ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

বিদ্যুত ঘাটতি মেটাতে কুইক রেন্টাল বিল পাস

প্রকাশিত: ২২:২০, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১

বিদ্যুত ঘাটতি মেটাতে কুইক রেন্টাল বিল পাস

সংসদ রিপোর্টার ॥ জরুরী ভিত্তিতে বিদ্যুত ঘাটতি মেটাতে প্রণীত ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র চালানোর বিশেষ আইনের মেয়াদ পাঁচ বছর বাড়িয়ে জাতীয় সংসদে ‘বিদ্যুত ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) (সংশোধন) বিল-২০২১’ পাস হয়েছে। বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিলটি পাসের প্রস্তাব করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। তবে বিলটি পাসের বিরোধিতা করেছেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও বিএনপির সংসদ সদস্যরা। এর আগে বিলের ওপর দেয়া জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে পাঠানো এবং সংশোধনীর প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি করেন স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। বিলটি পাসের প্রক্রিয়ার সময় বিরোধী দলের সদস্যরা বিরোধিতা করলে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জবাব দিতে গিয়ে বলেছেন, নির্ভরযোগ্য বিদ্যুত সরবরাহ নিশ্চিত করতেই এই বিলটি আনা হয়েছে। শুরুতে দুই বছরের জন্য এই আইন করা হলেও পরে কয়েক দফায় সময় বাড়ানো হয়। এবার পাঁচ বছর মেয়াদ বাড়ানোর অনুমোদন মিলল সংসদে। ২০১০ সালে প্রণীত আইনটির মেয়াদ সর্বশেষ তিন বছর বাড়িয়ে মেয়াদ ২০২১ সাল পর্যন্ত করা হয়। বিলটি পাসের জন্য তোলার পর এর বিরোধিতা করে বিএনপির হারুনুর রশীদ বলেন, আরও পাঁচ বছর কেন বাড়ানো হচ্ছে? আমরা শতভাগ বিদ্যুতের কথা বলছি। রূপপুর, মাতারবাড়িতে বড় প্রকল্প করছি। ঋণের বোঝা বাড়ছে। এভাবে চললে দেশ দেউলিয়া হয়ে যাবে। এই আইন করে আমরা অনিয়ম-দুর্নীতির বৈধতা দিচ্ছি। সর্বোচ্চ এই বছরের মধ্যে কাজ শেষ করেন। এছাড়া ঘোর আপত্তি থাকবে। বিশেষ বিধান এভাবে বছরের পর বছর চলতে পারে না। গণফোরামের মোকাব্বির খান বলেন, এই আইন একটি জঘন্য কালো আইন। এখানে ইনডেমনিটি দেয়া হয়েছে। তড়িঘড়ি করে করা হচ্ছে। জনগণের টাকা অন্যের হাতে তুলে দেয়ার জন্য এই আইন করা হয়েছে। জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু নিজের এলাকায় বিদ্যুতের লোডশেডিং নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এলাকায় বিদ্যুত পাই না। চৈত্র, বৈশাখ, ভাদ্র মাসে মানুষ ঘুমাতে পারে না। এলাকায় ৪-৫ ঘণ্টাও বিদ্যুত থাকে না। আমাদের বাঁচান, আইনের এক্সটেনশন দরকার নেই। বিদ্যুত দেন। জাতীয় পার্টির শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, এলাকায় বিদ্যুত আসে না যায় বোঝা যায় না। আমাদের জবাবদিহি করতে হচ্ছে। আপনি অল্প জনবল দিয়ে সেবা দিচ্ছেন। একটা লাইন দিয়ে ৬০-৭০ কিলোমিটার লাইন চালাচ্ছেন। আমরা শতভাগ বিদ্যুত চাই না। আগের অবস্থায় ফিরতে চাই। বিএনপির রুমিন ফারহানা বলেন, মন্ত্রী নিজেই স্বীকার করেছেন দেশে বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে। এই আইনে কিছু মানুষের দায়মুক্তি দেয়া হয়েছে। জনগণের টাকা কিছু মানুষের হাতে তুলে দেয়া হবে কিন্তু তা নিয়ে কথা বলা যাবে না। বড় বড় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো পরিকল্পিতভাবে অচল করে রাখা হচ্ছে। জবাব দিতে উঠে বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, বিলটি নতুন করে আনা হয়নি। সময় বাড়ানো হয়েছে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত যাতে দিতে পারি সেজন্য এই আইন। ছয় মাসের মধ্যে যাতে কাজ করতে করতে পারি সেজন্য এই আইন। শতভাগ বিদ্যুতায়ন করেছি। এখন নির্ভরযোগ্য বিদ্যুত সরবরাহ করতে চাই। সঞ্চালন লাইন করতে গেলে সময় লাগবে। এটা কুইক রেন্টালের জন্য না। দ্রুত সরবরাহের জন্য এই আইন। আমাদের দ্রুত সঞ্চালন করতে হবে। মাটির নিচে বিদ্যুতের লাইন নিয়ে যেতে হবে। আগামী তিন বছরের মধ্যে ঢাকা আন্ডারগ্রাউন্ডে যাবে। সিলেট যাবে, খুলনা যাবে। বিলটির উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে প্রতিমন্ত্রী বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালা-২০০৮ অনুযায়ী নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎস হতে দেশের মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের ১০ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করার লক্ষ্যে এখানে দ্রুত অধিক সংখ্যক প্রকল্প গ্রহণ করা প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, ২০৩০ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্য আয়ের দেশে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যে বিদ্যুত ও জ্বালানি খাতের চলমান অবকাঠামাগত উন্নয়ন ধারা অব্যাহত রাখতে বিলটি আনা হয়েছে।
×