএস রেজওয়ান ও বাইক ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তা সাকিব রহমান। এছাড়া মামলার এজাহারে আরও ১৫-২০ জন অজ্ঞাতনামা আসামির কথাও উল্লেখ করা হয়। মামলার এজাহারে কামরুল ইসলাম বলেছেন, তিনি মেট্রো কাভারেজ, স্মার্ট ফুড এ্যান্ড বেভারেজ, ফ্রিডম এক্সপোর্ট ইম্পোর্ট বিডি ও ফিউচার আইটি নামে প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি ইভ্যালির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে গ্রাহকদের মোট ৩৫ লাখ ৮৫ হাজার টাকার পণ্য সরবরাহ করেছেন। পণ্য সরবরাহের বিপরীতে ইভ্যালি তাদের একটি চেক দিলেও সেই এ্যাকাউন্টে কোন টাকা ছিল না। এ ঘটনায় চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি তারা ইভ্যালির বিরুদ্ধে ধানমণ্ডি থানায় একটি জিডিও দায়ের করেন। তবু ইভ্যালি তাদের কোন অর্থ পরিশোধ করেনি। এদিকে গুলশান থানার তিনদিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে কোন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আদায় করতে না পারায় হতাশা নেমে এসেছে গ্রাহকদের কাছে। তাদের ধারণা তিন দিনের রিমান্ডে যেখানে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ন মিলেনি সেখানে ধানমণ্ডি থানার জিজ্ঞাসাবাদে আর কি মিলতে পারে তাতে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। গুলশান থানা পুলিশের একটি সূত্র জানায়- রিমান্ডে যে সব তথ্য পাওয়া গেছে তা গ্রাহকদের পাওনা উদ্ধারে তেমন সহায়ক হবে না। যদি আত্মসাতকৃত অর্থের বর্তমান উৎসস্থল সম্পর্কে জানা যেত তাহলে হয়তো টাকা ফেরত পাওয়ার একটা সুযোগ থাকত। ধূর্ত রাসেল ও তার স্ত্রী শামীমা নাসরীন শুরু থেকেই দাবি করছে তারা কোন আত্মসাত করেননি। কারোর টাকাও মারেননি। ই-কর্মাসের সাধারণ নিয়ম কানুন মেনেই তারা ব্যবসা করতে গিয়ে কিছু ভুল সিদ্ধান্তের কাছে এমন বিপর্যয় ও লোকসানের মুখে পড়তে হয়েছে। সময় সুযোগ দেয়া হলে ব্যবসা চাঙ্গা করে এখনও টাকা ফেরত দেয়ার সুযোগ আছে। মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন ॥ প্রতারিত গ্রাহকরা যখন বিচার দাবি করছেন- তখন মঙ্গলবার রাসেল দম্পতির মুক্তিসহ সাত দফা দাবিতে ঢাকার চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সামনে মানববন্ধন করছেন আরেক দল। সকাল ১০টার দিকে বাংলাদেশ ই-কমার্স মার্চেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের ব্যানারে এ মানববন্ধন শুরু করেন তারা। বেলা ১১টার দিকে পুলিশ এসে তাদের সরিয়ে দেন। তাদের দাবিগুলো হলো - রাসেলকে নজরদারিতে রেখে ব্যবসা করার সুযোগ দিতে হবে। এসক্রো সিস্টেম চালু হওয়ার আগে অর্ডার করা পণ্য ডেলিভারি দিতে কমপক্ষে ছয় মাস সময় দিতে হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে ই-পেমেন্ট, পেমেন্ট গেটওয়ে, মার্চেন্ট এবং ভোক্তাদের প্রতিনিধির সমন্বয়ে কমিটি গঠন করতে হবে। করোনাকালে বিভিন্ন খাতের মতো ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলোকে প্রণোদনা দিতে হবে। ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলোকে ব্যাংক গ্যারান্টিসহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে লাইসেন্স দিতে হবে। ই-কমার্স বাংলাদেশের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় খাত, যেখানে হাজার হাজার উদ্যোক্তা সৃষ্টি হচ্ছে এবং লাখ লাখ কর্মসংস্থান হচ্ছে। তাই এই সেক্টরকে সরকারীভাবে সুরক্ষা দিতে হবে। মঙ্গলবার সকালে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার উপ-পরিদর্শক ওহিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের প্রথম দফা তিন দিনের রিমান্ড শেষ হওয়ায় তাকে আবার আদালতে হাজির করা হয়। এ দফায় আর রিমান্ডের আবেদন করা হয়নি। তবে ধানমণ্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইকরাম আলী মিয়া বলেন, আমাদের থানায় যে মামলাটি হয়েছে, সেটাও গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা এবং অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে। তদন্তের প্রয়োজনে আসামিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজনে রিমান্ডে আনা হয়েছে। উল্লেখ্য গত ১৬ সেপ্টেম্বর গুলশান থানায় এক গ্রাহকের মামলা দায়েরের পর বিকেলে মোহাম্মদপুরের বাসায় অভিযান চালিয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাসেল ও তার স্ত্রী শামীমা নাসরিনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। পরদিন গুলশান থানার মামলায় ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতিকুল ইসলামের আদালত আসামিদের প্রথম দফায় তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
×