স্টাফ রিপোর্টার ॥ সিনেমাপ্রেমীদের জন্য চমৎকার এক আয়োজন। করোনাকালে ঘরে বসেই দর্শকরা দেখার সুযোগ পেয়েছেন শতাধিক চলচ্চিত্র। সিনেমা দেখার এই সফরটি শুরু হয়েছিল ১৮ জুন। অনলাইনে অনুষ্ঠিত আট দিনের তৃতীয় বাংলাদেশ স্বল্পদৈর্ঘ্য ও প্রামাণ্য চলচ্চিত্র উৎসবটি শেষ হলো শুক্রবার। ৮১টি কাহিনীচিত্রের সঙ্গে প্রদর্শিত হলো ৩৮টি প্রামাণ্যচিত্র। শিল্পকলা একাডেমির ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে বিনা দর্শনীতে দর্শকরা অবলোকন করেছেন উৎসবের অন্তর্ভুক্ত নির্বাচিত ছবিসমূহ। আর শুধু ছবি দেখার মধ্যে আয়োজনটি সীমাবদ্ধ ছিল না। সঙ্গে ছিল চলচ্চিত্রবিষয়ক তিনটি মাস্টার ক্লাস। উৎসবটি উৎসর্গ করা হয় উপমহাদেশের প্রথম চলচ্চিত্রকার হীরালাল সেনকে।
শুক্রবার ভার্চুয়ালি এই উৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে উৎসবের স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি এবং প্রামাণ্য চলচ্চিত্র উভয় শাখায় শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র, শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্মাতা ও বিশেষ জুরি শাখায় মোট ছয়টি পুরস্কার প্রদান করা হয়। সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন জুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান বিশিষ্ট চলচ্চিত্র নির্মাতা সৈয়দ সালাহউদ্দীন জাকী এবং বাংলাদেশ প্রামাণ্যচিত্র পর্ষদের সভাপতি ফরিদুর পরহমান। স্বাগত বক্তব্য দেন একাডেমির নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগের পরিচালক এবং উৎসবের আহ্বায়ক আফসানা করিম। সভাপতিত্ব করেন একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী।
সমাপনী অনুষ্ঠানে উৎসবের স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি এবং প্রামাণ্য চলচ্চিত্র উভয় শাখায় শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র, শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্মাতা ও বিশেষ জুরি শাখায় মোট ছয়টি পুরস্কার প্রদান করা হয়। এছাড়া শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রহণ, শ্রেষ্ঠ সম্পাদনা, শ্রেষ্ঠ শব্দ পরিকল্পনা ও শ্রেষ্ঠ প্রযোজনা পরিকল্পনায় আরও চারটি পুরস্কার দেয়া হয়। স্বল্পদৈর্ঘ্য কাহিনীচিত্রে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্বাচিত হয়েছে সানতে বিনতে আফজালের ছবি ‘আশ্রয়’। এই বিভাগে ‘শব্দের ভেতর ঘর’ ছবির জন্য সেরা নির্মাতার পুরস্কার পেয়েছেন ফুয়াদুজ্জামান ফুয়াদ। বিশেষ জুরি শাখায় ‘দ্য ক্রিমেশন’ ছবির জন্য মেহেদী হাসান শামীম এবং ‘রিভোল্ট’ ছবির জন্য পুরস্কার পেয়েছেন সংগীতা ঘোষ। প্রামাণ্যচিত্র শাখায় শ্রেষ্ঠ ছবি হয়েছে ‘হাউসের ধুয়া’। এই শাখায় ‘হাউসের ধুয়া’ ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ নির্মাতার পুরস্কার পেয়েছেন রাসেল রানা। বিশেষ জুরি পুরস্কার পেয়েছেন ‘আনতারা’ ছবির নির্মাতা ফরিদ আহমদ। এছাড়া শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রহণ, শ্রেষ্ঠ সম্পাদনা ও শ্রেষ্ঠ শব্দ পরিকল্পনার জন্য পুরস্কার পেয়েছেন ফুয়াদুজ্জামামান ফুয়াদ ও রাসেল রাসা। শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের জন্য থাকছে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকার পুরস্কার। শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্মাতা পাবেন ১ লাখ টাকা। বিশেষ জুরি পুরস্কার ৫০ হাজার। শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রহণ ২৫ হাজার, শ্রেষ্ঠ সম্পাদনা ২৫ হাজার, শ্রেষ্ঠ শব্দ পরিকল্পনা ২৫ হাজার এবং শ্রেষ্ঠ প্রযোজনা পরিকল্পনার জন্য ২৫ হাজার টাকার পুরস্কার দেয়া হবে। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পুরস্কারপ্রাপ্ত হাতে পুরস্কার তুলে দেয়া হবে।
এ উৎসবে চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর বাইরে উৎসব উপলক্ষে তিনটি মাস্টার ক্লাসের আয়োজন করা হয়। ২১ জুন সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত ‘মিজ-অঁ-সিন’ বিষয়ক ক্লাসের প্রশিক্ষক ছিলেন অমিতাভ রেজা চৌধুরী। ২২ জুন ‘পঞ্চাশ বছরে বাংলাদেশের প্রামাণ্যচিত্র’ বিষয়ে ক্লাস নেন শবনব ফেরদৌসি। ২৩ জুন সন্ধ্যায় ‘সিনেমাটোগ্রাফি’ বিষয়ের প্রশিক্ষক ছিলেন এল অপু রোজারিও।
প্রসঙ্গত, এ উৎসবে সারাদেশের চলচ্চিত্র নির্মাতাদের কাছ থেকে প্রায় ৪০০টি চলচ্চিত্র জমা পড়ে। সেখান থেকে পাঁচ সদস্যের কমিটি উৎসবের জন্য ১১৯টি চলচ্চিত্র নির্বাচন করেন। এরমধ্যে ৮১টি কাহিনী চলচ্চিত্র এবং ৩৮টি প্রামাণ্য চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্র সিলেকশন কমিটির সদস্যরা ছিলেন চলচ্চিত্র গবেষক অনুপম হায়াৎ, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও প্রামাণ্যচিত্র পর্ষদের উপদেষ্টা সাজ্জাদ জহির, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও শর্ট ফিল্ম ফোরামের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল হাসান, চলচ্চিত্র সমালোচক ও চিত্রনাট্যকার সাদিয়া খালিদ রীতি এবং একাডেমির নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগের সহকারী পরিচালক চাকলাদার মোস্তাফা আল মাস্উদ।